প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ২:৪৮ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ২, ২০২৫, ৯:৩০ এ.এম
ইসলামে ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা যা মানবজাতির প্রতিটি স্তরে ন্যায়, ভারসাম্য ও পারস্পরিক সম্মান প্রতিষ্ঠা করে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন বিভিন্ন ক্ষমতা, যোগ্যতা ও দায়িত্ব নিয়ে। কেউ পুরুষ, কেউ নারী; কেউ শক্তিশালী, কেউ দুর্বল, এই ভিন্নতাই আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য। কিন্তু এই পার্থক্য যেন হিংসা, অসন্তোষ বা অন্যের প্রতি ঈর্ষার কারণ না হয়, এই শিক্ষা দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা সুরা আন-নিসার ৩২ নম্বর আয়াতে।
وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللَّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ ۚ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبُوا ۖ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبْنَ ۚ وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِن فَضْلِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
তোমরা যা দ্বারা আমি তোমাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, তার আকাঙ্ক্ষা করো না। পুরুষ যা অর্জন করে তাতে তার অংশ থাকবে এবং নারী যা অর্জন করে তাতে তার অংশ থাকবে। তোমরা আল্লাহর নিকট তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।”
এই আয়াত নাজিল হয় যখন কিছু নারী আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন যে, “যদি আমরা পুরুষ হতাম, তবে আমরাও জিহাদে অংশ নিয়ে বেশি সওয়াব অর্জন করতে পারতাম। তখন আল্লাহ তাআলা শিক্ষা দিলেন, মানুষের সৃষ্টি ও দায়িত্বের পার্থক্য আল্লাহর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে নির্ধারিত।
আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যাতে সে নিজ নিজ দায়িত্বে সফল হতে পারে। পুরুষ ও নারী উভয়েরই আমল ও প্রচেষ্টার ওপর ভিত্তি করেই প্রতিদান দেওয়া হবে, লিলরিজালি নসীবুম মিম্মা কাসাবু, ওয়ালিন নিসা’ই নসীবুম মিম্মা কাসাব্না, অর্থাৎ পুরুষ যা অর্জন করবে, তারই ফল সে পাবে; নারীও তাই।
অতএব, কারও প্রতি হিংসা না করে নিজের কাজ, ইবাদত ও নেক আমলে মনোযোগ দেওয়া চাই। কেননা, ঈর্ষা ও হিংসা তাকদীরের ওপর অসন্তুষ্টির নামান্তর, যা ঈমানের পরিপন্থী।
হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, দুনিয়ার বিষয়ে তোমার চেয়ে নিচে যারা আছে, তাদের দিকে তাকাও; আর দীন ও আমলের বিষয়ে তোমার চেয়ে উপরে যারা আছে, তাদের দিকে তাকাও। এতে তুমি আল্লাহর নেয়ামতকে তুচ্ছ ভাববে না। (সহিহ মুসলিম: ২৯৬৩)
এই হাদিস আয়াতটির বাস্তব প্রয়োগ, অন্যের প্রাপ্তি দেখে হিংসা নয়, বরং নিজের অবস্থায় শোকর আদায় করা। আরও হাদিসে এসেছে, ঈর্ষা কেবল দুই ব্যক্তির প্রতি করা যায়, একজন সে ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ কিতাবের জ্ঞান দিয়েছেন এবং সে তা দিন-রাত পাঠ করে, আরেকজন যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন এবং সে তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৩) অর্থাৎ ঈর্ষা যদি হয় নেক আমলে অগ্রগামী হওয়ার আকাঙ্ক্ষায়, তা প্রশংসনীয়; কিন্তু দুনিয়াবি হিংসা নিষিদ্ধ।
শিক্ষণীয় বিষয়
আল্লাহর তাকদীরে সন্তুষ্ট থাকা – মানুষ যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আল্লাহরই প্রজ্ঞা নিহিত। পুরুষ ও নারী উভয়ের মর্যাদা কর্মভিত্তিক – সওয়াব নির্ভর করে আমলের উপর, লিঙ্গের উপর নয়। হিংসা ও ঈর্ষা পরিহার করা – এটি হৃদয়কে জ্বালিয়ে দেয় এবং আল্লাহর রহমত থেকে দূরে রাখে। আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনা করা – ওয়াস’আলুল্লাহা মিন ফাদলিহি – আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে, হিংসা নয়।
মানুষের মর্যাদা, যোগ্যতা ও দায়িত্ব আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত। কেউ জিহাদে অংশ নিয়ে সওয়াব অর্জন করে, কেউ সন্তান লালন-পালন করে জান্নাতের মর্যাদা অর্জন করে। প্রত্যেকে নিজের জায়গায় ইবাদত করলে আল্লাহ তাআলা সমানভাবে পুরস্কৃত করবেন। সুতরাং আমাদের কর্তব্য হলো, অন্যের প্রাপ্তি দেখে হিংসা না করে নিজের কর্মে মনোযোগী হওয়া এবং আল্লাহর নিকট তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করা। وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِن فَضْلِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا আল্লাহর অনুগ্রহই সব কিছুর চাবিকাঠি। ----সময় সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho