প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ৯:৫৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ৭, ২০২৫, ১১:১৪ এ.এম
নবীজির প্রিয় স্ত্রী
হজরত খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ রা.। প্রেমময় নবীর প্রথম ও সবচেয়ে প্রিয় স্ত্রী। এতিম নবীর জীবনযাত্রায় তিনি ছিলেন এক মহান সঙ্গিনী। নবীজির ছায়া ও মায়া হয়ে আমৃত্যু যিনি আগলে রেখেছিলেন নবীজিকে।
জীবনের শুরুটায় দুঃখ-কষ্টে ক্ষুধা-যাতনায় যিনি সব সময়ই সঙ্গে ছিলেন নবীজির। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও খাদিজা রা.-কে ভালোবেসেছেন সবচেয়ে বেশি। আল্লাহও তাকে সুসংবাদ দিয়েছেন জান্নাতের। তাই তো তিনি মুমিনদের মা। যাকে আল্লাহ সালাম জানিয়েছেন।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, একবার জিবরিল আ. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই যে খাদিজা আপনার কাছে আসছেন, তার সাথে একটি পাত্র আছে, তাতে তরকারি আছে। তিনি আপনার কাছে এসে পৌঁছালে তাকে তার রবের পক্ষ থেকে সালাম বলবেন, তাকে জান্নাতে একটি বাঁশের (ঘরটি দুনিয়ার বাঁশের তৈরির ঘর হবে না; বরং তা হবে মুক্তা ও ইয়াকুত পাথরে গাঁথা বাঁশের দ্বারা তৈরি। -তাবারানি কাবির: ১/২৭৪; মাজমাউয যাওয়াইদ : ৯/৩৫৮) ঘরের সুসংবাদ দেবেন, যেখানে কোনো শোরগোল আর ক্লান্তি থাকবে না। (হাফেয ইবনে হাজার আসকালানি রহ. আল্লামা ইবনুত ত্বীনি রহ. থেকে বর্ণনা করেন, হাদিসে বাঁশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ফাঁপা প্রশস্ত মণি-মুক্তা। -ফাতহুল বারি: ৭/১৭১; শরহু মুসলিম, নববি : ১৫/২০০)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ২৫ বছর বয়সে ৪০ বছর বয়সি খাদিজা রা.-কে বিয়ে করেন। মোহর হিসেবে ছিল ২০টি উট। (সহিহ বুখারি: ৫৩৯)
এ মহীয়সী নারী নবীজির জন্য নিজের জীবনের সবকিছুই বিসর্জন দিয়েছেন। আল্লাহর নবী যখনই বিপদে পড়েছেন, তখনই সাহস জুগিয়েছেন তিনি। নবীজি ধ্যানমগ্ন থাকতেন গারে হেরায়, তখন তিনিই তাকে খাবার দিয়ে আসতেন মক্কার সুউচ্চ পর্বতচূড়ায়। দয়ার নবী গভীর রাতে বাড়ি ফিরতেন, তিনি নবীর জন্য জেগে বসে থাকতেন। নিজের ধন-সস্পদ অর্থকড়ি সবকিছু নবীজির হাতে তুলে দেন। তাই তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন খাদিজা রা.-কে। তাই তো তার মৃত্যুর পরও আয়েশা রা. খাদিজা রা.-এর প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিলেন।আয়েশা রা. বলেন, ‘খাদিজার প্রতি আমার যতটা ঈর্ষা ছিল, নবীজির অন্য কোনো স্ত্রীর প্রতি ততটা ছিল না। একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সামনে খাদিজার কথা বললে আমি ঈর্ষান্বিত হয়ে বলি, সে তো ছিল বৃদ্ধা, এখন আল্লাহ তাআলা আপনাকে তার চেয়ে উৎকৃষ্ট স্ত্রী দান করেছেন; তবুও আপনি তার কথা কেন স্মরণ করছেন? আমার কথা শুনে রাসুলুল্লাহ রাগান্বিত হন। রাগে তার পশম মোবারক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, আল্লাহর কসম তার চেয়ে উত্তম স্ত্রী আমি পাইনি। যখন সবাই কাফির ছিল, তখন সে ঈমান এনেছিল। যখন সবাই আমাকে অবিশ্বাস করেছিল, তখন সে আমাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছিল। যখন সবাই আমাকে ত্যাগ করেছিল, তখন সে আমাকে অর্থ-সম্পদ দিয়ে সহায়তা করেছিল। আল্লাহ তাআলা তার গর্ভেই আমাকে সন্তান দান করেছেন। আয়েশা রা. বলেন, এরপর আমি অন্তরে অন্তরে বলি, ভবিষ্যতে আমি খারাপ অর্থে তার নাম মুখে নেব না। (আর-রাহিকুল মাখতুম: ৭৭; সিরাতে মুস্তফা : ১/১০৮)
ইসলামের ইতিহাসে নারীদের মধ্যে সবার আগে ঈমান আনেন খাদিজা রা.। এরপরই আরবের মক্কায় নবীজি সংগ্রাম শুরু করেন দীন প্রচারের। এ কঠিন পথচলায় প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা রা. তাকে সাহস দেন। তার সব সহায়-সম্পদ ইসলামের জন্য অকাতরে দান করেন। নবুওতের প্রথম বছরগুলোর কঠিন সময়ে তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেবায় সর্বস্ব উজাড় করেছিলেন।
হিজরতের তিন বছর আগে তার মৃত্যু হয়। তার জীবদ্দশায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর কোনো বিয়ে করেননি। একমাত্র স্ত্রী খাদিজা রা. ছিল নবীজির প্রিয় সহধর্মিণী। ইবরাহিম ছাড়া নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব সন্তান খাদিজা রা.-এর গর্ভজাত। তাদের প্রথম সন্তান ছিলেন কাসিম। এ কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলা হতো আবুল কাসিম বা কাসিমের পিতা। কাসিমের পর জাইনাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম, ফাতিমা ও আবদুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। ছেলে সন্তানগণ ইন্তেকাল করেন শৈশবেই। মেয়েরাও নবীজি জীবিত থাকতেই ইন্তেকাল করেন। শুধু ফাতিমা রা. নবীজির মৃত্যুর ছয় মাস পর ইন্তেকাল করেন।
প্রিয় স্ত্রী খাদিজা রা.-এর ইন্তেকালে অনেক মর্মাহত হোন। তিনি সব সময়ই খাদিজা রা.-এর ভালোবাসার কথা স্মরণ করতেন আর তার জন্য দোয়া করতেন। মৃত্যু পর্যন্ত তার স্মৃতিগুলোর কথা বলতেন। অন্য স্ত্রীদের কাছেও বিভিন্ন সময় খাদিজা রা.-এর স্মৃতিচারণ করতেন। আল্লাহর সুসংবাদ দেওয়া জান্নাতের বাঁশের ঘরে তিনি সুখময় জীবনেই আছেন।
তিনি ছাড়াও নবীজির আরও স্ত্রী ছিলেন, সাওদা বিনতে জামআহ, আয়েশা বিনতে আবু বকর, হাফসা বিনতে উমর, জাইনাব বিনতে খুজাইমা, উম্মে সালামা হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়া, জাইনাব বিনতে জাহাশ, জুওয়াইরিয়া বিনতে হারেস, উম্মে হাবিবা রামলা বিনতে আবু সুফিয়ান, সাফিয়া বিনতে হুয়াই ইবনে আখত্বাব, মাইমুনা বিনতে হারেস রা.। (সিরাতে মুস্তফা : ১০৮; সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া : ২৬) সূত্র: নবীজির প্রিয় ১০০ গ্রন্থ সূত্র-সময় সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho