শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পোস্ট অফিস নয়, যেন ব্যক্তিগত সম্পত্তি!

তিন শাসনামলের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই পোস্ট অফিসটি। স্থানীয়ভাবে পরিচিত বিশই সাওরাইল পোস্ট অফিস নামে। রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের  ১ নাম্বার ওয়ার্ড বিশই সাওরাইল গ্রামে এই পোস্ট অফিস। ব্রিটিশ আমল পার করে পোস্ট অফিসটি সাক্ষী হয়েছে পাকিস্তান আমলের। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে আসে পোস্ট অফিসটি।
অথচ, পোস্ট মাস্টার এবং কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে, এই পোস্ট অফিসটি এখন কার্যহীন অবস্থায়। যেন, পরিনত হয়েছে পোস্ট মাস্টার তুষার কুমার দাসের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে! কালের সাক্ষী হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, দেখলে মনে হবে কোন আস্তাকুঁড়। তবে, কাগজে কলমে এর সব কার্যক্রমই চলছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেল, পোস্ট অফিসটির যাবতীয় কার্যক্রম এখন পোস্ট মাস্টার তুষার কুমার দাসের বাড়িতেই চলছে। এমন কি পোস্ট অফিসের নামের ফলকও তার বাড়ির সামনেই লাগানো! আর জরাজীর্ণ অবস্থায় পরিত্যক্ত পড়ে আছে, চার দেয়ালের ইতিহাসের সাক্ষী  বিশই সাওরাইল পোস্ট অফিস।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, আশপাশের ১৪টির বেশি গ্রামের মানুষের ডাক সম্পর্কিত যাবতীয় কার্যক্রম চলে এই পোস্ট অফিসের মাধ্যমে। অথচ, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এখন আর মেলে না সেবা। যেটুকু মেলে, তাও অনেকটাই অনিয়মিত।
স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমান পোস্ট মাস্টার তুষার কুমার দাসের হাত ধরেই পোস্ট অফিসের পিছিয়ে যাওয়া শুরু। এমন কি নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম এখন নিজের বাড়িতেই  নিয়ে গিয়েছেন তিনি।  পোস্ট অফিসটির পুরো জনবলই তার পরিবারের! পিয়ন পদে রয়েছেন তার ভাতিজা অনিক কুমার দাস আর রানার হিসেবে কাজ করছেন আপন ভাই সমীর কুমার দাস।
বিশই সাওরাইল গ্রামের বাসিন্দা মিন্টু কুমার দাস জানান, “আমার পিতা নিহার রঞ্জন দাস ছিলেন এই পোস্ট অফিসের পিয়ন। সম্প্রতি বাবা মারা যান। তার পুত্র হিসেবে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকায় আমি পদটির জন্য আবেদন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পোস্ট মাস্টার এই পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই গোপন রাখেন। তার ভাতিজা অনিককে একমাত্র ক্যান্ডিডেট হিসেবে নিয়োগ দিতে, নিজের ভাই এবং অপর এক ব্যক্তিকে দিয়ে পিয়ন পোস্টে নিয়োগের আবেদন করেন। এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী, শুধু পরীক্ষায় অংশ নেয় অনিক।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সরকারের পোস্টঅফিস আধুনিকায়নের সব সুবিধায় পেয়েছে এই পোস্ট অফিসটি।  অথচ, ল্যাপটপ,  প্রিন্টার, ফটোকপি ম্যাশিনসহ সব উপকরণই ব্যবহার হচ্ছে পারিবারিক কাজে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা ইন্দাদুল জানালেন, পোস্ট অফিসের জন্য বরাদ্দকৃত ফটোকপি মেশিনে টাকার বিনিময়ে ফটোকপি করানো হয়। এমন কি ল্যাপটপে গান,  সিনেমা ডাউনলোড করে টাকার বিনিময়ে মোবাইলে ঢুকাচ্ছেন পোস্ট মাস্টার ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এতোদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখলেও সবশেষ পোস্ট অফিসের পুরো ভবনটিই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছে পোস্ট মাস্টারের পরিবারের সদস্যরা।  এখন আর বোঝারই উপায় নেই, ইতিহাসের সাক্ষী একটা পোস্টঅফিস সেটা।
এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় পোস্ট মাস্টার তুষার কুমার দাসের সাথে। তিনি সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, পোস্ট অফিস কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান না, পোস্ট অফিস নিজের বাড়িতে স্থাপনের বিষয়ে বলেন, জেলা পোস্ট অফিস কর্মকর্তাদের নির্দেশে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে তবে কর্মকর্তাদের নির্দেশের কোন লিখিত প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি, পোস্টঅফিস আধুনিকায়নের সরঞ্জামের বিষয়ে বলেন তিনটি ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে, স্ক্যানার মেশিনটি কর্মকর্তাদের নির্দেশে পাংশা পোস্ট অফিসের দেওয়া হয়েছে, ফটোকপি মেশিন সহ অন্যান্য মেশিনপত্র ও নষ্ট হয়ে গেছে, তার আপন ভাতিজাকে পিয়ন পদে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি জানান আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা জেলা পোস্ট অফিস কর্মকর্তারা তাকে নিয়োগ দিয়েছে তবে কোন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেটা তিনি বলতে পারেনি।
রাজবাড়ী পোস্ট অফিস সাব ডিভিশনের কর্মকর্তা মোঃ আজিজুর রহিম বলেন, ওই স্থানে আমাদের নিজস্ব কোন সম্পত্তি নেই তবে আমি যোগদানের আগে থেকেই কর্মরত পোস্টমাস্টারের বাড়িতে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চলছে। পিয়ন নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন মাঝে আমি বদলি হয়ে গিয়েছিলাম তৎকালীন দায়িত্বগত কর্মকর্তা বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন কোন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়েছে।

পোস্ট অফিস নয়, যেন ব্যক্তিগত সম্পত্তি!

প্রকাশের সময় : ১০:১৮:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০২২
তিন শাসনামলের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই পোস্ট অফিসটি। স্থানীয়ভাবে পরিচিত বিশই সাওরাইল পোস্ট অফিস নামে। রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের  ১ নাম্বার ওয়ার্ড বিশই সাওরাইল গ্রামে এই পোস্ট অফিস। ব্রিটিশ আমল পার করে পোস্ট অফিসটি সাক্ষী হয়েছে পাকিস্তান আমলের। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে আসে পোস্ট অফিসটি।
অথচ, পোস্ট মাস্টার এবং কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে, এই পোস্ট অফিসটি এখন কার্যহীন অবস্থায়। যেন, পরিনত হয়েছে পোস্ট মাস্টার তুষার কুমার দাসের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে! কালের সাক্ষী হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, দেখলে মনে হবে কোন আস্তাকুঁড়। তবে, কাগজে কলমে এর সব কার্যক্রমই চলছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেল, পোস্ট অফিসটির যাবতীয় কার্যক্রম এখন পোস্ট মাস্টার তুষার কুমার দাসের বাড়িতেই চলছে। এমন কি পোস্ট অফিসের নামের ফলকও তার বাড়ির সামনেই লাগানো! আর জরাজীর্ণ অবস্থায় পরিত্যক্ত পড়ে আছে, চার দেয়ালের ইতিহাসের সাক্ষী  বিশই সাওরাইল পোস্ট অফিস।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, আশপাশের ১৪টির বেশি গ্রামের মানুষের ডাক সম্পর্কিত যাবতীয় কার্যক্রম চলে এই পোস্ট অফিসের মাধ্যমে। অথচ, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এখন আর মেলে না সেবা। যেটুকু মেলে, তাও অনেকটাই অনিয়মিত।
স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমান পোস্ট মাস্টার তুষার কুমার দাসের হাত ধরেই পোস্ট অফিসের পিছিয়ে যাওয়া শুরু। এমন কি নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম এখন নিজের বাড়িতেই  নিয়ে গিয়েছেন তিনি।  পোস্ট অফিসটির পুরো জনবলই তার পরিবারের! পিয়ন পদে রয়েছেন তার ভাতিজা অনিক কুমার দাস আর রানার হিসেবে কাজ করছেন আপন ভাই সমীর কুমার দাস।
বিশই সাওরাইল গ্রামের বাসিন্দা মিন্টু কুমার দাস জানান, “আমার পিতা নিহার রঞ্জন দাস ছিলেন এই পোস্ট অফিসের পিয়ন। সম্প্রতি বাবা মারা যান। তার পুত্র হিসেবে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকায় আমি পদটির জন্য আবেদন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পোস্ট মাস্টার এই পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই গোপন রাখেন। তার ভাতিজা অনিককে একমাত্র ক্যান্ডিডেট হিসেবে নিয়োগ দিতে, নিজের ভাই এবং অপর এক ব্যক্তিকে দিয়ে পিয়ন পোস্টে নিয়োগের আবেদন করেন। এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী, শুধু পরীক্ষায় অংশ নেয় অনিক।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সরকারের পোস্টঅফিস আধুনিকায়নের সব সুবিধায় পেয়েছে এই পোস্ট অফিসটি।  অথচ, ল্যাপটপ,  প্রিন্টার, ফটোকপি ম্যাশিনসহ সব উপকরণই ব্যবহার হচ্ছে পারিবারিক কাজে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা ইন্দাদুল জানালেন, পোস্ট অফিসের জন্য বরাদ্দকৃত ফটোকপি মেশিনে টাকার বিনিময়ে ফটোকপি করানো হয়। এমন কি ল্যাপটপে গান,  সিনেমা ডাউনলোড করে টাকার বিনিময়ে মোবাইলে ঢুকাচ্ছেন পোস্ট মাস্টার ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এতোদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখলেও সবশেষ পোস্ট অফিসের পুরো ভবনটিই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছে পোস্ট মাস্টারের পরিবারের সদস্যরা।  এখন আর বোঝারই উপায় নেই, ইতিহাসের সাক্ষী একটা পোস্টঅফিস সেটা।
এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় পোস্ট মাস্টার তুষার কুমার দাসের সাথে। তিনি সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, পোস্ট অফিস কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান না, পোস্ট অফিস নিজের বাড়িতে স্থাপনের বিষয়ে বলেন, জেলা পোস্ট অফিস কর্মকর্তাদের নির্দেশে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে তবে কর্মকর্তাদের নির্দেশের কোন লিখিত প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি, পোস্টঅফিস আধুনিকায়নের সরঞ্জামের বিষয়ে বলেন তিনটি ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে, স্ক্যানার মেশিনটি কর্মকর্তাদের নির্দেশে পাংশা পোস্ট অফিসের দেওয়া হয়েছে, ফটোকপি মেশিন সহ অন্যান্য মেশিনপত্র ও নষ্ট হয়ে গেছে, তার আপন ভাতিজাকে পিয়ন পদে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি জানান আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা জেলা পোস্ট অফিস কর্মকর্তারা তাকে নিয়োগ দিয়েছে তবে কোন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেটা তিনি বলতে পারেনি।
রাজবাড়ী পোস্ট অফিস সাব ডিভিশনের কর্মকর্তা মোঃ আজিজুর রহিম বলেন, ওই স্থানে আমাদের নিজস্ব কোন সম্পত্তি নেই তবে আমি যোগদানের আগে থেকেই কর্মরত পোস্টমাস্টারের বাড়িতে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চলছে। পিয়ন নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন মাঝে আমি বদলি হয়ে গিয়েছিলাম তৎকালীন দায়িত্বগত কর্মকর্তা বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন কোন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়েছে।