শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১২ তরুণ নিখোঁজ ‘দুই বছর পর জানা গেল ওরা জঙ্গি’

করোনাভাইরাসের মহামারিকালে বাড়ি থেকে ১২ তরুণ নিখোঁজ হয়। তবে একসঙ্গে নয় ভিন্ন সময়ে নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। তাদের খোঁজে পরিবারের সদস্যরা পুলিশের সহায়তা চান।

বরং শংকা ও ভয় যেন তাদের জেঁকে বসেছে। কারণ ১২ জনই জঙ্গির খাতায় নাম লিখিয়েছে। নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায়’ তারা যোগ দিয়েছেন। জানুয়ারির শেষের দিকে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে কক্সবাজার থেকে এ সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীরকে গ্রেফতার করা হয়।

মোবাইল ফোনে ধারণ করা অস্ত্র প্রশিক্ষণের ভিডিও তার কাছে পাওয়া যায়। এ থেকে ১২ জনের সন্ধান মেলে। যাদের সবার বাড়ি বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকায়।

র‌্যাব-৮-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী-অভিযানে গ্রেফতার রনবীর এবং সংগঠনের অস্ত্র শাখার প্রধান আবুল বাশার মৃধার কাছ থেকে মিলেছে কথিত নিখোঁজ তরুণদের নানা তথ্য। উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোনের ভিডিওতে মিলেছে ১২ তরুণের অস্ত্র প্রশিক্ষণের দৃশ্য।

প্রাথমিক পর্যায়ে ভিডিওটি দেখে ৩৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের ১২ জনের বাড়ি বরিশালের বিভিন্ন এলাকায়। তারা হলো-বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের মহাবাজ এলাকার রাক্কী আব্দুস সালাম ওরফে দুমচুক ওরফে রাসেল (২৮), একই উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর গ্রামের ঝড়ঝড়িয়াতলা এলাকার আরিফুর রহমান ওরফে লাইলেন (২৬), বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রিশীবপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মাসুদ ডাকুয়া ওরফে হাকা (২০), পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠি গ্রামের আল আমিন ওরফে ফকির মোস্তফা (১৯), একই গ্রামের মিরাজ শিকদার ওরফে আশরাফ (২৬), পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার মধ্য গছানিয়া গ্রামের শামিম মিয়া ওরফে আবু হুরায়রা ওরফে রাফি ওরফে চামদুর (২৫), একই উপজেলার উত্তর লক্ষ্মীপুর দফিপুর গ্রামের হোসাইন আহম্মেদ ওরফে রেকমি ওরফে প্যাদা (২১), পটুয়াখালীর মহিপুর থানার মহিপুর গ্রামের ওবায়দুল্লাহ শাকিব ওরফে শান্ত (২০), মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী গ্রামের জুয়েল মাহমুদ (২৭), বরগুনা সদর উপজেলার বুড়া মজুমদার এলাকার সোহেল মোল্লা ওরফে সাইফুল্লাহ (২২), ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাউকাঠি কালিকান্দা এলাকার হাবিবুর রহমান ওরফে মুরা (২৩) এবং একই জেলার নলছিটি উপজেলার নাচনমহল গ্রামের মিলন তালুকদার ওরফে লামজল (২৪)।

২৩ জানুয়ারি ভোরে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলির পর সেনাবাহিনীর হাতে রনবীর ও বাশার মৃধা আটক হয়। এরপর জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের ব্যাপারে জানা যায়। অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদের পাশাপাশি মোবাইল ফোনের ভিডিও উদ্ধার করা হয়। এ ভিডিওর সূত্র ধরে ১২ তরুণের খোঁজ মেলে।

র‌্যাব-৮-এর কর্মকর্তারা জানান, ২০২১ সালের বিভিন্ন সময়ে ১২ তরুণ নিজ নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। তবে তাদের মধ্যে আগে থেকে কোনো পরিচয় বা যোগাযোগ ছিল না। তাদের প্রায় সবাই শিক্ষার্থী। কেউ কেউ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। করোনাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে তারা একে একে ঘর ছাড়ে।

রাজধানী ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে চেয়েছিল। সেই লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন পাহাড়ি জঙ্গলে তারা ঘাঁটি গাড়ে। সেখানে তারা সদস্যদের অস্ত্র পরিচালনা, বোমা তৈরি এবং সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে। এ প্রশিক্ষণের নানা সময়ের ভিডিও চিত্র মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয়।

র‌্যাব-৮-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসান বলেন, ১২ তরুণের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে-সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তরুণদের ধর্ম সম্পর্কে ভুল বুঝিয়ে জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এমনভাবে তাদের মগজ ধোলাই করা হয়-বাড়ি ছাড়ার আগে পরিবার অথবা বন্ধুদের সঙ্গেও তারা এসব বিষয়ে আলোচনা করেনি।

১২ তরুণ নিখোঁজ ‘দুই বছর পর জানা গেল ওরা জঙ্গি’

প্রকাশের সময় : ০৮:৩৭:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

করোনাভাইরাসের মহামারিকালে বাড়ি থেকে ১২ তরুণ নিখোঁজ হয়। তবে একসঙ্গে নয় ভিন্ন সময়ে নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। তাদের খোঁজে পরিবারের সদস্যরা পুলিশের সহায়তা চান।

বরং শংকা ও ভয় যেন তাদের জেঁকে বসেছে। কারণ ১২ জনই জঙ্গির খাতায় নাম লিখিয়েছে। নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায়’ তারা যোগ দিয়েছেন। জানুয়ারির শেষের দিকে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে কক্সবাজার থেকে এ সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীরকে গ্রেফতার করা হয়।

মোবাইল ফোনে ধারণ করা অস্ত্র প্রশিক্ষণের ভিডিও তার কাছে পাওয়া যায়। এ থেকে ১২ জনের সন্ধান মেলে। যাদের সবার বাড়ি বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকায়।

র‌্যাব-৮-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী-অভিযানে গ্রেফতার রনবীর এবং সংগঠনের অস্ত্র শাখার প্রধান আবুল বাশার মৃধার কাছ থেকে মিলেছে কথিত নিখোঁজ তরুণদের নানা তথ্য। উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোনের ভিডিওতে মিলেছে ১২ তরুণের অস্ত্র প্রশিক্ষণের দৃশ্য।

প্রাথমিক পর্যায়ে ভিডিওটি দেখে ৩৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের ১২ জনের বাড়ি বরিশালের বিভিন্ন এলাকায়। তারা হলো-বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের মহাবাজ এলাকার রাক্কী আব্দুস সালাম ওরফে দুমচুক ওরফে রাসেল (২৮), একই উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর গ্রামের ঝড়ঝড়িয়াতলা এলাকার আরিফুর রহমান ওরফে লাইলেন (২৬), বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রিশীবপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মাসুদ ডাকুয়া ওরফে হাকা (২০), পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠি গ্রামের আল আমিন ওরফে ফকির মোস্তফা (১৯), একই গ্রামের মিরাজ শিকদার ওরফে আশরাফ (২৬), পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার মধ্য গছানিয়া গ্রামের শামিম মিয়া ওরফে আবু হুরায়রা ওরফে রাফি ওরফে চামদুর (২৫), একই উপজেলার উত্তর লক্ষ্মীপুর দফিপুর গ্রামের হোসাইন আহম্মেদ ওরফে রেকমি ওরফে প্যাদা (২১), পটুয়াখালীর মহিপুর থানার মহিপুর গ্রামের ওবায়দুল্লাহ শাকিব ওরফে শান্ত (২০), মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী গ্রামের জুয়েল মাহমুদ (২৭), বরগুনা সদর উপজেলার বুড়া মজুমদার এলাকার সোহেল মোল্লা ওরফে সাইফুল্লাহ (২২), ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাউকাঠি কালিকান্দা এলাকার হাবিবুর রহমান ওরফে মুরা (২৩) এবং একই জেলার নলছিটি উপজেলার নাচনমহল গ্রামের মিলন তালুকদার ওরফে লামজল (২৪)।

২৩ জানুয়ারি ভোরে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলির পর সেনাবাহিনীর হাতে রনবীর ও বাশার মৃধা আটক হয়। এরপর জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের ব্যাপারে জানা যায়। অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদের পাশাপাশি মোবাইল ফোনের ভিডিও উদ্ধার করা হয়। এ ভিডিওর সূত্র ধরে ১২ তরুণের খোঁজ মেলে।

র‌্যাব-৮-এর কর্মকর্তারা জানান, ২০২১ সালের বিভিন্ন সময়ে ১২ তরুণ নিজ নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। তবে তাদের মধ্যে আগে থেকে কোনো পরিচয় বা যোগাযোগ ছিল না। তাদের প্রায় সবাই শিক্ষার্থী। কেউ কেউ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। করোনাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে তারা একে একে ঘর ছাড়ে।

রাজধানী ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে চেয়েছিল। সেই লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের গহিন পাহাড়ি জঙ্গলে তারা ঘাঁটি গাড়ে। সেখানে তারা সদস্যদের অস্ত্র পরিচালনা, বোমা তৈরি এবং সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে। এ প্রশিক্ষণের নানা সময়ের ভিডিও চিত্র মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয়।

র‌্যাব-৮-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসান বলেন, ১২ তরুণের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে-সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তরুণদের ধর্ম সম্পর্কে ভুল বুঝিয়ে জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এমনভাবে তাদের মগজ ধোলাই করা হয়-বাড়ি ছাড়ার আগে পরিবার অথবা বন্ধুদের সঙ্গেও তারা এসব বিষয়ে আলোচনা করেনি।