শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী বিভাগজুড়ে জনদুর্ভোগ, পরিবহন ধর্মঘটে

রাজশাহী বিভাগজুড়ে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) রাজশাহী থেকে কোনো রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। বাইরের কোনো বাসও রাজশাহীতে প্রবেশ করেনি। ঢাকাগামী কোচগুলোও সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, ধর্মঘটে বাস বন্ধ থাকায় আজ সকাল থেকে সীমাহানী দুর্ভোগের পড়েছেন যাত্রীরা। অটোরিকশা বা ছোট বাহনে মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন। এজন্য তাদের বাড়তি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে। এছাড়া চাপ বেড়েছে ট্রেনে। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত খোলা থাকায় মানুষজন যথাসময়ে গন্তব্যে যেতে পারেননি।

সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে মহানগরের শিরোইল, ভদ্রা ও রেলগেট বাস টার্মিনালে আসেন যাত্রীরা। কিন্তু বাস না পেয়ে কেউ বিকল্প যানবাহন, কেউবা বাড়ি ফিরে যান। অনেক যাত্রীকে রাজশাহী রেলস্টেশনে ভিড় করতে দেখা যায়।

বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন, আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে বিভাগীয় গণসমাবেশে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি ঠেকাতেই সরকারের মদদে তাদের অনুসারী পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিভাগজুড়ে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকেই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রাজশাহীর আন্তঃজেলা রুটের যাত্রীরাও। সিএনজি, হিউম্যান হলার ও মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বিকল্প যানবাহনে দিগুণ ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা জরুরি প্রয়োজনে নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন।

আগামীকাল শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সরকারি চাকরির পরীক্ষা আছে। তাই বৃহস্পতিবার সকালেই রাজশাহী থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েছেন আব্দুল মমিন। তিনি বলেন, চারদিন আগে থেকে চেষ্টা করেও ট্রেনের কোনো টিকিট পাইনি। গত রাত থেকে আবার বাস বন্ধ। এখন বিকল্প উপায়ও দেখছি না।

পরিবার নিয়ে রাস্তায় গাড়ির খোঁজ করছিলেন নওগাঁ থেকে আসা শিশির আলী। তিনি বলেন, নওগাঁ থেকে রাজশাহী আসতে সময় লেগেছে পাঁচ ঘণ্টা। খরচ হয়েছে ৫০০ টাকা। যেখানে স্বাভাবিক দিনে লাগে ২০০ টাকা। এখন ঢাকা যেতে কত টাকা লাগবে বুঝছি না।

তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ। চাকরিতে যোগ দিতেই হবে। কাল শুক্রবার আছ, এখান কতদূর যেতে পারি দেখি।

পরিবহন ধর্মঘটের ফলে চাপ বেড়েছে ট্রেনে। তাই বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকিট ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। টিকিট না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়েই রওনা দিচ্ছেন। এছাড়া রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে যেসব ট্রেন যাচ্ছে ও আসছে প্রত্যেকটিতে অতিরিক্ত যাত্রী চাপ লক্ষ্য করা গেছে।

রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মাতিউল হক টিটু বলেন, আমাদের অনেক দিনের দাবি ছিল এটি। আমরা নির্ধারিত সময় বেধে দিয়েছিলাম। তবে আমাদের কোনো আশ্বাস না দেওয়ায় আমার আজ সকাল থেকে স্বেচ্ছায় কর্মবিরতিতে গেছি।

মানুষের ভোগান্তি ও বিএনপির সমাবেশের বিষয়ে চানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো মানুষ বহনই করছি না, তাই ভোগান্তি আমাদের দিক থেকে নেই। বিএনপির সঙ্গে এই পরিবহন ধর্মঘটের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি আমাদের দাবি আদায়ের স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি।

টিটু আরও বলেন, আমাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। বুধবারের মধ্যে সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই ধর্মঘট চলবে।

পরিবহন মালিক সমিতির ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে আঞ্চলিক মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধ, জ্বালানি তেল ও যন্ত্রাংশের মূল্য হ্রাস, কোভিডকালীন সময়ের ট্যাক্স মওকুফ, সব ধরনের সরকারি ফি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ, চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, পুলিশি হয়রানি বন্ধ, উপজেলা পর্যায়ে বিআরটিসি চলাচল বন্ধ, মহাসড়কে হাট-বাজার পরিচালনা বন্ধ এবং যাত্রী ওঠানামার পার্কিং ও প্রত্যেক জেলায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ।

রাজশাহী বিভাগজুড়ে জনদুর্ভোগ, পরিবহন ধর্মঘটে

প্রকাশের সময় : ০৪:৫৬:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২২

রাজশাহী বিভাগজুড়ে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) রাজশাহী থেকে কোনো রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। বাইরের কোনো বাসও রাজশাহীতে প্রবেশ করেনি। ঢাকাগামী কোচগুলোও সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, ধর্মঘটে বাস বন্ধ থাকায় আজ সকাল থেকে সীমাহানী দুর্ভোগের পড়েছেন যাত্রীরা। অটোরিকশা বা ছোট বাহনে মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন। এজন্য তাদের বাড়তি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে। এছাড়া চাপ বেড়েছে ট্রেনে। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত খোলা থাকায় মানুষজন যথাসময়ে গন্তব্যে যেতে পারেননি।

সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে মহানগরের শিরোইল, ভদ্রা ও রেলগেট বাস টার্মিনালে আসেন যাত্রীরা। কিন্তু বাস না পেয়ে কেউ বিকল্প যানবাহন, কেউবা বাড়ি ফিরে যান। অনেক যাত্রীকে রাজশাহী রেলস্টেশনে ভিড় করতে দেখা যায়।

বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন, আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে বিভাগীয় গণসমাবেশে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি ঠেকাতেই সরকারের মদদে তাদের অনুসারী পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিভাগজুড়ে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকেই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রাজশাহীর আন্তঃজেলা রুটের যাত্রীরাও। সিএনজি, হিউম্যান হলার ও মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বিকল্প যানবাহনে দিগুণ ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা জরুরি প্রয়োজনে নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন।

আগামীকাল শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সরকারি চাকরির পরীক্ষা আছে। তাই বৃহস্পতিবার সকালেই রাজশাহী থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েছেন আব্দুল মমিন। তিনি বলেন, চারদিন আগে থেকে চেষ্টা করেও ট্রেনের কোনো টিকিট পাইনি। গত রাত থেকে আবার বাস বন্ধ। এখন বিকল্প উপায়ও দেখছি না।

পরিবার নিয়ে রাস্তায় গাড়ির খোঁজ করছিলেন নওগাঁ থেকে আসা শিশির আলী। তিনি বলেন, নওগাঁ থেকে রাজশাহী আসতে সময় লেগেছে পাঁচ ঘণ্টা। খরচ হয়েছে ৫০০ টাকা। যেখানে স্বাভাবিক দিনে লাগে ২০০ টাকা। এখন ঢাকা যেতে কত টাকা লাগবে বুঝছি না।

তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ। চাকরিতে যোগ দিতেই হবে। কাল শুক্রবার আছ, এখান কতদূর যেতে পারি দেখি।

পরিবহন ধর্মঘটের ফলে চাপ বেড়েছে ট্রেনে। তাই বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকিট ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। টিকিট না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়েই রওনা দিচ্ছেন। এছাড়া রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে যেসব ট্রেন যাচ্ছে ও আসছে প্রত্যেকটিতে অতিরিক্ত যাত্রী চাপ লক্ষ্য করা গেছে।

রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মাতিউল হক টিটু বলেন, আমাদের অনেক দিনের দাবি ছিল এটি। আমরা নির্ধারিত সময় বেধে দিয়েছিলাম। তবে আমাদের কোনো আশ্বাস না দেওয়ায় আমার আজ সকাল থেকে স্বেচ্ছায় কর্মবিরতিতে গেছি।

মানুষের ভোগান্তি ও বিএনপির সমাবেশের বিষয়ে চানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো মানুষ বহনই করছি না, তাই ভোগান্তি আমাদের দিক থেকে নেই। বিএনপির সঙ্গে এই পরিবহন ধর্মঘটের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি আমাদের দাবি আদায়ের স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি।

টিটু আরও বলেন, আমাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। বুধবারের মধ্যে সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই ধর্মঘট চলবে।

পরিবহন মালিক সমিতির ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে আঞ্চলিক মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধ, জ্বালানি তেল ও যন্ত্রাংশের মূল্য হ্রাস, কোভিডকালীন সময়ের ট্যাক্স মওকুফ, সব ধরনের সরকারি ফি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ, চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, পুলিশি হয়রানি বন্ধ, উপজেলা পর্যায়ে বিআরটিসি চলাচল বন্ধ, মহাসড়কে হাট-বাজার পরিচালনা বন্ধ এবং যাত্রী ওঠানামার পার্কিং ও প্রত্যেক জেলায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ।