বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হোটেলে কাভার্ডভ্যান, পিতা-পুত্রসহ নিহত ৫

সাত বছরের শিশু তাওশি। প্রতিদিন সকালের মতো বাবা হাবিবুর রহমানের সাথে নাস্তা করতে যায় বাড়ির পাশের আবু তালেব খাঁর হোটেলে। সেই যাওয়া যে শেষ যাওয়া কে জানতো! পরিবারের কেউই অনুমানও করতে পারেনি বাপ-বেটার জন্য যমদূত অপেক্ষা করছে।  হোটেলে ঢুকতে না ঢুকতেই কাভার্ডভ্যান জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয় বাবা ছেলের। কেবল বাবা-ছেলে না, তাদের সাথে প্রাণ গেছে আরও তিনজনের। ঘটনাটি যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বেগারিতলার। একসাথে পাঁচজনের প্রাণ যাওয়ায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে গোটা এলাকা। কেবল বাকরুদ্ধ না, পুরো উপজেলাজুড়ে শোকের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল আটটার দিকে সাতক্ষীরা অভিমুখি একটি কাভার্ডভ্যান (ঢাকা মেট্টো-ন ২০-১৭৫১) যশোর-মণিরামপুর সড়কের বেগারিতলায় পৌঁছানোর পর চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। সাথে সাথে কাভার্ডভ্যানটি রাস্তার পাশের হোটেল, চায়ের দোকানসহ অন্তত দশটি দোকানে ধাক্কা দেয়। ওইসময় চায়ের দোকান ও হোটেলে আসা পাঁচজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

নিহতরা হলেন, মণিরামপুর উপজেলার টুনিয়াঘরা গ্রামের আহম্মদ আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান (৪৫) ও তার ছেলে তাওহিদ হোসেন (৭), জয়পুর গ্রামের আব্দুল মমিনের ছেলে জিয়ারুল (৩৫), টুনিয়াঘরা গ্রামের বাবুর ছেলে তৌহিদুর রহমান (৩৫) ও মফিজ মীরের ছেলে মীর সামসুল (৫০)।

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায় কাভার্ডভ্যানের চালক ও হেলপার। পুলিশ কাভার্ডভ্যানটি জব্দ করেছে। ঘটনার পরপরই এলাকার শ’শ’ লোক রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করে। এ কারণে যশোর-মণিরামপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দীর্ঘ সময় চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে, একসাথে স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে আহাজারি করেন তাওহিদা খাতুন। দুর্ঘটনায় নিহত বাবা-ছেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চলছে স্বজনদের বুকফাটা আহাজারি। সাত বছরের শিশুর মরদেহের পাশে বসে আহাজারি করেন মা তাওহিদা খাতুন।

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন,‘ছেলে প্রতিদিন সকালে পরোটা খাওয়ার জন্য বায়না ধরতো। ওর বাবা প্রতিদিনের মতো আজ সকালেও ছেলেকে কোলে করে হোটেলে পরোটা খেতে যাচ্ছিল। এরমধ্যে শুনলাম রাস্তায় না কি এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমিও বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরিয়ে দেখি আমার ছেলের মাথা দিয়ে অনর্গল রক্ত পড়ছে। ওর বাবাও রক্তে লাল হয়ে গেছে। দু’জনেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। আমার বুকের ধন কেড়ে নিলো গাড়িতে। আল্লাহ তাদের বিচার একদিন ঠিকই করবে।

মণিরামপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা প্রণব কুমার বিশ্বাস জানান, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে যশোর থেকে একটি কাভার্ডভ্যান মণিরামপুরের দিকে আসছিল। পথিমধ্যে বেগারিতলা পৌঁছালে রাস্তার পাশে থাকা বাবা- ছেলেকে প্রথমে চাপা দেয়। এরপর সেটি রাস্তার পাশের একটি হোটেলে ঢুকে পড়ে। সেখানে আরও তিনজনকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই পাঁচজন মারা যায়।

মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কাভার্ডভ্যানটি বেশ কয়েকটি দোকানে আঘাত করে। এতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

সর্বশেষ খবরে জানা যায়, শুক্রবার রাত আটটায় টুনিয়াঘরা আলিম মাদ্রাসা মাঠে নিহত পাঁচজনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় পৌরমেয়র অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদ ইকবাল, বিএনপি নেতা আবু মুছা ও ভোজগাতি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক অংশ নেন। এ সময় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয়

হোটেলে কাভার্ডভ্যান, পিতা-পুত্রসহ নিহত ৫

প্রকাশের সময় : ০১:৩১:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

সাত বছরের শিশু তাওশি। প্রতিদিন সকালের মতো বাবা হাবিবুর রহমানের সাথে নাস্তা করতে যায় বাড়ির পাশের আবু তালেব খাঁর হোটেলে। সেই যাওয়া যে শেষ যাওয়া কে জানতো! পরিবারের কেউই অনুমানও করতে পারেনি বাপ-বেটার জন্য যমদূত অপেক্ষা করছে।  হোটেলে ঢুকতে না ঢুকতেই কাভার্ডভ্যান জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয় বাবা ছেলের। কেবল বাবা-ছেলে না, তাদের সাথে প্রাণ গেছে আরও তিনজনের। ঘটনাটি যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বেগারিতলার। একসাথে পাঁচজনের প্রাণ যাওয়ায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে গোটা এলাকা। কেবল বাকরুদ্ধ না, পুরো উপজেলাজুড়ে শোকের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল আটটার দিকে সাতক্ষীরা অভিমুখি একটি কাভার্ডভ্যান (ঢাকা মেট্টো-ন ২০-১৭৫১) যশোর-মণিরামপুর সড়কের বেগারিতলায় পৌঁছানোর পর চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। সাথে সাথে কাভার্ডভ্যানটি রাস্তার পাশের হোটেল, চায়ের দোকানসহ অন্তত দশটি দোকানে ধাক্কা দেয়। ওইসময় চায়ের দোকান ও হোটেলে আসা পাঁচজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

নিহতরা হলেন, মণিরামপুর উপজেলার টুনিয়াঘরা গ্রামের আহম্মদ আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান (৪৫) ও তার ছেলে তাওহিদ হোসেন (৭), জয়পুর গ্রামের আব্দুল মমিনের ছেলে জিয়ারুল (৩৫), টুনিয়াঘরা গ্রামের বাবুর ছেলে তৌহিদুর রহমান (৩৫) ও মফিজ মীরের ছেলে মীর সামসুল (৫০)।

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায় কাভার্ডভ্যানের চালক ও হেলপার। পুলিশ কাভার্ডভ্যানটি জব্দ করেছে। ঘটনার পরপরই এলাকার শ’শ’ লোক রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করে। এ কারণে যশোর-মণিরামপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দীর্ঘ সময় চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে, একসাথে স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে আহাজারি করেন তাওহিদা খাতুন। দুর্ঘটনায় নিহত বাবা-ছেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চলছে স্বজনদের বুকফাটা আহাজারি। সাত বছরের শিশুর মরদেহের পাশে বসে আহাজারি করেন মা তাওহিদা খাতুন।

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন,‘ছেলে প্রতিদিন সকালে পরোটা খাওয়ার জন্য বায়না ধরতো। ওর বাবা প্রতিদিনের মতো আজ সকালেও ছেলেকে কোলে করে হোটেলে পরোটা খেতে যাচ্ছিল। এরমধ্যে শুনলাম রাস্তায় না কি এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমিও বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরিয়ে দেখি আমার ছেলের মাথা দিয়ে অনর্গল রক্ত পড়ছে। ওর বাবাও রক্তে লাল হয়ে গেছে। দু’জনেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। আমার বুকের ধন কেড়ে নিলো গাড়িতে। আল্লাহ তাদের বিচার একদিন ঠিকই করবে।

মণিরামপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা প্রণব কুমার বিশ্বাস জানান, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে যশোর থেকে একটি কাভার্ডভ্যান মণিরামপুরের দিকে আসছিল। পথিমধ্যে বেগারিতলা পৌঁছালে রাস্তার পাশে থাকা বাবা- ছেলেকে প্রথমে চাপা দেয়। এরপর সেটি রাস্তার পাশের একটি হোটেলে ঢুকে পড়ে। সেখানে আরও তিনজনকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই পাঁচজন মারা যায়।

মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কাভার্ডভ্যানটি বেশ কয়েকটি দোকানে আঘাত করে। এতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

সর্বশেষ খবরে জানা যায়, শুক্রবার রাত আটটায় টুনিয়াঘরা আলিম মাদ্রাসা মাঠে নিহত পাঁচজনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় পৌরমেয়র অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদ ইকবাল, বিএনপি নেতা আবু মুছা ও ভোজগাতি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক অংশ নেন। এ সময় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য উপস্থিত ছিলেন।