
প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়েছে। এসময় তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বেলা ১টা ৩০ মিনিটের দিকে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। বেলা ৩টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ বিষয় শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
রবিবার (৭ জুলাই) রাতে বিসিএসের প্রশ্নফাঁস নিয়ে পিএসসির বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফেসবুকে সৈয়দ আবেদ আলীর পোস্টগুলো ভাইরাল হতে থাকে। এ ঘটনায় সোমবার (৮ জুলাই) রাতে পুলিশ বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইনে এই মামলা করা হয়। মামলা নম্বর ১৫। মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ১৭ জনকে।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে আছেন, বিপিএসসির উপপরিচালক আবু জাফর, জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির, অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম, বিপিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক খলিলুর রহমান এবং আরেক সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। বাকিরা হলেন, নোমান সিদ্দিকী, আবু সোলায়মান মো. সোহেল, প্রিয়নাথ রায়, জাহিদুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন, মামুনুর রশীদ, নিয়ামুল হাসান, সাখাওয়াত হোসেন, সায়েম হোসেন ও লিটন সরকার।
সিআইডি জানিয়েছে, এ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নের নমুনা পাওয়া গেছে। কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষার ফাঁস করা প্রশ্নের নমুনাও জব্দ করা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত আছে আরও একাধিক রাঘববোয়াল। তাদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলছে। নেপথ্যে থাকা বিপিএসসি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সেক্টরের একাধিক ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। চক্রটি শুধু নিয়োগ পরীক্ষা নয়, বিএসএস পরীক্ষারও প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত।
অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ((অর্গানাইজড ক্রাইম) জুয়েল চাকমা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গত ডিসেম্বরে সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদে সাড়ে ৩ হাজার নিয়োগের বিপরীতে পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষার আগেই চক্রটি প্রশ্ন ফাঁস করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রত্যেক প্রার্থীর বিপরীতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা চুক্তি করেছিল প্রশ্ন ফাঁসসহ চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিপরীতে। নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ছাড়াও ভাইভা বোর্ডে (মৌখিক পরীক্ষা) পাস করে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে চক্রটি প্রশ্ন বিক্রি করেছে প্রার্থীদের কাছে।
তিনি জানান, গত ৫ জুলাই রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১১টি পদের বিপরীতে প্রার্থী নেওয়ার কথা ৫১৬ জন। সহকারী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পদে এসব প্রার্থীদের বিপরীতে পরীক্ষার্থী ছিল কয়েক হাজার। চক্রটি টার্গেট করা প্রার্থীদের প্রত্যেকের সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা করে চুক্তি করে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে। নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ফাঁস করে প্রার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়। মৌখিক পরীক্ষায়ও পাস করে দেওয়ার দায়িত্ব নেয় চক্রটি। প্রশ্ন বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।
সূত্র-প্রতিদিনের বাংলাদেশ