প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ১০:১৬ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ৪, ২০২৫, ১০:০৮ পি.এম
চট্টগ্রামের ছিন্নমূল বস্তিতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ: নিহত ১, আহত ১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের ছিন্নমূল বস্তির আলীনগরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। এছাড়া অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছে। যুবলীগের সন্ত্রাসী ভাগিনা জাবেদকে দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করেছে স্থানীয়রা। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আলীনগরের ইয়াসিন বাহিনী ও যুবলীগের ভাগিনা জাবেদের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয় শুক্রবার ভোর রাতে। ইয়াসিন গ্রুপের কালু (৩২) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয় সংঘর্ষে। কালুর বাড়ি নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকায় বলে জানা গেছে। সে পেশায় রাজমিস্ত্রী। তবে সে ছিন্নমূল বস্তিতে বসবাস করতো না বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
সংঘর্ষ বিস্তৃত হলে যুবলীগের সন্ত্রাসী ভাগিনা জাবেদকে অস্ত্রসহ আটক করে স্থানীয় জনতা। ভাগিনা জাবেদ ছিন্নমূল বস্তিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অস্ত্রসহ নিয়ে ঢুকে সকালে।
এর আগে শুক্রবার রাতে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ছিন্নমূল বস্তির বিভিন্ন প্রান্তে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান জানান, জঙ্গল ছলিমপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত। আহত হয়েছেন ১৬ জন। আহতরা চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,সীতাকুণ্ডে জঙ্গল ছলিমপুর পাহাড়ি এলাকা দখলে নিতে ইয়াছিন গ্রুপের সঙ্গে রোকন-গফুর ও সরোয়ার বাবলার বাহিনীর সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটেছে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে রোকন বাহিনীর একজন মারা যায়। এছাড়া উভয় গ্রুপের ১৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, সংঘর্ষে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলাকে ভাড়া নিয়ে গেছে রোকন মেম্বার। এতে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে ঘটনার পরে রোকন বাহিনীর অনেক সদস্য নিখোঁজ রয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা- নিখোঁজ যে কয়েকজন রয়েছে তারা রোকন বাহিনীর সদস্য। আহত ভাগিনা জাবেদ শীর্ষ সন্ত্রাসী সরওয়ার বাবলার হয়ে কাজ করেন।
চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, দুটি গ্রুপে সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষের সন্ত্রাসী অংশ নিয়েছে। ভাগিনা জাবেদ চিকিৎসাধীন আছে। হাসপাতালে পুলিশ তাকে নজরে রেখেছে। '
সুত্রমতে, দীর্ঘদিন থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরের সরকারি জমি দখল করে ছিন্নমূল বস্তি গড়ে তুলে একটি চক্র। ছিন্নমূল সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হলে বেশ কয়েকবার পুলিশ ও র্্যব অভিযান চালায়।
৫ই আগস্টের পট পরিবর্তনের পর আলীনগরের সন্ত্রাসী ইয়াসিনের নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী ছিন্নমূল বস্তি এলাকা দখল করে নেয়। যদিও বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জেল থেকে বের হয়ে নেপথ্যে থেকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলো পুরো বস্তি। ইয়াসিনের কারণে কর্তৃত্ব খর্ব হয় ওই বিএনপি নেতার। চলতি বছরের ৩রা জানুয়ারি জঙ্গলসলিমপুরে মীর আরমান হোসেন (৪৮) নামের এক বিএনপি নেতাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গলসলিমপুর ছিন্নমূল বস্তি এলাকায় থাকতেন। আরমান সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।
শুক্রবার ভাগিনা জাবেদের বাহিনীর লোকজন ছিন্নমূল বস্তি দখল করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। স্থানীয় বস্তিবাসী একজোট হয়ে প্রতিরোধ করে সরওয়ার বাবলা- জাবেদ বাহিনীকে। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে তারা পুলিশকে খবর দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৯০ দশক থেকে সরকারী জমি দখল করে পাহাড় করে ছিন্নমূল বস্তি গড়ে তোলা হয়। স্থানীয় ও প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সীতাকুণ্ড উপজেলার সর্ব দক্ষিণের ইউনিয়ন সলিমপুরের পূর্ব দিকে গহীন পাহাড়ি এলাকার নাম জঙ্গল সলিমপুর। এলাকাটি সীতাকুণ্ড উপজেলাধীন হলেও মাত্র কয়েকবছর আগেও এখানে পৌঁছাতে যেতে হতো চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে। সেখানে পৌঁছাতে যে পথে যেতে হতো তা ছিল খুবই দুর্গম এবং বেশ সময় সাপেক্ষ। ফলে একান্ত বাধ্য না হলে কেউ যেতে চাইতো না। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও ঐ এলাকাটি এড়িয়ে চলত। জঙ্গল সলিমপুরের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি তিনটি থানার সীমান্তবর্তী। চট্টগ্রাম ও পাশ্ববর্তী উপজেলার সন্ত্রাসীরা আত্মগোপনে চলে আসত এখানে। পরে তারাও বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপ গড়ে তুলে নিজের প্রভাব বিস্তার করতো।
সীতাকুণ্ড এটির অবস্থান হলেও এর পূর্ব দিকে রয়েছে হাটহাজারী উপজেলা এবং দক্ষিণে বায়েজিদ থানা। এর ফলে জঙ্গল সলিমপুরে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের কোন অভিযানের আঁচ পেলে দ্রুতই পাহাড়ের মধ্য দিয়ে অন্য থানা এলাকায় গিয়ে আত্মগোপনের সুযোগ পেয়ে যেত।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho