প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ১২:১১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ৩, ২০২৪, ১২:০৪ পি.এম
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস সমিতি

দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা ব্যুরো।।
ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ তৈরি পোশাকের পাইকারি মার্কেট। এই এলাকার তৈরি পোশাক দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার পোশাক তৈরি করে থাকে এই এলাকার কারিগররা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই এলাকায় মানুষ কর্মব্যস্ত সময় পার করে তাদের কর্মের মাধ্যমে। কর্মযজ্ঞ এই ব্যস্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড।
এই সমিতি একটি ঐতিহ্যবাহী সমিতি। এলাকার সুখ দুঃখ নিয়েই এদের জীবন গড়ে উঠেছে।
এলাকার ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এবং শৃঙ্খলা বদ্ধ ভাবে ব্যবসা পরিচালনা লক্ষ্যে এই সমিতি গড়ে উঠেছে। কেরানীগঞ্জের এই ঐতিহ্যবাহী দোকান মালিক সমিতি আজ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ছে। অযোগ্য ব্যক্তিরা যোগ্য নেতৃত্বকে মেনে নিতে না পারার কারণেই তাদের এই হিংসার কারণ বলে জানিয়েছে এলাকার ব্যবসায়ীরা।
পথ বঞ্চিত হিংসুক এই রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা নানাভাবে সমিতিটির কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। চাঁদাবাজ, লুটেরা এবং দখলবাজ নামে পরিচিত কতিপয় রাজনৈতিক নেতার নির্দেশে আজ এই অবস্থা শুরু হয়েছে।
অবস্থা দেখে মনে হয় যারা আওয়ামী লীগের সময় এলাকায় কর্তৃত্ব নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকে ছায়ার মতো আগলে রাখছে কেরানীগঞ্জের বৃহত্তর ও রাজনৈতিক দল বিএনপির কতিপয় অসাধু নেতৃবৃন্দ । সম্প্রতি এই এলাকায় নতুনভাবে সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা ধরনের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা । কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে কান ভারী করা যাদের মূল কাজ । যারা এলাকায় নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা রাখে না তারাই এই ধরনের কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে । দেশবাসীর অবগতির জন্য কিছু কথা এখানে না বললেই নয়, কেরানীগঞ্জের এই ঐতিহ্যবাহী এলাকাটি দেশ-বিদেশে সব জায়গায় পরিচিতি পেয়েছে গার্মেন্টস শিল্পের কারণে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পোশাক তৈরি করা হয় কেরানীগঞ্জে । দেশের চাহিদার ৮০ শতাংশ পোশাক তৈরি করা হয় কেরানীগঞ্জের কালিগঞ্জ আগানগর এলাকায় । বৃহত্তম এই এলাকাটির স্বনামধন্য সমিতি রাজনীতির নজরে আসার কারণেই হিংসার আগুন জ্বলে উঠেছে নিজেদের মধ্যে । সাধারণ মানুষ জাকে যোগ্য হিসেবে সভাপতি মেনে এলাকার কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছেন তাদের বিরুদ্ধে একশ্রেণীর ক্ষমতালোভী, চাঁদাবাজ , লুটেরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে । চাঁদাবাজ আর লুটপাটে বাঁধা দেওয়ায় আজ পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সংগঠনের নতুন নেতৃবৃন্দ ।
দীর্ঘদিন যাবত চড়াই-উৎরায় এবং জুলুম নির্যাতন সহ্য করে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি তিল তিল করে এলাকার ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে এবং নিরাপত্তা বিধানে কাজ করে আসার পরও একটি কুচক্রী মহল নিজেদের খায়েস পূরণ করার জন্য বিএনপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মিথ্যা প্রপাগান্ডা প্রচার করে সমিতির সুনামকে নষ্ট করছে । এলাকায় রাজনৈতিক সংঘাতের পায়তারা করছে। সমবায় সমিতির আইন মেনেই পরিচালিত হচ্ছে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড।
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাইকারী, দখলবাজ সহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে এই সমিতির নেতৃবৃন্দ কে প্রতিনিয়ত । বিশাল এই এলাকার কর্মযজ্ঞ পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই এখনো পর্যন্ত এই এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রয়েছে। লুটপাট, ছিনতাই ,চাঁদাবাজি যারা আশ্রয় দেয় তারা পড়েছে বিপাকে । এই সমিতি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। নিজেদের সামগ্রিক কল্যাণে এই সংগঠন গড়ে তুলেছেন ব্যবসায়ীরা । কালের পরিক্রমায় সংগঠনটি এলাকায় একটি বড় সংগঠনের পরিণত হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এলাকার রাজনীতিবিদদের নজরে আসে এই সংগঠনটি। ধীরে ধীরে বিভিন্ন সময় সমিতির নেতৃত্বে তাদের সমর্থিত ব্যক্তিদের দেওয়ার চেষ্টা করে। বিএনপি সমর্থিত ব্যক্তিরা অতীতে নেতৃত্বে ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারা নির্বাচন না দিয়ে রাজনৈতিকভাবে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মতের তোয়াক্কা না করে তাদের মনোনীত ব্যক্তিকে এই ঐতিহ্যবাহী সমিতি পরিচালনার দায়িত্বভার তুলে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের সময় সাধারণ ব্যবসায়ীরা বিচারের নামে নির্যাতন আর জুলুমের শিকার হয়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নির্যাতনের কারণে ব্যবসা বন্ধ করে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলে এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন এই প্রতিনিধিকে। এভাবেই কেটে গেছে জুলুমের ১৬ টি বছর । ক্ষমতার দাপটে অন্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইচ্ছেমতো মতের বিরুদ্ধে যারা রাজনীতি করেছে তাদেরকে জুলুম নির্যাতন করে সর্বশ্রান্ত করেছে আওয়ামী লীগের নেতারা ।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ নতুন করে স্বাধীন হওয়ার পর কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিঃ নেতৃত্বে আসে কেরানীগঞ্জের সাবেক সভাপতি হাজী আনোয়ার হোসেনের কমিটির নেতৃত্ব । এলাকাবাসী এই দুঃসময়ের কান্ডারী হিসেবে এলাকার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী ও ব্যবসায়ী হাজী আনোয়ার হোসেনকে ঐতিহ্যবাহী কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি করে সমিতিটির হাল ধরার অনুরোধ করলে, তিনি তার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন । নেতৃত্ব গ্রহণের সাথে সাথেই এলাকায় বিএনপি সমর্থিত এবং অন্যান্য সকল রাজনীতি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদেরকে স্বাগত জানান এবং সুষ্ঠুভাবে এই সমিতি পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করেন। তারই প্রেক্ষিতে হাজী আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড।
জনগণের আকাঙ্ক্ষার কারণে দায়িত্ব নেওয়া কাল হয়ে দাঁড়ায় হাজী আনোয়ারের । তিনি প্রতিদিনই এলাকায় চাঁদাবাজ লুটপাট ছিনতাই ও দখলবাজ বন্ধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করলে একশ্রেণীর সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগী বিএনপির নেতা কর্মীরা অতিষ্ট হয়ে পড়েন । শুরু হয় হাজী আনোয়ারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার । গুরুত্বপূর্ণ এ গার্মেন্টস এলাকাটি ধীরে ধীরে অশান্ত হয়ে উঠলো । শুধু ক্ষমতার লোভ আর পদের লোভ এই দুই কারণেই এই এলাকায় নিজেদের মধ্যেই শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত । দ্বন্দ্ব সংঘাতের মধ্যে ফায়দা লুটছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতাকর্মী ও দোকানদাররা । তারা এই সমিতির প্রতিবাদের পক্ষে না থেকে বিপক্ষে থেকে কলকাঠি নাড়ছে । তিন মাস না যেতেই অন্যের কান কোথায়, এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা না করেই এই বৃহৎ সমিতির নেতৃত্বের ছন্দপতন হচ্ছে । রাজনৈতিকভাবে এই সমিতিকে পরিচালনা করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে চেষ্টা করা হলেও সাধারণ ব্যবসায়রা তা মানছেন না । শারেজমিনে এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, অরাজনৈতিক এই সংগঠনটি পরিচালিত হয় সমবায় সমিতির আইন ও নীতি মেনে। রাজনৈতিকভাবে কেউ কাউকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা বা পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেওয়ার অধিকার রাখেন না । সমিতির পদ পদবী কোন রাজনৈতিক পথ পদবী নয় । তাই এই ধরনের কর্মকান্ডের কারণে ঐতিহ্যবাহী কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির নেতৃত্বের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরছে ক্ষমতার লোভী একশ্রেণীর নেতাকর্মীরা।
সাধারণ ব্যবসায়ী বৃন্দ, ও সমিতির সদস্য বৃন্দ সবাই ঐক্যমতের ভিত্তিতে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি হিসেবে হাজী আনোয়ার হোসেনকে মেনে নিয়েছেন । ব্যবসায়ীরা জানান, আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এই সংগঠনটি পরিচালিত হওয়ার কারণেই এলাকায় চাঁদাবাজ সন্ত্রাস ও দখলবাজ মুক্ত হয়েছে এলাকার ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় । এলাকার রাস্তাঘাট গুলোর ফুটপাতের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে । ছিনতাই চুরি ডাকাতি কমেছে । এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীরা আরো বলেছেন, দক্ষ ও অভিজ্ঞ এবং জনগণ সম্পৃক্ত নেতৃত্ব ছাড়া কখনোই এলাকায় সুষ্ঠু নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব নয় । একটি সংগঠনকে সংগঠিত করার জন্য যে সমস্ত নেতৃত্বের গুণাবলী প্রয়োজন রয়েছে সেই ধরনের ব্যক্তি ছাড়া এ এলাকায় অন্য কোন নেতৃত্ব আসলে সাধারণ ব্যবসায়রা চরম ক্ষতি স্বীকার হবেন।
একটি মহল আরো জানিয়েছেন, ফ্যাসিস্টদের অনুসারী কতিপয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত ব্যক্তিরা বিএনপিকে বিভক্ত করার জন্য নিজেদের মধ্যে বিভাগ সৃষ্টির লক্ষ্যে তারা ছায়ার মত কলকাঠি নাড়ছেন। এবং বিভিন্ন সময় সকল ধরনের সহযোগিতা করছেন । তাই এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীরা এলাকার ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ রক্ষায় কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস এলাকাকে শান্তিপূর্ণ ও ব্যবসা বান্ধব এলাকা হিসেবে পরিচিতির জন্য বর্তমান এই কমিটির মাধ্যমেই পরিচালিত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন । এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীরা ও সকল শ্রেণীর মানুষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা শাখার সভাপতি নিপুন রায় চৌধুরীর নিকট এই এলাকার ব্যবসায়ীদের বিষয়টি অনুধাবন করার জন্য অনুরোধ করেছেন । এলাকার ব্যবসায়ীরা এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, এলাকায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে যেমন, তেমনি ভাবে সাংগঠনিক পদ লোভী নেতাদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব রয়েছে, কিন্তু ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নেই । ব্যবসায়ীরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে চায়।
পদ পদবী ও ক্ষমতালোভী চাটুকার, তেলবাজ যদি এই এলাকার ব্যবসায়িক নেতৃত্বে আসে, তাহলে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছে এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho