প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ২:৫৩ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ১২, ২০২৪, ১০:০৪ পি.এম
কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য ভালো নেই, অতিষ্ঠ রোগীরা

ফ্যাসিস্টদের সময় বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঢাকা সন্নিকটের উপজেলা কেরানীগঞ্জ স্বাস্থ্য সেবার বারোটা বাজিয়েছে। দরিদ্র রোগীরা পড়েছে বিপাকে । টাকা নাই, চিকিৎসা নাই। সকালে অপারেশন হবে , দুপুরের পর টাকা দিয়ে অপারেশন করতে হবে।এই উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য ভালো নেই । বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম আর দুর্নীতি বাসা বেধেছে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে । আওয়ামী লীগের সময় বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি হয়ে পড়েছিল জুলুমের একটি কারখানা। সাধারণ রোগীরা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নিতে হয় অর্থের বিনিময়ে। দরিদ্র অসহায় সাধারণ মানুষ অর্থ যোগদান করতে হিমশিম খেলে তাদেরকেও লাঞ্ছনা-বঞ্চনা শিকার হতে হয়েছে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই আধুনিক হাসপাতালটি সুন্দর বিল্ডিং এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। সকালে আউটডোরে তেমন রোগী দেখা হলেও দুপুরের পরে হয় অর্থনৈতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র। রোগীদেরকে গুনতে হয় অপারেশনের জন্য মোটা অংকের টাকা। টাকা না দিলে বিভিন্ন হাসপাতাল ও মিরপুর হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয় হাসপাতালে কর্মকর্তারা। এ যেন ওপেন সিক্রেট। আওয়ামী লীগের সময় সাধারণ মানুষকে জিম্মি করেছে একশ্রেণীর দালাল। এই দালালরা নিজেদেরকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে হাসপাতালের সামনেই অবস্থান করত। রোগী ভাগিয়ে নেওয়া ও জরুরী রোগীদের কে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নামে হাতিয়া নেওয়া হতো হাজার হাজার টাকা। যারা টাকা যোগাড় করতে পারতেন না ,তাদেরকে বের করে দিয়ে মিডফোর্ড হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবাই মিলে অপারেশনের বিভিন্ন মূল্যের টাকা গুলো একত্রিত করে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে খেয়ে আসছে। তারা বলছেন সরকারিভাবে বিকেলে অর্থাৎ বৈকালিক চিকিৎসা সেবার জন্য তারা এই অর্থ নিয়েছেন। কিন্তু এই অর্থ সরকারি কোন কোষাগারে জমা হয়নি। সকালে যে রোগীগুলোর অপারেশন করার কথা থাকতো সেই রোগীগুলোকে তালবাহানা করে বিকেলে অপারেশনের জন্য দালালদের মাধ্যমে বলা হতো। আওয়ামী দু শাসনের সময় কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রায় ৫০ জন নারী পুরুষ দালাল নিয়মিত রোগীদের সাথে দর কষাকষি করতো।
এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার জন্য হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মকর্তা উপস্থিতি নেই। তিনি নিজেই রোগী হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন অন্য হাসপাতালে। অর্থাৎ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারই স্বাস্থ্য বর্তমান ভালো নেই। তদারকি করার লোকের অভাব । এদিকে হাসপাতালের আরএমও নিয়মিত অফিস করছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে ওই অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে । অফিসের পিয়ন ,ওয়ার্ড বয় , নার্স সহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা একরকম অসহায় হয়ে পড়েছেন এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতে গিয়ে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই আধুনিক হাসপাতালটি বুড়িগঙ্গা পাড়ের কেরানীগঞ্জের ওপাড়ে উপজেলা প্রশাসনের পাশেই অবস্থিত। কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী বিভাগ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে । এখানকার সঙ্ঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের সদস্যরা রোগীদেরকে বেসরকারি প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠানো, বাইরে থেকে ঔষধ ক্রয় করা সহ বিভিন্ন অর্থ আদায় বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া হাসপাতালে আওয়ামী লীগের সময় একতরফাভাবে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন সহ রোগীদের সাথে জুলুম নির্যাতন ও হেনস্থা করার ঘটনাও ঘটেছে প্রতিনিয়ত।
কেরানীগঞ্জ উপজেলার গর্ভবতী মায়েদের সিজার করা নিয়ে অনিয়মের শেষ নেই। যারা টাকা দিতে সামর্থ্য রয়েছে তাদেরকে প্রাধান্য দিয়ে সিজার করে এই হাসপাতালে। সাধারণ গরিব রোগীরা টাকা যোগাড় করতে না পারলে তাদেরকে বিভিন্ন কৌশলে ঢাকার সলিমুল্লাহ মিডফোর্ড হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিজার করতে আসা গর্ভবতী মা ও তার স্বজনদের নানা অসুবিধার কথা বলেছেন আঞ্জুমান আরা, আরজু বেগম, সুলতানা বেগম , ঊষা রানী মন্ডল, মায়া রানী,নুরুন্নাহার, রাফিজা সুলতানা, ময়ফল বেগম সহ বিভিন্ন নারীরা। এছাড়া তাদের আরো অভিযোগ করেছেন রোগীদের অভিভাবক আব্দুর রশিদ, করিম, জয়নাল, শহীদ মিয়া, সরকার , মস্তান ,রমজান , শৈলেন বিশ্বাস, রতন কুমার, প্রবীর কুমার সহ এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তি। কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী এলাকার গর্ভবতী স্মৃতি আক্তার জানান, তাকে গত ২৪ অক্টোবর কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গাইনি কনসালটেন্ট ডাক্তার রা রাশিদা আফরোজ পারভীনের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়। এরপর ওই হাসপাতালে সিজারের জন্য ৩৫০০ টাকা জমা নেওয়া হয়। দরিদ্র এই পরিবারটি এই টাকার ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে, ডাক্তারের সাথে থাকা অন্যান্য ব্যক্তিও তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন এবং বলেন টাকা না দিলে সিজার করা সম্ভব না। অন্যথায় দরিদ্র এই পরিবারটি বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ধার করে টাকা নিয়ে হাসপাতালে জমা দিলে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর ঔষধের বিষয়ে হাসপাতালের সহযোগিতা চাইলে তারা অপারগতা প্রকাশ করেন । পরে বাধ্য হয়েই এই দরিদ্র পরিবারের লোকজন বাহির থেকে ওষুধ নিয়ে রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
এছাড়া এই হাসপাতালের দালাল ও সিন্ডিকেটরা রোগীদের বিভিন্ন কৌশল করে সরকারি হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে দেন। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে দালালদের রয়েছে কমিশন বাণিজ্য । বেসরকারি হাসপাতাল গুলো নিয়ে বিপদে পড়া এই রোগীগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে এবং রোগের কথা বলে মোটা অংকের টাকা দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে দেন দরবার করে তাদেরকে অপারেশন সহ চিকিৎসা দেয়া হয় মোটা অংকের বিনিময়ে।
এদিকে এই হাসপাতালের অফিস সহকারীরা বলছেন, জনবল স্বল্পতার কারণে তারা রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। এই ধরনের কথা সাধারণ রোগীরা শোনার পরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে । তারা বলেন এই হাসপাতালে সাবেক আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে বিভিন্ন অন্যায় অপকর্ম হয়েছে।
এই হাসপাতালের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা বলছেন আওয়ামী লীগের সময় ডাক্তারদের বিকেলে রোগী দেখার জন্য ফি নেওয়ার জন্য বিধান ছিল। কিন্তু ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, সরকারি হাসপাতালে সিজারের জন্য কোন বাধা ধরা সময় নির্ধারণ করে দেওয়া নেই। সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ২৪ ঘন্টার সেবা পাবে। সকালে দুপুরে বা বিকেলে নয় সব সময় রোগীদের অপারেশনের কর্তব্য দায়িত্ব পালন করবে ডাক্তাররা।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে যে সকল ঔষধ সাপ্লাই নেই ,সেই ঔষধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। এছাড়া দরিদ্র রোগীদের ক্ষেত্রে হাসপাতালের সমাজসেবার মাধ্যমে রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়। তিনি এই হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্রয় দিয়েছেন। এদিকে আসার যমিনে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক গিয়ে দেখা যায়, অনেক ডাক্তারি আজ দুপুরে উপস্থিত ছিলেন না। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও নিজের শারীরিক অসুস্থতার জন্য ছুটিতে রয়েছেন। আর এম ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার কেউ হাসপাতালে গিয়ে পাওয়া যায়নি। মূলত অফিস সময় গুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই হাসপাতালে উপস্থিতি আটকে রয়েছে । এদিকে হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন কর্মী ও অসুস্থ রয়েছে । তাহলে সাধারণ পাঠকরা বুঝতেই পারছেন এই হাসপাতালের কি বেহাল দশা। এত বড় একটি হাসপাতালে প্রায় পাঁচ দিন হলো ডেঙ্গু রোগী হওয়ার কারণে হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন কর্মী ছুটিতে রয়েছেন। আর হাসপাতালটি পরিচ্ছন্ন করবে কে। প্রতিদিন জমছে ময়লা আর আবর্জনা । তাই এলাকাবাসী কেরানীগঞ্জের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য ভালো করার লক্ষ্যে এই হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের বদলিসহ নতুন ভাবে এই হাসপাতালটি কার্যক্রম দ্রুততার সাথে এবং রোগী বন্ধক হাসপাতাল গড়ে তোলার লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সহ প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho