শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

রাঙ্গুনিয়ার অবৈধ করাতকলে চলছে চোরাই কাঠ চিরাই,উজাড় হচ্ছে বন

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় শতাধিক অবৈধ করাতকল। গত তিন থেকে চার বছরে বেড়েছে তা দ্বিগুণেরও বেশি। এসব করাতকলে অবাধে কাঠ চেরাই চলছে। নিকটস্থ সংরক্ষিত সরকারি বন ও বাগান হতে এসব কাঠ করাতকলে আসে। এতে উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
অথচ বন আইনের বিধান মতে, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তিন কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপনের উপর বিধিনিষেধ রয়েছে। তাছাড়া করাতকল স্থাপনে সরকারি অনুমোদন বাধ্যতামূলক। আইন থাকা স্বত্ত্বেও রাঙ্গুনিয়ায় অধিকাংশ করাতকল স্থাপনের ক্ষেত্রে সে নিয়ম মানা হয়নি। সরকারি নিয়মবিধির তোয়াক্কা না করেই করাতকলগুলো চলছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধ করাতকল স্থাপন করে জমজমাট ব্যবসা করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রতিদিন করাতকলগুলোতে শত শত ঘনফুট চোরাই কাঠ চিরাই করা হলেও এসব প্রতিরোধে বন বিভাগের কোন ভূমিকা নেই। দীর্ঘদিন ধরে একটি কাঠচোর চক্র বন-প্রহরীসহ সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ম্যানেজ করে বন উজাড় করে মূল্যবান বৃক্ষ চোরাই পথে এসব করাতকলে নিয়ে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসে করাতকলের কোন তথ্য নেই। তবে বিভিন্ন এলাকায় জরিপ চালিলে দেখা গেছে, উপজেলার পোমরায় ৮টি, সরফভাটায় ৫টি, মরিয়মনগরে ৪টি, পদুয়ায় ৭টি, কোদালায় ৫টি, চন্দ্রঘোনায় ৮টি, শিলকে ৫টি, বেতাগিতে ৪টি, পারুয়ায় ৫টি, রাজানগরে ৯টি, দক্ষিণ রাজানগরে ৭টি, ইসলামপুরে ৯টি, লালানগরে ৫টি, হোচনাবাদে ৫টি, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নে ৫টি করাতকল রয়েছে। এসবের অধিকাংশরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেই। চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নির্দিষ্ট দূরত্বের ভিতরেই স্থাপিত হয়েছে এসব করাতকল।
রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তার অফিসে সংরক্ষিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাঙ্গুনিয়া পৌর এলাকা ও উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন এলাকায় লাইসেন্সধারী করাতকলের সংখ্যা ১২টি। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে এমন করাত কলের সংখ্যা রয়েছে ১৪টি। অনুমোদন ব্যতীত করাতকলের সংখ্যা ১৪টি।
এলাকাবাসীরা জানায়, করাতকলগুলোতে রাত-দিন বনের গাছ চিরাই চলছে। বনাঞ্চল থেকে গাছ চোরেরা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে করাতকলগুলোতে মজুদ করে। পরে কাঠ বানিয়ে পাচার করে চট্টগ্রাম শহরে এবং স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা অবৈধ ফার্নিচার দোকানগুলোতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি করাতকলের সামনে কাঠের স্তূপ। সেগুন, গামারি, গর্জন, আকাশমনি, আম, জাম, কাঁঠালসহ ফলদ ও বনজ গাছ রয়েছে সেখানে।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি করাতকলে কমপক্ষে ৪/৫ হাজার ঘনফুট কাঠ মজুদ রয়েছে। যেগুলোর বাজার মূল্য কোটি টাকারও বেশি।
মোগলেরহাটের জিলানী করাতকলের মালিক জনৈক নেজাম উদ্দিন বলেন, চিরাই করার জন্য গাছগুলো মজুদ করে ব্যবসায়ীরা। পাচারও করে তারা। এতে আমাদের হাত নেই।
এদিকে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা এলাকা ছাড়া পুরো উপজেলা সংরক্ষিত বনের আওতায়। ফলে বনবিভাগ বাকি ১৫ ইউনিয়নে কোন করাতকল বসানোর অনুমোদন দিতে পারে না। এসব জায়গায় অনুমোদন ছাড়াই সবকয়টি করাতকল চলছে। এ জন্য বনবিভাগসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্থাকে মাসোহারা দিতে হয়।
এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ মাসুম করিম বলেন, পৌরসভা ছাড়া অন্য এলাকায় বসানো করাতকলগুলো অবৈধ। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ক্ষমতাবানরাই বসিয়েছে এসব করাতকল। ফলে আমরা চাইলেও এসব করাতকল বন্ধ হবে না।
এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গণি ওসমানী বলেন, করাতগুলোতে ব্যাপকভাবে কাঠ চিরাইয়ে বৃক্ষসম্পদ উজার হচ্ছে। এতে পরিবেশের মারত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শীর্ঘ্রই অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জনপ্রিয়

রাঙ্গুনিয়ার অবৈধ করাতকলে চলছে চোরাই কাঠ চিরাই,উজাড় হচ্ছে বন

প্রকাশের সময় : ১০:২৬:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় শতাধিক অবৈধ করাতকল। গত তিন থেকে চার বছরে বেড়েছে তা দ্বিগুণেরও বেশি। এসব করাতকলে অবাধে কাঠ চেরাই চলছে। নিকটস্থ সংরক্ষিত সরকারি বন ও বাগান হতে এসব কাঠ করাতকলে আসে। এতে উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
অথচ বন আইনের বিধান মতে, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তিন কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপনের উপর বিধিনিষেধ রয়েছে। তাছাড়া করাতকল স্থাপনে সরকারি অনুমোদন বাধ্যতামূলক। আইন থাকা স্বত্ত্বেও রাঙ্গুনিয়ায় অধিকাংশ করাতকল স্থাপনের ক্ষেত্রে সে নিয়ম মানা হয়নি। সরকারি নিয়মবিধির তোয়াক্কা না করেই করাতকলগুলো চলছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধ করাতকল স্থাপন করে জমজমাট ব্যবসা করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রতিদিন করাতকলগুলোতে শত শত ঘনফুট চোরাই কাঠ চিরাই করা হলেও এসব প্রতিরোধে বন বিভাগের কোন ভূমিকা নেই। দীর্ঘদিন ধরে একটি কাঠচোর চক্র বন-প্রহরীসহ সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ম্যানেজ করে বন উজাড় করে মূল্যবান বৃক্ষ চোরাই পথে এসব করাতকলে নিয়ে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসে করাতকলের কোন তথ্য নেই। তবে বিভিন্ন এলাকায় জরিপ চালিলে দেখা গেছে, উপজেলার পোমরায় ৮টি, সরফভাটায় ৫টি, মরিয়মনগরে ৪টি, পদুয়ায় ৭টি, কোদালায় ৫টি, চন্দ্রঘোনায় ৮টি, শিলকে ৫টি, বেতাগিতে ৪টি, পারুয়ায় ৫টি, রাজানগরে ৯টি, দক্ষিণ রাজানগরে ৭টি, ইসলামপুরে ৯টি, লালানগরে ৫টি, হোচনাবাদে ৫টি, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নে ৫টি করাতকল রয়েছে। এসবের অধিকাংশরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেই। চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নির্দিষ্ট দূরত্বের ভিতরেই স্থাপিত হয়েছে এসব করাতকল।
রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তার অফিসে সংরক্ষিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাঙ্গুনিয়া পৌর এলাকা ও উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন এলাকায় লাইসেন্সধারী করাতকলের সংখ্যা ১২টি। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে এমন করাত কলের সংখ্যা রয়েছে ১৪টি। অনুমোদন ব্যতীত করাতকলের সংখ্যা ১৪টি।
এলাকাবাসীরা জানায়, করাতকলগুলোতে রাত-দিন বনের গাছ চিরাই চলছে। বনাঞ্চল থেকে গাছ চোরেরা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে করাতকলগুলোতে মজুদ করে। পরে কাঠ বানিয়ে পাচার করে চট্টগ্রাম শহরে এবং স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা অবৈধ ফার্নিচার দোকানগুলোতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি করাতকলের সামনে কাঠের স্তূপ। সেগুন, গামারি, গর্জন, আকাশমনি, আম, জাম, কাঁঠালসহ ফলদ ও বনজ গাছ রয়েছে সেখানে।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি করাতকলে কমপক্ষে ৪/৫ হাজার ঘনফুট কাঠ মজুদ রয়েছে। যেগুলোর বাজার মূল্য কোটি টাকারও বেশি।
মোগলেরহাটের জিলানী করাতকলের মালিক জনৈক নেজাম উদ্দিন বলেন, চিরাই করার জন্য গাছগুলো মজুদ করে ব্যবসায়ীরা। পাচারও করে তারা। এতে আমাদের হাত নেই।
এদিকে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা এলাকা ছাড়া পুরো উপজেলা সংরক্ষিত বনের আওতায়। ফলে বনবিভাগ বাকি ১৫ ইউনিয়নে কোন করাতকল বসানোর অনুমোদন দিতে পারে না। এসব জায়গায় অনুমোদন ছাড়াই সবকয়টি করাতকল চলছে। এ জন্য বনবিভাগসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্থাকে মাসোহারা দিতে হয়।
এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ মাসুম করিম বলেন, পৌরসভা ছাড়া অন্য এলাকায় বসানো করাতকলগুলো অবৈধ। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ক্ষমতাবানরাই বসিয়েছে এসব করাতকল। ফলে আমরা চাইলেও এসব করাতকল বন্ধ হবে না।
এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গণি ওসমানী বলেন, করাতগুলোতে ব্যাপকভাবে কাঠ চিরাইয়ে বৃক্ষসম্পদ উজার হচ্ছে। এতে পরিবেশের মারত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শীর্ঘ্রই অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।