
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
নীতিনিষ্ঠ সংগ্রামী মার্ক্সবাদী দাউদ হোসেন আজ ২১ নভেম্বর সকালে ঢাকার নয়াটোলার বাসায় তিনি মার গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী, ১ পুত্র, ২ কন্যাসহ অসংখ্যগুণগ্রাহী রখে গেছেন। আজ শনিবার সকাল ১০টায় ঝিকরগাছার বায়সা হাই স্কুল মাঠে তাঁর নামাজের জানাজা শেষে পারিবাহিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।
দাউদ হোসেন ১৯৪৪ সালের ২রা মার্চ যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার বায়সা গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্ম। পিতা নিছার আলী। মাতা আছিয়া খাতুন। উভয়েই প্রয়াত যথাক্রমে ১৯৭০ ও ১৯৮৩তে মারা যান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি পিতা-মাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান।
১৯৪৯ সালে গ্রামীণ পাঠশালায় হাতেখড়ি। বাল্য ও কৈশোর কেটেছে শার্শা উপজেলার নাভারণ রেলবাজারে। এখানকার বুরুজবাগান প্রাইমারি ও হাইস্কুলে শিক্ষালাভ।
১৯৫৭-এ বিদ্যালয়ে পড়াকালে স্কুলের সহপাঠীদের নিয়ে স্কুল প্রাঙ্গণে ভাষা শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ মিনার তৈরি করেন।
১৯৬০-এ বুরুজবাগান হাই স্কুল থেকে প্রতিটি বিষয়ে রেকর্ড সংখ্যক নম্বর পেয়ে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
১৯৬২ সালে যশোরের মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে আইএসসি পাশ এবং কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে হাতেখড়ি নেন। এ বছরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা (অনার্স) বিভাগে ভর্তি। এসময়েই স্বাধীন পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখার শুরু।
১৯৬৩-৬৪তে রবীন্দ্র চর্চা নিষিদ্ধের প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলন ও সা¤প্রদায়িকতা বিরোধী সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ।
১৯৬৫তে পাকিস্তানের নাগপাশ থেকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সমমনাদের নিয়ে, পূর্ববাংলা জাতীয় মুক্তিসংস্থা গঠন। বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের মার্শাল-‘ল’ চলাকালে বর্তমান যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা গ্রামে ‘পূর্ববাংলা জাতীয় মুক্তিসংস্থার গোপন সম্মেলনের আয়োজন করেন। ১৯৬৭তে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।
১৯৬৮তে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামকে সমাজবিপ¬বের পথে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে এবছরেই শ্রমিক-কৃষক কর্মীসংঘে যোগদান এবং লিপ্ত থাকেন কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে। ১৯৬৭তে কমিউনিস্ট আন্দোলন মস্কো-পিকিং লাইনে বিভাজিত হওয়ার পরপর ‘শ্রমিক মুক্তি সংঘ’ সংগঠনটি গড়ে ওঠে।
১৯৬৯-এ মুক্তিযুদ্ধের ড্রেস রিহার্সাল খ্যাত ৬৯-এর গণঅভ্যূত্থানে জামুস সদস্যগণ এবং কর্মীসংঘ দাউদ হোসেনের নেতৃত্বে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে এবং ছয় দফা ও এগারো দফার সমর্থনে কৃষক সমিতির মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকায় জনমত সংগঠিত করে।
১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শতধাবিভক্ত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে ক্রিয়াশীল নানামুখী দল-উপদলের সমন্বয়ে কলকাতায় বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম সমন্বয় কমিটি গড়ে তুলতে শ্রমিক-কৃষক কর্মীসংঘের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং সমন্বয় কমিটির অন্যতম সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের কালপর্বে জাতীয় মুক্তিসংস্থার সকল নেতা-কর্মী স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উল্লেখ্য যে, ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থাকা দল-উপদলের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম সমন্বয় কমিটির লক্ষ্য ছিল দেশ স্বাধীনের পর স্বাধীন বাংলাদেশে একীভূত একটি কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করার। যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা স্বাধীনতার পরপরই মুখ থুবড়ে পরে।
১৯৭২-এ স্বাধীনতার পর শ্রমিক-কৃষক কর্মীসংঘ বাংলাদেশ কমিউনিস্ট কর্মীসংঘ নামে আত্মপ্রকাশ করে। সংঘের প্রয়োজনে তিনি নিজ গ্রামে বসবাস শুরু করেন এবং পেশা হিসেবে অবলম্বন করেন কৃষিকাজকে যাতে নিয়োজিত থাকেন দীর্ঘ ১৪টি বছর। এসময় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করেন একটি হাই স্কুল। এছাড়াও অত্র
এলাকায় অনেকগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও পরিচালনায় পালন করেন মুখ্য ভূমিকা।
১৯৭৪-এ তাহমিনা আখতারের সাথে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৫-এ জানুয়ারিতে এক ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় কর্মীসংঘ ও কৃষক সমিতির কয়েক ডজন নেতাকর্মীসহ গ্রেপ্তার হন। আদালতের বিচারে তারা সকলেই নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং ১৯৭৭-এ মুক্তি পান।
১৯৮০তে যশোর থেকে তারই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক শনিবার পত্রিকা। যা অব্যাহত থাকে পরবর্তী দুটি বছর।
১৯৮৪তে কমিউনিস্ট আন্দোলনে ক্রিয়াশীল পার্টিসমূহের তাত্তি¡ক দেউলিয়াত্ব তুলে ধরতে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদে গভীরভাবে আস্থাশীল থেকে সূচনা করেন লাগাতার ধারাবাহিক মতাদর্শিক সংগ্রাম। এ সংগ্রামকে কার্যকর লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে ঢাকায় চলে আসেন। ৬০-এর দশকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন যখন মস্কো ও পিকিং লাইনে বিভাজিত হয় তখন থেকেই তিনি ছিলেন এই ঘোরতর বিভক্তির বিপক্ষে। এই বিভক্তির বিলোপবাদী
হঠবিপ¬বীপনার পেটিবুর্জোয়া চারিত্র উন্মোচনে তত্ত¡গত সংগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরতে দেশীয় প্রাসঙ্গিকতায় মহামতি লেনিনের অর্থশাস্ত্রীয় গ্রš’াদির অনুবাদ কর্ম শুরু করেন এবং সংঘ প্রকাশন থেকে তা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
১৯৮৮-৮৯তে উপরোলি¬খিত লেনিনের ৩টি গ্রšে’র বঙ্গানুবাদের মাধ্যমে বঙ্গীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় পার্টিগুলির মতাদর্শিক দেউলিয়াত্বের কার্য-কারণ বিশে¬ষণ করে প্রতিটি গ্রšে’র ভূমিকায়, বিদ্যমান পার্টিগুলির শ্রেণী অবস্থান ও বাস্তবতা তুলে ধরেন।
১৯৯০-৯১তে এই কালপর্বে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বজুড়ে সমাজতান্ত্রিক ব্যব¯’ার সংকটকালে কমিউনিস্ট কর্মীসংঘের কার্যকলাপ সীমিত গÐীতে আবদ্ধ হয়ে পড়লে দাউদ হোসেন সাপ্তাহিক রোববার পত্রিকায় সিনিয়র সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে লেখালেখির কাজ অব্যাহত রাখেন।
১৯৯৭-৯৯তে আমেরিকান-রেড ইন্ডিয়ানদের নিয়ে ডি ব্রাউন রচিত সুবিখ্যাত গ্রš’ বেরী মাই হার্ট অ্যাট ঊনডেড নীর বঙ্গানুবাদ করে প্রকাশ করেন সংঘ প্রকাশন থেকে আমারে কবর দিও হাঁটুভাঙার বাঁকে শিরোনামে। এরপর লেনিনের বাজার প্রসঙ্গ, নারোদবাদের অর্থনৈতিক মর্মব¯‘ এবং অর্থনৈতিক রোমান্টিকতাবাদ গ্রš’গুলি পুনর্মুদ্রণ করে সংঘ প্রকাশন থেকে প্রকাশ করেন। পুস্তক প্রকাশনার মাধ্যমে পুনরায় সংগঠিত করেন কমিউনিস্ট কর্মীসংঘের প্রকাশনা সং¯’া সংঘ প্রকাশন।
২০০১-এ বঙ্গীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনে প্রাধান্যশীল পেটিবুর্জোয়া ধারাগুলোর সমালোচনা করে লেখেন মার্ক্সবাদের বঙ্গীয় স্বরূপ গ্রš’টি।
২০০৩-এ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ফজলুল কাদের কাদেরী সংকলিত মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবিখ্যাত গ্রš’ বাংলাদেশ জেনোসাইড অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড প্রেস-এর বঙ্গানুবাদ। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেরা গ্রš’ হিসেবে বিবেচ্য বইটিতে ১৯৭১-এর ১৫ই মার্চ থেকে ৭২-এর ১৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত কালপর্বে বিশ্বের ৫৪টি দেশের ১৩৭টি পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রবন্ধসমূহ সন্নিবেশিত করা হয়। ১৯৭২-এর সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত প্রথম
ইংরেজি সংস্করণের প্রথম বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয় দীর্ঘ ৩১ বছর পর ২০০৩-এ।
২০০৪-এ আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিপ¬বের বাইবেল হিসেবে পরিচিত মহামতি লেনিনের দি ডেভেলপমেন্ট অব ক্যাপিটালিজম ইন রাশিয়া বইটি রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ শিরোনামে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ থেকে প্রথম অনুবাদিত ও প্রকাশিত বইটি তাঁর অসামান্য মেধা, অধ্যবসায় ও আদর্শিক অঙ্গীকারের এক অনন্য স্বাক্ষর। একই বছরের ২৮শে এপ্রিল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির দপ্তরে রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ মহাগ্রš’টির প্রকাশনা উৎসবে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকল আলোচক অনূদিত গ্রš’টির প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করে এই মহাগ্রš’টির অনুবাদ কর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
২০০৫-০৬-এ তৃতীয়বারের মতো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে টানা সাত দিন ভেন্টিলেশনে। অবশেষে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাইপাস সার্জারি।
২০০৯-১২তে এবছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রবন্ধ সংকলন গ্রš’ বিংশ শতাব্দীর শেষবাঁকের দ্বান্দ্বিকতা। বিগত দুই দশকে লেখা বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রবাহসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১০৫টি লেখাপত্র স্থান পেয়েছে গ্রš’টিতে। এরপর ২০১০-এ একে একে অনুবাদ করেন গুয়াতেমালার নোবেল বিজয়ী রেড ইন্ডিয়ান নারী নেত্রী রিগোবার্তা মেনচু রচিত আত্মজীবনী আমি রিগোবার্তা মেনচু’ এবং সীমান্ত পেরিয়ে গ্রš’ দুটি। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় আন্দ্রেই আনিকিন রচিত মস্কো¯’ প্রগতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত অর্থশাস্ত্র বিকাশের ধারা গ্রš’টি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho