সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বপ্ন ছিল স্বাবলম্বী হব- ইতি

এসএসসি পরীক্ষার পর বিয়ে হয়ে যায় সানজিদা ইয়াসমিন ইতির। সংসার সামলানোর পাশাপাশি হস্তশিল্পের কাজ শিখছেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল চাকরি করার। ২০০৪ সালের ঘটনা। সে ঢাকায় চলে যায় বিউটি পার্লার কাজ শিখার জন্য তিনি কাজও শিখে ফেলেন।
একদিন ঢাকার দোকানে চামড়ার ব্যাগ কিনতে গেছেন সানজিদা ইয়াসমিন (ইতি।) হঠাৎ তাঁর মনে হলো তিনিও এ ধরনের ব্যাগ তৈরি করতে পারেন। হাতে টাকা ছিল না। নিজের সব সোনার গয়না বিক্রি করে নগদ ২৫ টাকা ছিল।ব্যাগের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের চামড়াজাত পণ্য তৈরি হয় তাঁর বাসায়। অনেক টাকা দরকার হয় চামরার বেগ বানাতে সেটা বাদ দিল।
সানজিদা ইয়াসমিন ইতি শুরু করল তার কলেজ পাড়ার বাসায় পাটের হস্তশিল্পের কাজ। শুরু হল তার সামনের পথ চলা।  কিন্তু তার মধ্যে ইচ্ছে ছিল নারীদের সাহায্য করা।
দরিদ্র মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিবেদিত রয়েছেন সানজিদা ইয়াসমিন ইতির। এর পাশাপাশি নিজের ডিজাইনে তৈরী করা হস্তশিল্পগুলো বাজারজাত করে তিনি নিজেও আত্ননির্ভর হয়ে উঠেছেন। এর মাধ্যমে তিনি এক অনুকরণীয় নারীতে পরিণত হয়েছেন। এবং তিনি নিজেই এলাকার বিচারও করেন তাকে এলাকার অনেক মানুষ তাকে সম্মান করেন।
ঠাকুরগাঁও কলেজ পাড়া বাসায় বসসাস করেন গৃহবধূ সানজিদা ইয়াসমিন ইতি । স্বামী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও একটি ইট ভাটায় চাকরি করেন। স্বামী-স্ত্রী ও এক ছেলে এক মে নিয়ে তাদের সংসার। ছেলে মেরা লেখাপড়া শিখছে। বড় মেয়ে লেখা পড়ার পাসাপাসি গ্রাফিক্সে লেখাপড়া করছে। এক ছেলে মাকে হস্তশিল্পে নকশা আঁকতে সহযোগিতা করে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের অত্যন্ত পরিশ্রমী এই সানজিদা ইয়াসমিন ইতি।  সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে হস্তশিল্পের কাজ করে পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আনতে স্বাবলম্বী হওয়ার কাজে নিয়োজিত হন। সেইসাথে তিনি দরিদ্র মেয়েদের এ কাজে প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মনির্ভর করার কাজেও মনোনিবেশ করেন।
তিনি ঠাকিরগাঁও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় এবং ঠাকুরগাঁও মহিলা সংস্থায় ব্লক, বুটিক, এবং নানা উন্নতমানের হস্ত শিল্প বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেননি সানজিদা ইয়াসমিন ইতি। তিনি দেখে দেখে শিখে ফেলে এখন নিজেই মেয়েদের এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। এছাড়া প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মেয়েদের নির্ধারিত কিছু মজুরী দিয়ে তার নকশা করা অত্যন্ত সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন এবং আকর্ষণীয় সব হস্তশিল্প তৈরী করে তা বাজারজাত করেন।
বর্তমানে তার উৎপাদিত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে শাড়ী, মেয়েদের জামা, ব্লাউজ, পাঞ্জাবী ও বাচ্চাদের জামা কাপড়ে নকশা,  এবং ব্লক¬কের কাজ করা সামগ্রী। এছাড়াও সুদৃশ্য কারুকাজময় নকশা করা বিছানার চাদর, বালিশের কভার, ওয়ালম্যাট, জায়নামাজ, মশারীর কভারও করতে পারেন। অর্থাভাবে এখনও কোনো শো-রুম করা সম্ভব না হলেও সানজিদা ইয়াসমিন ইতি কলেজ পাড়া বাড়ী থেকেই ক্রেতারা তা সংগ্রহ করে থাকেন।
তদুপরি ক্রেতার পছন্দের চাহিদা মাফিক পণ্যও তিনি সরবরাহ করে থাকেন। ইতোমধ্যে তার জানাশোনা লোকের মাধ্যমে তিনি তার উৎপাদিত পণ্য ঠাকুরগাঁও শহরের  ক্রেতাদের কাছেও বিক্রয় করতে সক্ষম হয়েছেন।
জেলা শহর ঠাকুরগাঁও এদের মধ্যে অনেকেই কলেজ পড়–য়া ছাত্রী, যারা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সানজিদা ইয়াসমিন ইতির কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে বাড়িতে কাজটি শেষ করে প্রাপ্য মজুরী নিয়ে তাদের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করছে। এইসব হস্তশিল্প অভিজ্ঞতালব্ধ মেয়েরা সবাই মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী পরিবারের।
সানজিদা ইয়াসমিন ইতির লক্ষ্য আরো এমন মেয়েদের প্রশিক্ষিত করে আত্ননির্ভর করে গড়ে তোলা। এজন্য একটা শোরুম ও হস্ত শিল্পের প্রসার ঘটাতে প্রয়োজনীয় কক্ষসহ বাড়ী প্রয়োজন। তার একান্ত প্রত্যাশা নারীদের এই হস্ত শিল্পের উন্নয়ন ঘটাতে কোন ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান এবং সরকারি সহায়তা প্রাপ্তি। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন কিছু আর্থিক সাহায্য পেলে একটি শো রুম দিব সেই সাথে অনেক পরিবারের সংসার চলবে।
বার্তাকণ্ঠ/এন
জনপ্রিয়

পাকিস্তানের ১৬ ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করলো ভারত

স্বপ্ন ছিল স্বাবলম্বী হব- ইতি

প্রকাশের সময় : ০৬:৪৩:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২২
এসএসসি পরীক্ষার পর বিয়ে হয়ে যায় সানজিদা ইয়াসমিন ইতির। সংসার সামলানোর পাশাপাশি হস্তশিল্পের কাজ শিখছেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল চাকরি করার। ২০০৪ সালের ঘটনা। সে ঢাকায় চলে যায় বিউটি পার্লার কাজ শিখার জন্য তিনি কাজও শিখে ফেলেন।
একদিন ঢাকার দোকানে চামড়ার ব্যাগ কিনতে গেছেন সানজিদা ইয়াসমিন (ইতি।) হঠাৎ তাঁর মনে হলো তিনিও এ ধরনের ব্যাগ তৈরি করতে পারেন। হাতে টাকা ছিল না। নিজের সব সোনার গয়না বিক্রি করে নগদ ২৫ টাকা ছিল।ব্যাগের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের চামড়াজাত পণ্য তৈরি হয় তাঁর বাসায়। অনেক টাকা দরকার হয় চামরার বেগ বানাতে সেটা বাদ দিল।
সানজিদা ইয়াসমিন ইতি শুরু করল তার কলেজ পাড়ার বাসায় পাটের হস্তশিল্পের কাজ। শুরু হল তার সামনের পথ চলা।  কিন্তু তার মধ্যে ইচ্ছে ছিল নারীদের সাহায্য করা।
দরিদ্র মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিবেদিত রয়েছেন সানজিদা ইয়াসমিন ইতির। এর পাশাপাশি নিজের ডিজাইনে তৈরী করা হস্তশিল্পগুলো বাজারজাত করে তিনি নিজেও আত্ননির্ভর হয়ে উঠেছেন। এর মাধ্যমে তিনি এক অনুকরণীয় নারীতে পরিণত হয়েছেন। এবং তিনি নিজেই এলাকার বিচারও করেন তাকে এলাকার অনেক মানুষ তাকে সম্মান করেন।
ঠাকুরগাঁও কলেজ পাড়া বাসায় বসসাস করেন গৃহবধূ সানজিদা ইয়াসমিন ইতি । স্বামী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও একটি ইট ভাটায় চাকরি করেন। স্বামী-স্ত্রী ও এক ছেলে এক মে নিয়ে তাদের সংসার। ছেলে মেরা লেখাপড়া শিখছে। বড় মেয়ে লেখা পড়ার পাসাপাসি গ্রাফিক্সে লেখাপড়া করছে। এক ছেলে মাকে হস্তশিল্পে নকশা আঁকতে সহযোগিতা করে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের অত্যন্ত পরিশ্রমী এই সানজিদা ইয়াসমিন ইতি।  সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে হস্তশিল্পের কাজ করে পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আনতে স্বাবলম্বী হওয়ার কাজে নিয়োজিত হন। সেইসাথে তিনি দরিদ্র মেয়েদের এ কাজে প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মনির্ভর করার কাজেও মনোনিবেশ করেন।
তিনি ঠাকিরগাঁও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় এবং ঠাকুরগাঁও মহিলা সংস্থায় ব্লক, বুটিক, এবং নানা উন্নতমানের হস্ত শিল্প বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেননি সানজিদা ইয়াসমিন ইতি। তিনি দেখে দেখে শিখে ফেলে এখন নিজেই মেয়েদের এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। এছাড়া প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মেয়েদের নির্ধারিত কিছু মজুরী দিয়ে তার নকশা করা অত্যন্ত সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন এবং আকর্ষণীয় সব হস্তশিল্প তৈরী করে তা বাজারজাত করেন।
বর্তমানে তার উৎপাদিত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে শাড়ী, মেয়েদের জামা, ব্লাউজ, পাঞ্জাবী ও বাচ্চাদের জামা কাপড়ে নকশা,  এবং ব্লক¬কের কাজ করা সামগ্রী। এছাড়াও সুদৃশ্য কারুকাজময় নকশা করা বিছানার চাদর, বালিশের কভার, ওয়ালম্যাট, জায়নামাজ, মশারীর কভারও করতে পারেন। অর্থাভাবে এখনও কোনো শো-রুম করা সম্ভব না হলেও সানজিদা ইয়াসমিন ইতি কলেজ পাড়া বাড়ী থেকেই ক্রেতারা তা সংগ্রহ করে থাকেন।
তদুপরি ক্রেতার পছন্দের চাহিদা মাফিক পণ্যও তিনি সরবরাহ করে থাকেন। ইতোমধ্যে তার জানাশোনা লোকের মাধ্যমে তিনি তার উৎপাদিত পণ্য ঠাকুরগাঁও শহরের  ক্রেতাদের কাছেও বিক্রয় করতে সক্ষম হয়েছেন।
জেলা শহর ঠাকুরগাঁও এদের মধ্যে অনেকেই কলেজ পড়–য়া ছাত্রী, যারা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সানজিদা ইয়াসমিন ইতির কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে বাড়িতে কাজটি শেষ করে প্রাপ্য মজুরী নিয়ে তাদের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করছে। এইসব হস্তশিল্প অভিজ্ঞতালব্ধ মেয়েরা সবাই মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী পরিবারের।
সানজিদা ইয়াসমিন ইতির লক্ষ্য আরো এমন মেয়েদের প্রশিক্ষিত করে আত্ননির্ভর করে গড়ে তোলা। এজন্য একটা শোরুম ও হস্ত শিল্পের প্রসার ঘটাতে প্রয়োজনীয় কক্ষসহ বাড়ী প্রয়োজন। তার একান্ত প্রত্যাশা নারীদের এই হস্ত শিল্পের উন্নয়ন ঘটাতে কোন ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান এবং সরকারি সহায়তা প্রাপ্তি। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন কিছু আর্থিক সাহায্য পেলে একটি শো রুম দিব সেই সাথে অনেক পরিবারের সংসার চলবে।
বার্তাকণ্ঠ/এন