ঠাকুরগাঁওয়ে মাতৃত্বকালীন কার্ড প্রদানে জনপ্রতি দুই থেকে তিনশ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘুষ গ্রহনের সময় সদরের বালিয়া ইউনিয়নের সচিব ধীরেন চন্দ্র ও তার সহযোগী মকসেদুল ইসলামসহ দুইজনকে আটক করে স্থানীয় জনতা। পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। ঘুষ বাণিজ্যের ঘটনায় ক্ষুদ্ধতা প্রকাশ করেন অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের মায়েরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা শহরের মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। তবে দিনের বেলায় এসব কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অজ্ঞাত কারনে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার নির্দেশে কার্যক্রম চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।
এসময় ভুক্তভোগীরারা অভিযোগ করে বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে মাতৃত্ব ভাতার উপকারভোগী গর্ভবতীদের ব্যাংক হিসাব খোলাসহ অন্যান্য ফি বাবদ পাঁচশ টাকা প্রদানের বিধান থাকলেও আটশ থেকে এক হাজার টাকা আদায় করেছে গর্ভবতী পরিবারের কাছে। জেলা মহিলা বিষয়ক উপ-পরিচালকের যোগসাজসে সংশ্লিস্ট ইউনিয়ন পরিষদের সচীবসহ তাদের সহযোগীদের দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে জানান তারা। পরে ক্ষুদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বালিয়া ইউনিয়নের সচীব ধীরেন চন্দ্র ও তার সহযোগী মকসেদুল ইসলামকে আটকে রেখে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
সংশ্লিস্টরা জানান, দরিদ্র গর্ভবতী নারীদের সহায়তা প্রদানের জন্য মাতৃত্ব ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নেয় সরকার। যা বাস্তবায়ন করবে মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তর। গর্ভবতী এবং প্রসূতি নারীদের নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই গতকাল সদর উপজেলার জামালপুর, রহিমানপুর, বালিয়া, জগনাথপুর, শুখানপুখুরী, রাজাগাও ইউনিয়নের গর্ভবতী নারীদের তালিকাভুক্ত করা হচ্ছিল অনলাইনের মাধ্যমে।
মধ্যরাত পর্যন্ত কেন কাজ করা হচ্ছে জানতে চাইলে জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, শুধু এবারেই নয়, প্রতি বছর মাতৃত্ব ভাতার কার্ড নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয় সংশ্লিস্ট চেয়ারম্যানদের গাফিলতির কারনে। তারা তালিকা প্রদান করেন শেষ সময়ে এসে। আর সে কারনেই রাতের বেলায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।
এ বিষয়ে বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মাতৃত্ব ভাতার কার্ডে অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হয়নি। কেউ যদি আমার নাম ভেঙ্গে দরিদ্রদের কাছে টাকা নিয়ে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জিন্নাতারা ইয়াছমিন টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য ৩০০ আর অনলাইনে খচর বাবদ ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে কোন কথা বলবেন না জানিয়ে এড়িয়ে যান তিনি।
এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জানান, মহিলা অধিদপ্তরে মাতৃত্ব ভাতায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে বালিয়া ইউনিয়নের সচিব ধীরেন চন্দ্র ও তার সহযোগী মোকসেদুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। পরে ইউপি চেয়ারম্যান জুলফিকার আলীর থানায় আসলে মুচলেকা দিয়ে দুজনকে ছেড়ে নিয়ে যায়।
ঠাকুরগাঁও জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর সদরের ১২০০ গর্ভবতী নারীকে প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে আগামী তিন বছরের জন্য মাতৃত্ব ভাতা প্রদানের আওতায় আনা হয়।