পূর্ব সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া জেলে মিলন মোল্লার (২২) সন্ধান গত ২০দিনেও মিলেনি। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর তাফালবাড়ি গ্রামের জয়নাল হাওলাদারের ছেলে মিলন প্রতিবেশী জেলে মহাজন মো. আলমঙ্গীর মুন্সির সাথে তার নৌকায় মাছ ধরতে বনে গিয়ে নিখোঁজ হয়। নৌকার অন্য জেলেরা বন থেকে ফিরে আসলেও মিলন ফিরে আসেনি। ওদিকে কাকড়া জেলেরা বনের নদীতে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ ভাসতে দেখে এলাকায় এসে জানালে মিলনের পরিবার ধারণা করেন মিলনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে সহযোগীরা। তবে মিলনকে হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন মহাজন আলমঙ্গীর।
এ ঘটনায় উভয় পক্ষ থেকে থানায় এবং আদালতে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। নিখোঁজ মিলনের বাবা মো. জয়নাল মোল্লা জানান, তার ছেলে মিলন প্রতিবেশী জেলে মহাজন আলমঙ্গীর মুন্সির সাথে গত ১১ নভেম্বর চরগড়ায় মাছ ধরতে শরণখোলা রেঞ্জের পাঙ্গাশিয়া এলাকায় যায়। সেখানে তিনদিন মাছ ধরার পর ১৪ নভেম্বর রাতে তার ছেলে মিলনের সাথে নৌকার অন্য জেলেদের মারামারি হয়। ১৫ নভেম্বর সকালে আলমগীর ও নৌকার অন্য জেলেরা বাড়ি ফিরে আসলেও মিলন ফিরে আসেনি। এর মধ্যে বনের ভাইজোড়া নদীতে কাকড়া জেলেরা অজ্ঞাত ব্যক্তির নীল গেঞ্জিপড়া মরদেহ ভাসতে দেখে এসে জানালে মিলনের পরিবারের ধারণা হয় মিলনকে তার সহযোগীরা মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে।
মিলনের বাবা আরও জানান, বনরক্ষিদের সহায়তায় বনের মধ্যে গত ৮ দিন ধরে মিলনকে খোঁজাখুজি করা হলেও তার কোন খবর পাওয়া যায়নি। তার ছেলের গায়ে নীল গেঞ্জি ছিলো বলে জানান তিনি। এ ঘটনায় তিনি নৌকার মালিক আলমগীর মুন্সি ও একই গ্রামের সহযোগী জেলে আলী হোসেন খান, সাইফুল ইসলাম ও নান্না মিয়াকে আসামী করে বাগেরহাট কোর্টে একটি মামলা করেন।
মহাজন মো. আলমঙ্গীর হোসেন মুন্সি জানান, মিলন মোল্লা ১৪ নভেম্বর রাতে কথাকাটাকাটির এক পর্যায় তাকে এবং তার নৌকার অপর জেলে আলী হোসেনকে কুপিয়ে জখম করে বনের মধ্যে পালিয়ে যায়। দায়ের কোপে গুরুতর জখম আলী হোসেনকে বন থেকে দ্রুত এনে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি বনবিভাগের সহায়তায় মিলনের পিতাকে নিয়া বনের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও পাননি। বনে বসে জেলে আলী হোসেনকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় মিলনের নামে শরণখোলা থানায় মামলা করা হয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ষ্টেশন কর্মকর্তা সুফল রায় জানান, মিলন নামের এক ব্যক্তি সুন্দরবনে মাছ ধরতে নিখোঁজ হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
গত এক সপ্তাহ আগে বনের বড়ভাইজোড়ো নদীতে এক ব্যক্তির মরদেহ ভাসতে দেখার খবর পেয়েছেন কাকড়া জেলে শাহালমের কাছ থেকে। লাশের শরীরে নীল বর্নের গেঞ্জি ছিলো বলেও জানান জেলে শাহালম।
বনরক্ষিরা নিখোজের স্বজনদের নিয়ে গত তিনদিন ধরে বনে লাশের সন্ধান করেও পাননি। তবে মিলনের নামে বনে মাছ ধরতে যাওয়ার কোন পাশ নাই বলে জানান ষ্টেশন কর্মকর্তা।
থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইকরাম হোসেন জানান, সুন্দরবনে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের মধ্যে মারামারির ঘটনা তিনি উভয় পক্ষের কাছ থেকে শুনেছেন। তবে আলীহোসেন নামের এক ব্যক্তিকে জঙ্গলে বসে দা দিয়ে কুপিয়ে গুরতর জখম করার লিখিত অভিযোগ পাওয়ায় নিখোঁজ জেলে মিলন মোল্লার নামে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।