প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ২:০৯ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ৬, ২০২৫, ৪:১৫ পি.এম

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ভারত নেমে আসা পানি প্রবাহিত হয়ে জুড়ী নদীতে বিপুল পরিমাণ দেশীয় প্রজাতির মাছ মারা যাচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের দিক থেকে আসা বিষটোপে দেশীয় প্রজাতির এই মাছগুলোর জীবন হুমকিস্বরূপ বলে মনে করা হচ্ছে । এতে নদীর পানিতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র দুর্গন্ধ,আর এতে করে পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা যায়, গত ২৭ অক্টোবর থেকে জুড়ী নদীর বিভিন্ন স্থানে মরা মাছ ভেসে থাকতে দেখা যায়। মাছ পচে যাওয়ায় নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে এবং দুর্গন্ধে নদী পাড়ের ও পাশ্ববর্তী এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
জানা গেছে, ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা থেকে জুড়ী নদী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ও ফুলতলা ইউনিয়ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফুলতলা ও সাগরনাল ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে মিলিত হয়েছে। ফলে নদীর এই দূষণ হাকালুকি হাওরের জলজ প্রাণীর জীবনেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
জানা গেছে, নদীর উজানে ভারতের বেশ কয়েকটি চা বাগান রয়েছে। সে চা বাগানে বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করার পরে অতিরিক্ত যা সেটুকু সরাসরি নদীতে ফেলে দেয়, যা বিষটোপ নদীর বাস্তুতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
তাছাড়া স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, শুকনো মৌসুমে নদীর পানির স্তর কমে গেলে সুযোগ নেয় কিছু অসাধু ব্যক্তিরা। তারা মাছ ধরার উদ্দেশ্যে নদীতে বিষ মেশায়, যা পরে স্রোতের সঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের অংশে প্রবেশ করে বিপুল ক্ষতি ডেকে আনে।
স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলেন,“নিয়মিত নদী মনিটরিং ও সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি না থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।” তিনি বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে নদী ব্যবস্থাপনা কমিটির তত্ত্বাবধানে বিষপ্রয়োগ বন্ধের জোর দাবি জানান।
এদিকে নদীর পাড়ের বাসিন্দারা জানান, পানি এখন এমন পর্যায়ে দূষিত যে রান্না বা গৃহস্থালি কাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কেউ কেউ ইতোমধ্যেই নদীর পানি ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প পন্থা অবলম্বন করে নির্ভর করছেন।
পরিবেশবিদদের মতে, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে জুড়ী নদী ও এর সংযুক্ত হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে,যা ভবিষ্যতে স্থানীয় মৎস্য সম্পদ ও জীবিকার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. আজিজ বলেন, “নদীতে বিষ প্রয়োগ করলে নদীর ইকোসিস্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদীর জীববৈচিত্র্য একে অপরের ওপর নির্ভরশীল- কাদার মধ্যে থাকা ক্ষুদ্র প্রাণী খেয়ে ছোট মাছ বাঁচে, ছোট মাছ খেয়ে বড় মাছ, আর বড় মাছের ওপর নির্ভর করে ভোঁদড়, সাপ, ব্যাঙ ও কাঁকড়ার মতো প্রাণী।”
তিনি আরও বলেন,“বিষ প্রয়োগের ফলে এই খাদ্যজাল ভেঙে পড়ে। প্রথমে ছোট জলজ প্রাণী ও মাছ মারা যায়, পরে তাদের ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য প্রাণীও টিকে থাকতে পারে না। বড় নদীতে বিষ প্রয়োগ ডলফিনের মতো সংবেদনশীল প্রাণীর জন্য আরও ভয়াবহ, কারণ এতে তাদের খাদ্য ও শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি হয়।”
অধ্যাপক আজিজের মতে,“নদীতে বিষ প্রয়োগ শুধু একটি অপরাধ নয়, এটি একটি ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়।”
এ বিষয়ে জুড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, “মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ এবং বিধিমালা ১৯৮৫ অনুযায়ী বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,“জুড়ী সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় উজানে, বিশেষ করে ভারতীয় অংশ থেকে মাঝে মাঝে বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি দেশের কিছু স্থানে স্থানীয়ভাবেও এমন ঘটনা দেখা যায়। বিজিবি এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।”
মনিরুজ্জামান বলেন,“বিভিন্ন চা বাগানে কীটনাশক প্রয়োগের পর অবশিষ্ট অংশ নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও লক্ষ্য করা গেছে। এই বিষয়ে বাগান কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া রাতে যাতে কেউ নদীতে বিষ প্রয়োগ না করে, সে জন্য ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে মাইকিং করে সাধারণ জনগণকে সচেতন করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “মৎস্য অধিদপ্তর সর্বদা এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে এবং বিষ প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ অব্যাহত রেখেছে।"
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho