প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ১১:২৫ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১, ২০২৫, ৭:৪২ পি.এম
ক্ষেতলালে প্যানেল চেয়ারম্যানের স্ত্রী-আত্মীয়ের নামে ভিজিডি

ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট ভিডব্লিউবি (পূর্বের নাম ভিজিডি) কর্মসূচির আওতায় নিজের স্ত্রীর নামসহ ২ হালি আত্মীয়ের নাম তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও আত্মীদের বাইরে প্রায় প্রতিটি সুবিধাভোগী মহিলার কাছ থেকে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন অভিযুক্ত ওই ইউপি সদস্য। এমনকি ভিডাব্লিউবি চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হলে উদ্দোক্তার মাধ্যমে ইউনিয়নের প্রতিটি সুবিধাভোগীর কাছ থেকে ১ শত টাকা করে প্রায় ৪৪ হাজার টাকা আদায় করেন। পরে তা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম ভাগবাটোয়ারা করে নেন বলেও অভিযোগ আছে।
ভিডব্লিউবি কর্মসূচির দুস্থ নারীদের তালিকায় ৩নং প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের স্ত্রী এবং ২ হালি আত্মীয়ের নাম দেখে এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় অসহায় দুস্থ নারীদের প্রতি মাসে বিনা মূল্যে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কর্মসূচিতে অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়। এরপর ইউপি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ট্যাগ অফিসার ও ইউপি সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সরেজমিন যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়। উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় ইউনিয়নের প্রায় ১৮শত জন নারী আবেদন করেন। যাচাই-বাছাই শেষে ৪৪০ জনকে চূড়ান্ত করে যাচাই-বাছাই কমিটি।
চলতি বছরের ৩০ জুন ভিডব্লিউবি নারী বাছাই কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, সদস্যসচিব হিসেবে ইউনিয়নের সচিব, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও সর্বশেষ ইউএনও সই করে পুরো ইউনিয়নের ৪৪০ জনের চূড়ান্ত তালিকা করা হয়। এর মধ্যে ৫ নং ওয়ার্ডে ৫৩ জন। তবে এই ওয়ার্ডের তালিকায় প্রকৃত দুস্থ নারীদের বাদ দিয়ে ৩নং প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের সাথে যোগসাজশে নিজের স্ত্রী ও ২ হালি আত্মীয়ের নাম তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ ওঠে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই দুস্থ নয়। কারও কারও আবার ৬-৮ বিঘা জমি, পাকা বাড়ি, একাধিক পুকুর, একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দাবি অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম তার স্ত্রীসহ এক ডাক্তার ভাগনীর নামও অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। পরে অভিযোগ পাওয়ায় তদন্ত করে নাম দুটি বাদ দেওয়া হয়েছে। তাকে অফিসে ডেকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে।
তালিকা ঘেটে দেখা যায়, তালিকায় অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামের ভাবি, চাচি, মামি, খালাসহ ২ হালি আত্মীয়ের নাম তালিকায় ঢুকিয়েছে, যাদের অধিকাংশই সাবলম্বী। তালিকার ২১২ নং মাফুজা খাতুন ও ২৩০ নং সেলিনা খাতুন, এই দু'জন ইউপি সদস্য শফিকুলের আপন বড় ভাইয়ের দুই বউ (সতীন), ২১০ নং মোছাঃ খোতেজা মামি, ২১৪ নং রিমা বেগম চাচি, ২১৬ নং আলেয়া বেগম চাচি, ২১৭নং আমেনা বেগম চাচি, ১৮২ নং শেফালী বেগম খালা। বাকি ৪৬ জন মহিলার কাছ থেকেও বিভিন্ন জনের মাধ্যমে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে বলেও অভিযোগ আছে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে।
এনিয়ে বাঘাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর নুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শফিকুল মেম্বার একজন দুর্নীতিবাজ লোক। গরীব মানুষজনকে এসব সরকারি সুযোগ সুবিধা না দিয়ে নিজের আত্মীয় স্বজনকে দিচ্ছে। সে টাকা ছাড়া কারও কোনো কাজ করে দেয় না। এমনকি টাকা খেয়ে তিনি ওয়ারিশান থেকেও স্বজনের নাম বাদ দেয়। আমরা তার বিচার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপকারভোগী বলেন, আমার কার্ড করে দেওয়ার জন্য আমার কাছে তিন হাজার টাকা চায়। না দিতে চাইলে তিনি বলেন, তুমি না দিলে আর একজন দিবে, তাকে করে দিবো। পরে চাল দেওয়ার দিন দেখি সব তারই আত্মীয় স্বজন। আবার বড়লোকদেরও কার্ড করে দিয়েছে।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক কর্মচারী বলেন, প্রতিবার চাল দেওয়ার দিন বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদে চাল ক্রয়ের অভিযোগ আছে। পরে স্যার আমাদের ব্যবস্থা নিতে পাঠালে আমাদের দেখে চাল ক্রেতারা পালিয়ে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল মেম্বারের বড় ভাই শাহিনুর ইসলাম তার ভাইয়ের ক্ষমতা দেখিয়ে প্রকাশ্যে পরিষদের সামনে চাল ক্রয় করে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, “উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর নিজস্বভাবে তদন্ত করে তালিকা করেছে। এবারে আমাদের কোনো হাত নেই।
বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে বারবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা লায়লা নাসরিন জাহান জানান, অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম ট্যাগ অফিসারদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে তার কয়েকজন স্বাবলস্বী আত্মীয়সহ এক ডাক্তার ভাগনীর নামও অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা চুড়ান্ত তালিকায় সেসব নাম বাদ দিয়েছি। সম্ভবত সেখানে তাঁর স্ত্রীর নামও ছিলো। পরে তাকে এ বিষয়ে ভৎসনা করেছি। এরপরও যেসব উপকারভোগী সচ্ছল ও সম্পদশালী হয়েও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আল জিনাত বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী তালিকা করা হয়েছে। কোথাও এর ব্যত্যয় হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho