
রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। এতে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ছে অন্য অনেক দেশ। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে ‘বৈশ্বিক’ যুদ্ধের বৈশিষ্ট্য দেখছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দরকার হলে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোতেও হামলা চালাতে পিছপা হবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
পশ্চিমাদের দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে গত মঙ্গল ও বুধবার রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালায় ইউক্রেন। তার পাল্টা জবাবে গতকাল বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের নিপ্রো এলাকায় নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় রাশিয়া। প্রথমে একে আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) মনে করা হলেও পরে মস্কো জানিয়েছে, সেটি নতুন প্রজন্মের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। এই ক্ষেপণাস্ত্রও আইসিবিএমের মতো পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে বলে জানিয়েছেন পুতিন।
রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলার অনুমতি দিলে তার পরিণতি ভালো হবে না বলে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। তার কথায় পাত্তা না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা আরও বাড়ানোর পথ বেছে নেওয়ার পর এবার সরাসরি পশ্চিমে হামলার সম্ভাবনা নাকচ না করার কথা জানালেন তিনি।
৩৩ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ সামরিক সহায়তা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দেওয়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আঘাত হানার আগেই রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সেগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুতিন। গতকাল তিনি বলেন, শত্রুরা যা লক্ষ্য করেছিল, তা অর্জন করতে পারেনি। আর রাশিয়ার ওপর হামলা চালাতে যেসব দেশ তাদের অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, ওই দেশগুলোর সামরিক স্থাপনায় হামলার বিষয়টিও বিবেচনা করতে পারে মস্কো।
পুতিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম ‘ওরেশনিক’। এটি মধ্যপাল্লার একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ভাষ্যমতে, সেটি ছিল মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার নিপ্রো শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর নড়েচড়ে বসেছে কিয়েভের মিত্ররা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে এ হামলার তীব্র সমালোচনা করেছে। এবার ওই হামলা নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে ন্যাটো। আগামী মঙ্গলবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা গুরুত্ববহ নয় বলে মনে করেন ন্যাটোর একজন মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, ‘এ ধরনের সক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্রের ব্যবহার যুদ্ধের গতিপথ বদলে দেবে না। আর ইউক্রেনকে ন্যাটো যে সমর্থন দিচ্ছে, তাতেও কোনো বাধা আসবে না।’
এদিকে যুক্তরাজ্যের অনুমতির পরই বুধবার দেশটির তৈরি দূরপাল্লার ‘স্টর্ম শ্যাডো’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেন রাশিয়ায় হামলা চালিয়েছে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যে রুশ রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কেলিন স্কাই নিউজকে বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে ‘সরাসরি জড়াল’ যুক্তরাজ্য।
আসন্ন শীত মৌসুমকে সামনে রেখে সপ্তাহ দুয়েক ধরে ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছিল রাশিয়া। যুদ্ধে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলেও বড় অগ্রগতি পাচ্ছে দেশটি। সেখানকার বেশ কয়েকটি গ্রাম দখলের দাবিও করেছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন করে তারা দোনেৎস্ক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ দালনে গ্রাম দখলে নিয়েছে।
দালনে গ্রাম দখলের বিষয়টি স্বীকার করেনি ইউক্রেন। তবে বৃহস্পতিবার দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের সাতটি গ্রামে ইউক্রেন বাহিনীর প্রতিরোধব্যূহ ভেঙে দিতে ২৬ বার চেষ্টা চালিয়েছে রাশিয়া। ওই গ্রামগুলোর একটি দালনে। এখন গ্রামটির ১০ থেকে ১৬ স্থানে সশস্ত্র সংঘাত চলছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। প্রথমে তাদের লক্ষ্য ছিল দ্রুত রাজধানী কিয়েভ দখল করে নেওয়া। তবে ব্যর্থ হয়ে পরে মূলত পূর্বাঞ্চলের দনবাস দখলে মন দেয় তারা। দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে দনবাস অঞ্চল গঠিত। এই অঞ্চলে গত দুই মাসে বড় অগ্রগতি পেয়েছে রুশ বাহিনী। এই অঞ্চলসহ ইউক্রেনের ২০ শতাংশ ভূখণ্ড এখন রাশিয়ার দখলে।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার অগ্রগতিকে এগিয়ে নেওয়ার অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার সুমি শহরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এক বিবৃতিতে আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,ভোর ৫টার দিকে চালানো ওই হামলায় সুমির বেশ কয়েকটি ভবন ও তিনটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ জন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho