
তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় চা শ্রমিকদের জন্য সরকার কর্তৃক জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পটির আওতায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে জনপ্রতি ৬ হাজার টাকা করে বিকাশের মাধ্যমে ৭ হাজার চা শ্রমিকের মাঝে অর্থ বিতরণ করার কথা হলেও অনেক প্রকৃত শ্রমিক এই সহায়তা পাননি, বরং একাধিক ক্ষেত্রে এক পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে টাকা উত্তোলনের ঘটনা সামনে উঠে এসেছে।
জানা গেছে, উপজেলার ২২টি চা বাগানের পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও বিকাশ নম্বর সংগ্রহ করে সমাজসেবা অফিসে তালিকা জমা দেন। তবে অভিযোগ উঠেছে, ওই তালিকায় অনেকেই তাদের পরিবারের স্বামী, স্ত্রী, সন্তান, এমনকি আত্মীয়স্বজনদের নাম সযুক্ত করেছেন। আবার প্রকৃত অনেক শ্রমিকের নাম ও বিকাশ নম্বর তালিকায় থাকা সত্ত্বেও তারা কোনো টাকা এখন ও পাননি।
শ্রমিকদের অভিযোগ, তালিকায় থাকা সত্ত্বেও অনেকের বিকাশ নম্বর পরিবর্তন করে অন্যদের নম্বরে টাকা পাঠানো হয়েছে। এমনকি এক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ব্যবহার করে পঞ্চায়েত নেতার ছেলের বিকাশে টাকা পাঠানোরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অনিয়মের প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ চা শ্রমিকরা রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। একই দিন শমশেরনগর বাগানের নারী শ্রমিক সবিতা রেলী বাগানের নেতা গোপাল কানুর বিরুদ্ধে থানায় টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেন।
শ্রমিক গোপাল গোয়ালা, রিশু বাগতি, নিলু রাজভর, জগদীশ বাউরী, বাবুল রেলী জানান, ‘‘আমাদের ভোটার আইডি নিয়ে দুর্নীতি পরায়ণ কিছু নেতা টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমরা ইউএনও স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’’
শ্রমিক রামাকান্ত যাদব বলেন,“তালিকায় আমার নাম ও আইডি নম্বর থাকা সত্ত্বেও আমি টাকা পাইনি। বিকাশ নম্বর আমার নয়।’’ শ্রমিক পারতালি তেলেঙ্গা, দুলাল শীল, প্রিতী পালসহ আরও অনেকেই একই অভিযোগ তুলেন।
ভজনটিলার শ্রমিক শিমুল লোহার জানান, “আমার মোবাইলে অন্যের নামে টাকা আসে। পাশের বাড়ির জয়প্রকাশ রাজভর এসে টাকা তুলে এবং আমাকে ২ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা নিয়ে যায়।” ছবি লোহার বলেন, “আমার আইডির নামে ও টাকা ঢুকে নির্মল ছত্রির বিকাশে। পরে সে আমাকে ৪ হাজার টাকা দেয়।”
অনুসন্ধানের তথ্যনুসারে জানা যায়, উপকারভোগী তালিকায় শমশেরনগর চা বাগানের নেতা নির্মল দাস পাইনকা, তার স্ত্রী, মেয়ে, ভাইয়ের স্ত্রী ও কন্যাদের নাম রয়েছে।
একইভাবে পঞ্চায়েত সম্পাদক শ্রীকান্ত কানুর স্ত্রী, ভাই-বোন ও আত্মীয়দের নামও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
জবাবে শ্রীকান্ত কানু বলেন, “তালিকা অনেকে দিয়েছেন। যার নাম্বার তার নাম্বারে টাকা এসেছে। আমার পরিবারে দু’জনের নাম এসেছে, ভাইয়েরা আলাদা পরিবার।”
চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালী ইউনিয়ন কমিটির সম্পাদক নির্মল দাস বলেন, “আমি অসুস্থ ছিলাম, তাই তালিকায় নাম দেওয়া হয়েছে। আমি দুঃখিত।”
কমলগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইউসুফ মিয়া বলেন,‘‘অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন,‘‘এরকম ঘটনা ঘটতে পারে, সে কারণে আগেই সতর্ক করেছিলাম। সমাজসেবা অফিসারকে অবহিত করেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আস্বস্ত করেন।’’
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho