
মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে বৃষ্টি হলেই কদর বাড়ে ছাতা কারিগরদের। বছরের অন্য সময়ে ছাতা মেরামতের কাজ না থাকলেও বর্ষার মৌসুমে পুরো দস্তুর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। তবে এখন বর্ষা না চল্লেও বর্ষা সমাগত। বর্ষার দুই মাস হলো আষাঢ় আর শ্রাবণ মাস সমাগত। গত কয়েকদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নি¤œচাপের প্রভাবে অব্যাহত বৃষ্টির প্রভাবে ছাতা তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কার ছাতা কে আগে মেরামত করে নেবেন তার জন্য শুরু হয় প্রতিযোগিতা। পঞ্জিকার পাতা অনুযায়ী আর মাত্র ১৫ দিন বাকী বর্ষাকালের। প্রতিদিনই চলছে রোদ আর বৃষ্টির খেলা। উপজেলায় ছাতা তৈরির কারিগর আছেন প্রায় ডজনখানেক। তাঁরা অন্যের দোকানের সামনে ফুটপাতে বসে কাজ করে থাকেন। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ ছাতা কারিগরেরা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে ছাতা মেরামত করেন। প্রতিদিন ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে থাকেন একেকজন কারিগর। তাঁরা বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করেন কিন্তু ব্যবহারকারীদের ভিজতে দেন না। সারিয়ে তোলেন ছাতার সমস্যা। আর বিনিময়ে পাওয়া অর্থ দিয়ে চালান সংসার।
জানা গেছে, আগেই থেকেই এই উপজেলায় ছাতা মেরামতের কোনো কারিগর ছিল। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাতা মেরামত করতে এই এলাকায় আসতেন ছাতার কারিগররা। জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ দিকে এসে আশ্বিন মাসের শেষ দিকে তারা চলে যেতেন। বেশিরভাগ মাদারীপুর, চাঁদপুর, ফরিদপুর ও বিক্রমপুর থেকে আসতেন ছাতার কারিগররা। তারা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে ফুটো কিংবা ভাঙা ছাতা মেরামত করতেন। ছাতার কারিগরদের সারা বছর কদর না থাকলেও বর্ষা মৌসুমে তাদের বেশ চাহিদা থাকে। বর্ষা এলেই কদর বৃদ্ধি পায় তাদের।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলা সদরের ছেংগারচর পৌর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ছাতা মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগর স্বপন ও মুহিন। তারা উভয়ই জানান, বর্তমানে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। ফলে ছাতার কাপড়, হাতল, স্প্রিং প্রভৃৃতি জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। সরবরাহও কম রয়েছে। সারা বছর ধরতে গেলে তাঁদের বসেই থাকতে হয়। তবে এই সময়টাতে তাঁদের কাজের চাপ বাড়ে।
উপজেলার ছেংগারচর বাজারে থানা রোড চত্বরে ছাতা মেরামতকারী উপজেলার বদপুর গ্রামের মোঃ মোঃ মুহিন জানান, বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে কাজের চাপ একটু বেশি। বৃষ্টির সময় ছাড়া ছাতা মেরামতের কাজ থাকে না। এসময় তাদের আয় মোটামুটি ভালো হলেও অন্য সময় বেকার বসে থাকতে হয়।
তিনি আরও জানান, যেদিন বৃষ্টি হয় সেদিন ছাতা মেরামতের কাজ হয়ে থাকে। বাকি দিনগুলোতে অন্য কাজ করে থাকি। তার ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করে। তাদের খরচসহ পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। এ পেশায় তাদের পরে আর কেউ আসবে না বলেও জানান তিনি।
ছাতা মেরামতকারী উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের বেলতলি গ্রামের মোঃ স্বপন বলেন, বর্তমানে ছাতা মেরামত করে আয় সামান্য হয়। ছাতার সিক লাগাই। কাপড় সেট করি। প্রতিদিন ছাতা মেরামত করে দৈনিক ২০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এ টাকায় আমার সংসার চলে না। কিন্তু পূর্ব পুরুষের এ পেশা ছাড়তেও পারি না।
ছাতা মেরামতকারীদের দুরবস্থার কারণ হিসেবে জানা গেছে, বর্তমানে ১৫০-২৫০ টাকায় ছাতা পাওয়া যায়। দাম কম হওয়ায় ছাতা নষ্ট হয়ে গেলে অনেকেই আর মেরামত করেন না। তারা আবার নতুন ছাতা কিনে নেন। আগে কাঠের হাতলওয়ালা ছাতার প্রচলন ছিল। গ্রামের লোকেরা কাঠের হাতলের ছাতা ব্যবহার করতেন। সেই ছাতাও তৈরি হতো। কিন্তু এখন আর সেইদিন নেই। ছাতার বাজার চায়না ও ভারতের দখলে গেছে। তাই কাঠের ছাতার কারিগরদের দুর্দিন চলছে।
উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার ঠাকুরচর এলাকা থেকে ছাতা মেরামত করাতে এসেছিলেন হারুন অল-রশিদ। তিনি বলেন, ‘দুটি ছাতা নষ্ট হয়ে ঘরে পড়েছিল। বৃষ্টির সময় ছাতার দরকার হয়। তাই সারাতে এসেছি। দুটি ছাতা সারাতে কারিগরকে ৮০ টাকা দিয়েছি। নতুন ছাতা কিনতে গেলে আরও অনেক খরচ।’
উপজেলার আদুরভিটি এলাকার গৃহিণী উম্মে সালমা বলেন, আমার স্বামী একজন বেসরকারি চাকুরীজীবী। আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। ছেলে-মেয়েরা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। এখন বৃষ্টির সময়। তাই প্রাইভেট পড়তে গেলে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। ছেলেমেয়েদের জন্য ঘরে থাকা দুইটা নষ্ট ছাতা মেরামত করতে বাজারে নিয়ে এসেছি।
এদিকে উপজেলায় ছাতার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। ছেংগারচর বাজারের খান ভ্যারাইটিজ স্টোরের মালিক আঃ মান্নান খান বলেন, ‘আমাদের এখানে খুচরা ও পাইকারি ছাতা বিক্রি হয়। বর্তমানে ফোল্ডিং ছাতার চাহিদা বেশি। যা চীন থেকে আমদানি করা হয়। ভাঁজহীন দেশি ছাতা ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং দেশি-বিদেশি দুই ভাঁজের ছাতা ২৫০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho