প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫, ১২:৩৭ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ২, ২০২৫, ৭:৩৬ পি.এম
ঠাকুরগাঁওয়ে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি-ঝড়ো হাওয়ায় আমন ধান ও আলুর ব্যাপক ক্ষতি

জাহাঙ্গীর আলম, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জেলার কৃষি। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মাঠজুড়ে এখন শুধু জল আর নুইয়ে পড়া ফসল। আধাপাকা আমন ধানগাছ মাটিতে লুটিয়ে আছে, সদ্য রোপণ করা আলু বীজ পানিতে তলিয়ে গেছে, আর আগাম শীতকালীন সবজি পচে যাওয়ার পথে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
গত বুধবার ২৯ অক্টোবর বিকেল থেকে শনিবার (১ নভেম্বর) পর্যন্ত জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে জেলার পাঁচটি উপজেলার অধিকাংশ এলাকার আমন ধান ক্ষেত ও আলুর জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা যায়, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও বাতাসে জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট ৯৪৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আমন ধানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৯৮ হেক্টর জমিতে। এছাড়া ১০৯ হেক্টর জমির আলু এবং ৪০ হেক্টর শাক-সবজি ক্ষতির শিকার হয়েছে। গত তিন দিনে জেলায় ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমির আধা কাঁচা ও পাকা ধান এখন মাঠে। এই ধানগাছ হেলে পড়ায় ফলন কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, শীতকালীন আগাম জাতের আলুর জমিতে পানি জমার কারণে বীজ আলু পচে যাওয়ার উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা।
রাণীশংকৈল উপজেলার আব্দুল হাকিম নামে এক কৃষক বলেন, অসময়ে এমন বৃষ্টি আগে কখনও দেখিনি কিন্তু প্রকৃতি উল্টো পথে চলছে। চাষাবাদ করে শান্তি পাই না, এখন ভয় লাগে কখন আবার নতুন দুর্যোগ আসে।
একই উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের কৃষক তসলিম উদ্দিন বলেন, চার বিঘা জমির ধান এখন কাদা পানিতে নুইয়ে পড়েছে। আর কিছুদিন পর ধান কাটার সময় কিন্তু জমিতে ঢোকা যায় না। সব পরিশ্রম যেন পানিতে গেল।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সবুজ জানান,গত সপ্তাহে ঋণ করে আলুর বীজ রোপণ করেছিলাম। এর মধ্যেই টানা বৃষ্টি। জমিতে এখন থই থই পানি। বীজ আলু পচে গেলে আমাদের পথে বসতে হবে।
পীরগঞ্জ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাফিজ উদ্দিন জানান, আলুর ক্ষেত এখন পুকুর হয়ে গেছে। চার বিঘা জমির মাঠ এখন পুকুর।এভাবে পানি জমে থাকলে সব পচে যাবে। আমাদের লোকসান কে দেবে?
রানীশংকৈল ছাড়াও জেলার সদর, বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ ও হরিপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠেও একই চিত্র। কোথাও ধানগাছ হেলে পড়েছে, কোথাও সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষেতে জমে থাকা পানির কারণে পোকামাকড়ের আক্রমণও বাড়ছে।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, টানা কয়েকদিনের পানি ও বাতাসে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পানি দ্রুত নামলে ক্ষতি কম হবে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে কৃষকরা দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, আমন ধান এখন কাটার সময়। যেসব এলাকায় পানি কম, সেখানে দ্রুত ফসল ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যেসব চাষি আলু বীজ রোপণ করেছেন, তাদেরকে সেচ ও পানি নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাজেদুল ইসলাম জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে জমিতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বলা হয়েছে। বিশেষ করে আলুর ক্ষেতের পানি দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে, না হলে বীজ পচে যাবে। ধান হেলে পড়লেও যেন ফলন কিছুটা রক্ষা করা যায়, সে জন্য কৃষকদের করণীয় সম্পর্কেও কৃষি কর্মকর্তাগন পরামর্শ দিচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho