শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরমে পুড়ছে প্রায় সারাদেশ

 সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়েছে। এ দাবদাহ থেকে সহসাই মুক্তি মিলছে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। গরমের কারনে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ৪ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

একদিকে তাপমাত্রা বেশি, এর ওপর বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও বেশি। সবমিলিয়ে মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় হালকা পরিশ্রমেই ঘেমে-নেয়ে একাকার। ফ্যানের নিচে থেকেও ঘামছে মানুষ। তাপপ্রবাহ কোথাও মৃদু কোথাও তীব্র।

চলমান তাপপ্রবাহ আরও ৫/৬ দিন অব্যাহত থাকতে পারে, একই সঙ্গে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিকর অনুভূতিও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
রোববার (৪ জুন) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিস এটিকে মৃদু তাপ প্রবাহ(হিট ওয়েভ) বললেও এই তাপে মানুষকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। ৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করলে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলে। এ বছর মৌসুমি বায়ুর আগমন বিলম্ব হচ্ছে ফলে আরও কয়েকদিন এই গরম সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই। গ্রামে অনেকে একটু বাতাসের আশায় পুকুরপাড়ে, গাছের তলে বা মাঠের পাশে বসছেন।

শহরের মানুষের এ সুযোগ কম, ফলে এই গরম থেকে মানুষ মুক্তি পেতে ছুটছেন ফ্যান কিনতে কিন্তু বিক্রি এত বেড়ে গিয়েছে যে সরবরাহ করে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সাধারণ ফ্যানের চেয়ে সবাই চার্জার ফ্যান কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। কিন্তু গত ৪/৫ দিন যশোরের ব্যবসায়ীরা এ ফ্যানের দাম যেমন বাড়িয়েছেন তেমনি চাহিদা মতো সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর উপর লোড শেডিংয়ের চাপ। স্বয়ং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন দু সপ্তাহের মধ্যে লোড শেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হবে। মারাত্মক অস্বস্তিকর গরমের কারণে আজ থেকে সরকারিভাবে সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ৪ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরে গরমের তীব্রতায় যশোরবাসী নাকাল হচ্ছেন। পারদের উচ্চতা ৩৯ বা ৪০ ডিগ্রিতে উঠলেও মেঘ বৃষ্টি না থাকায় প্রখর রোদে পুড়ে মানুষের জীবন নাস্তানাবুদ হচ্ছে। আবার খরায় যেমন দিশেহারা তারসাথে বাতাসের প্রবাহ না থাকায় অস্বস্তিকর ও অসহনীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের বিশ্লেষণে জানাগেছে, দেশে ৪৪টি আবহাওয়া স্টেশনের মধ্যে ৩১টিতে মৃদু তাপপ্রবাহ বিস্তার করছে। এর সাথে শুষ্কতার আধিক্য রয়েছে। যশোর বিমান বন্দরস্থ আবহাওয়া অফিসের মুখপত্র সন্ধ্যায় জানান, রোববার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৭.৮ ডিগ্রি। এর চেয়ে বেশি ভাবনার জায়গাটি হলো তাপমাত্রা এমন থাকলেও এ সময় সাধারণত বাযু প্রবাহের ঘণ্টায় গতি ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার থাকে এর সাথে থাকে স্থানীয় মেঘ বৃষ্টির প্রভাব, কিন্তু এবার বায়ু প্রবাহের গতি চলছে ঘণ্টায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার। তাছাড়া, অন্য বছর সাধারণত মৌসুমি বায়ু ৩১ মে পর থেকে বিস্তার লাভ করে এবার দেরিতে মৌসুমি বায়ুর দেখা মিলতে পারে। আবহাওয়া অফিসের মতে ৯/১০ তারিখের পর মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করতে পারে, তখন গরমের তীব্রতা কমতে পারে।এর আগে স্থানীয়ভাবে মেঘ-বৃষ্টি হলেও এর কারণে গরমের তীব্রতা কমার সম্ভাবনা তেমন নেই।

এদিকে গরমের সাথে এক প্রকার পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোড শেডিং। কোনো কোনো এলাকায় এর প্রভাব অনেক বেশি, সেসব এলাকায় দিন রাতে অনেকবারই বিদ্যুতের আসা যাওয়া থাকছে। রাতে যশোরের প্রায় প্রত্যেক এলাকায় একবার না একবার লোডশেডিং থাকছে, সে সময় মানুষ গরমে আরও বেশি কষ্টের মধ্যে পড়ে। এ দিকে বিদ্যুৎ পরিস্থির অবনতির কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি জ্বালানি সংকটের কথা উল্লেখ করে লোড শেডিং পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করেন তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সংসদে জানান, আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু জ্বালানি তেল, কয়লা বা গ্যাসের অভাব সারা বিশ্বব্যাপী। এখন কেনাটাই অনেকটা মুশকিল। ক্রয় করাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারপরও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে কাতার ও ওমানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়ে গেছে। জলবিদ্যুৎ আমদানিরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কয়লা কেনার জন্য ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আবার চালু করা যায়।

এদিকে,অস্বস্তিকর গরমে যশোরের মানুষ গত ৩/৪ দিন বেশি করে ছুটেছেন বৈদ্যুতিক ফ্যানের দোকানে। সেখানে প্রায় সবারই চাহিদা চার্জার ফ্যানের। বাজারে একেবারে ছোট হ্যান্ড চার্জার ফ্যান থেকে শুরু করে মাঝারি আকারের চার্জার ফ্যান ছিল। কিন্তু গত ৩/৪ দিনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল যশোর মাইকপট্টির দোকানগুলোতে বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, তখন লোড শেডিং চলছে কিন্তু ফ্যান বিক্রির প্রতিটি দোকানে চার্জার ফ্যান কেনার খরিদ্দারে পা ফেলানোর সুযোগ নেই। দোকানদাররা খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ সব ক্রেতাদের বেশিরভাগ ছিলেন নারী ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল-মেসে থাকা ছাত্রী। বেশিরভাগ দোকানে সাধারণ মানের চার্জার ফ্যান ছিল না, কয়েকটি দোকানে হ্যান্ড চার্জার ফ্যান ছিল।

একজন দোকান দার স্পষ্টই জানালেন, ঢাকা থেকে নতুন মালামাল না আনা পর্যন্ত চার্জার ফ্যান দেওয়া যাবে না। তিনি জানান, ভালো মানের ফ্যান না থাকায় লোকে হ্যান্ড চার্জার ফ্যান কিনছেন। তিনি জানান, গত ৩ দিনে তিনি ৪ শতাধিক এই ফ্যান বিক্রি করেছেন। আগে ২২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন প্রায় সব দোকান ২৫০ থেকে ৩শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। একজন ক্রেতা জানান, গত বছর ছোট আকারের যে চার্জার ফ্যান সাড়ে ৫শ টাকা ছিল, এবার তা কোনো কোনো দোকানে সাড়ে ১৭শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের চার্জার ফ্যান আগে ১৫শ টাকায় বিক্রি হতো গত কয়েক দিন সেগুলি দোকান ভেদে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। দাম বেশি নিলেও থেমে থাকছে না বিক্রি বলে জানান দোকানদাররা।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এমএম কলেজ হোস্টেলের কয়েকজন ছাত্রী এবং কয়েকজন গৃহীনীর সাথে ফ্যানের দোকানে কথা হলে তারা জানান, হোস্টেল বা হল যেখানেই থাকেন না কোনো, রাতে গরমে একেবারে ঘুমাতে পারছেন না। লোড শেডিংয়ের কারণে মধ্যরাতে গরমে আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে। তাই চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছিলেন, কিন্তু সুবিধামতো পাওয়া যাচ্ছে না, তাই হ্যান্ড চার্জার ফ্যান নিতে বাধ্য হলাম, এতে মুখমণ্ডলে একটু বাতাসের ঝাপটা দেওয়া যাবে।

তবে গৃহীনীরা বললেন, আরও ভয়াবহ কথা, বাসায় এসি থাকলেও সেটিতো আর সব সময় চলছে না, লোড শেডিং চলে, কিন্তু ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা গরমে ছটফট করে, হাতপাখা দীর্ঘক্ষণ টানা কষ্টদায়ক। ফলে বাধ্য হয়েই, হ্যান্ড চার্জার ফ্যান কিনতে হচ্ছে, কারণ চার্জার ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। দু একটা যা পাওয়া যাচ্ছে তার দামও খুব বেশি। দুজন নারী জোর দিয়েই বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি শুরু হবে লোড শেডিং কমবে তখন এতটা সমস্যা হবে না। কিন্তু আগামী ৫-১০ দিন গরমের এই তীব্রতা সহ্য করায় অনেক যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠছে। শহর ও উপশহর এলাকার কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, গরমে তাদের ক্লাসে বসতে খুব সমস্যা হচ্ছে। ঘরের মধ্যে ফ্যান না চললে এই সময় অসহ্য হয়ে উঠছে গরমের অবস্থা।

গরমে পুড়ছে প্রায় সারাদেশ

প্রকাশের সময় : ০৬:০৩:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩

 সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়েছে। এ দাবদাহ থেকে সহসাই মুক্তি মিলছে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। গরমের কারনে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ৪ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

একদিকে তাপমাত্রা বেশি, এর ওপর বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও বেশি। সবমিলিয়ে মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় হালকা পরিশ্রমেই ঘেমে-নেয়ে একাকার। ফ্যানের নিচে থেকেও ঘামছে মানুষ। তাপপ্রবাহ কোথাও মৃদু কোথাও তীব্র।

চলমান তাপপ্রবাহ আরও ৫/৬ দিন অব্যাহত থাকতে পারে, একই সঙ্গে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিকর অনুভূতিও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
রোববার (৪ জুন) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিস এটিকে মৃদু তাপ প্রবাহ(হিট ওয়েভ) বললেও এই তাপে মানুষকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। ৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করলে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলে। এ বছর মৌসুমি বায়ুর আগমন বিলম্ব হচ্ছে ফলে আরও কয়েকদিন এই গরম সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই। গ্রামে অনেকে একটু বাতাসের আশায় পুকুরপাড়ে, গাছের তলে বা মাঠের পাশে বসছেন।

শহরের মানুষের এ সুযোগ কম, ফলে এই গরম থেকে মানুষ মুক্তি পেতে ছুটছেন ফ্যান কিনতে কিন্তু বিক্রি এত বেড়ে গিয়েছে যে সরবরাহ করে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। সাধারণ ফ্যানের চেয়ে সবাই চার্জার ফ্যান কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। কিন্তু গত ৪/৫ দিন যশোরের ব্যবসায়ীরা এ ফ্যানের দাম যেমন বাড়িয়েছেন তেমনি চাহিদা মতো সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর উপর লোড শেডিংয়ের চাপ। স্বয়ং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন দু সপ্তাহের মধ্যে লোড শেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হবে। মারাত্মক অস্বস্তিকর গরমের কারণে আজ থেকে সরকারিভাবে সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ৪ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরে গরমের তীব্রতায় যশোরবাসী নাকাল হচ্ছেন। পারদের উচ্চতা ৩৯ বা ৪০ ডিগ্রিতে উঠলেও মেঘ বৃষ্টি না থাকায় প্রখর রোদে পুড়ে মানুষের জীবন নাস্তানাবুদ হচ্ছে। আবার খরায় যেমন দিশেহারা তারসাথে বাতাসের প্রবাহ না থাকায় অস্বস্তিকর ও অসহনীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের বিশ্লেষণে জানাগেছে, দেশে ৪৪টি আবহাওয়া স্টেশনের মধ্যে ৩১টিতে মৃদু তাপপ্রবাহ বিস্তার করছে। এর সাথে শুষ্কতার আধিক্য রয়েছে। যশোর বিমান বন্দরস্থ আবহাওয়া অফিসের মুখপত্র সন্ধ্যায় জানান, রোববার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৭.৮ ডিগ্রি। এর চেয়ে বেশি ভাবনার জায়গাটি হলো তাপমাত্রা এমন থাকলেও এ সময় সাধারণত বাযু প্রবাহের ঘণ্টায় গতি ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার থাকে এর সাথে থাকে স্থানীয় মেঘ বৃষ্টির প্রভাব, কিন্তু এবার বায়ু প্রবাহের গতি চলছে ঘণ্টায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার। তাছাড়া, অন্য বছর সাধারণত মৌসুমি বায়ু ৩১ মে পর থেকে বিস্তার লাভ করে এবার দেরিতে মৌসুমি বায়ুর দেখা মিলতে পারে। আবহাওয়া অফিসের মতে ৯/১০ তারিখের পর মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করতে পারে, তখন গরমের তীব্রতা কমতে পারে।এর আগে স্থানীয়ভাবে মেঘ-বৃষ্টি হলেও এর কারণে গরমের তীব্রতা কমার সম্ভাবনা তেমন নেই।

এদিকে গরমের সাথে এক প্রকার পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোড শেডিং। কোনো কোনো এলাকায় এর প্রভাব অনেক বেশি, সেসব এলাকায় দিন রাতে অনেকবারই বিদ্যুতের আসা যাওয়া থাকছে। রাতে যশোরের প্রায় প্রত্যেক এলাকায় একবার না একবার লোডশেডিং থাকছে, সে সময় মানুষ গরমে আরও বেশি কষ্টের মধ্যে পড়ে। এ দিকে বিদ্যুৎ পরিস্থির অবনতির কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি জ্বালানি সংকটের কথা উল্লেখ করে লোড শেডিং পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করেন তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সংসদে জানান, আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু জ্বালানি তেল, কয়লা বা গ্যাসের অভাব সারা বিশ্বব্যাপী। এখন কেনাটাই অনেকটা মুশকিল। ক্রয় করাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারপরও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে কাতার ও ওমানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়ে গেছে। জলবিদ্যুৎ আমদানিরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কয়লা কেনার জন্য ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আবার চালু করা যায়।

এদিকে,অস্বস্তিকর গরমে যশোরের মানুষ গত ৩/৪ দিন বেশি করে ছুটেছেন বৈদ্যুতিক ফ্যানের দোকানে। সেখানে প্রায় সবারই চাহিদা চার্জার ফ্যানের। বাজারে একেবারে ছোট হ্যান্ড চার্জার ফ্যান থেকে শুরু করে মাঝারি আকারের চার্জার ফ্যান ছিল। কিন্তু গত ৩/৪ দিনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল যশোর মাইকপট্টির দোকানগুলোতে বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, তখন লোড শেডিং চলছে কিন্তু ফ্যান বিক্রির প্রতিটি দোকানে চার্জার ফ্যান কেনার খরিদ্দারে পা ফেলানোর সুযোগ নেই। দোকানদাররা খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ সব ক্রেতাদের বেশিরভাগ ছিলেন নারী ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল-মেসে থাকা ছাত্রী। বেশিরভাগ দোকানে সাধারণ মানের চার্জার ফ্যান ছিল না, কয়েকটি দোকানে হ্যান্ড চার্জার ফ্যান ছিল।

একজন দোকান দার স্পষ্টই জানালেন, ঢাকা থেকে নতুন মালামাল না আনা পর্যন্ত চার্জার ফ্যান দেওয়া যাবে না। তিনি জানান, ভালো মানের ফ্যান না থাকায় লোকে হ্যান্ড চার্জার ফ্যান কিনছেন। তিনি জানান, গত ৩ দিনে তিনি ৪ শতাধিক এই ফ্যান বিক্রি করেছেন। আগে ২২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন প্রায় সব দোকান ২৫০ থেকে ৩শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। একজন ক্রেতা জানান, গত বছর ছোট আকারের যে চার্জার ফ্যান সাড়ে ৫শ টাকা ছিল, এবার তা কোনো কোনো দোকানে সাড়ে ১৭শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের চার্জার ফ্যান আগে ১৫শ টাকায় বিক্রি হতো গত কয়েক দিন সেগুলি দোকান ভেদে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। দাম বেশি নিলেও থেমে থাকছে না বিক্রি বলে জানান দোকানদাররা।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এমএম কলেজ হোস্টেলের কয়েকজন ছাত্রী এবং কয়েকজন গৃহীনীর সাথে ফ্যানের দোকানে কথা হলে তারা জানান, হোস্টেল বা হল যেখানেই থাকেন না কোনো, রাতে গরমে একেবারে ঘুমাতে পারছেন না। লোড শেডিংয়ের কারণে মধ্যরাতে গরমে আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে। তাই চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছিলেন, কিন্তু সুবিধামতো পাওয়া যাচ্ছে না, তাই হ্যান্ড চার্জার ফ্যান নিতে বাধ্য হলাম, এতে মুখমণ্ডলে একটু বাতাসের ঝাপটা দেওয়া যাবে।

তবে গৃহীনীরা বললেন, আরও ভয়াবহ কথা, বাসায় এসি থাকলেও সেটিতো আর সব সময় চলছে না, লোড শেডিং চলে, কিন্তু ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা গরমে ছটফট করে, হাতপাখা দীর্ঘক্ষণ টানা কষ্টদায়ক। ফলে বাধ্য হয়েই, হ্যান্ড চার্জার ফ্যান কিনতে হচ্ছে, কারণ চার্জার ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। দু একটা যা পাওয়া যাচ্ছে তার দামও খুব বেশি। দুজন নারী জোর দিয়েই বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি শুরু হবে লোড শেডিং কমবে তখন এতটা সমস্যা হবে না। কিন্তু আগামী ৫-১০ দিন গরমের এই তীব্রতা সহ্য করায় অনেক যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠছে। শহর ও উপশহর এলাকার কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, গরমে তাদের ক্লাসে বসতে খুব সমস্যা হচ্ছে। ঘরের মধ্যে ফ্যান না চললে এই সময় অসহ্য হয়ে উঠছে গরমের অবস্থা।