প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২২, ২০২৫, ১২:২০ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ১:২৫ পি.এম
যাত্রী সংকটে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট, নেই হকারদের হাক-ডাক

মেহেদী হাসান, রাজবাড়ী প্রতিনিধি
পদ্মা সেতু হওয়ার পর যাত্রী সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট। এতে আয় রোজগার কমে যাওয়ায় এসব ফেরি ও লঞ্চঘাটে নিয়োজিত শ্রমিক কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।জানা গেছে ২৫ জুন ২০২২ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। রাজধানীতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতে সময় ও ভোগান্তি কমেছে। কিন্তু এই উন্নয়ন আনন্দের আড়ালে দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাটের চারপাশে জীবিকা নির্ভর হাজারো মানুষের জীবন প্রায় থমকে গেছে। একসময় দেশের প্রধান এই নৌপথ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রাণকেন্দ্র ছিল। দৌলতদিয়া ঘাটে দিনরাত ৫–৭ কিলোমিটার দীর্ঘ যানবাহনের সারি লেগে থাকত। মহাসড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছিল স্থায়ী-অস্থায়ী হোটেল-রেস্তোরাঁ, আবাসিক হোটেল, দোকানপাট ও হকারের ভিড়। প্রতিদিন শত শত রিকশাচালক যাত্রী পরিবহনে ব্যস্ত থাকতেন, আর সহস্রাধিক হকার জীবিকা নির্বাহ করতেন লঞ্চ ও ফেরি ঘাট ঘিরে। ট্রাকচালকদের আড্ডা, যানবাহনের কোলাহল ও নদী পারাপারের তাড়া তখন ঘাটকে করে তুলেছিল দেশের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র। কিন্তু পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার শুরু হওয়ার পর সবকিছু এক নিমিষে বদলে যায়। পূর্বে ৭টি ফেরিঘাট দিয়ে দিনে ১৮-২০টি ছোট বড় ফেরি চলাচল করত। উভয় ঘাট মিলে প্রতিদিন অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় ১০ হাজার বিভিন্ন প্রকার যানবাহন নদী পারাপার হতো। এখন ফেরি গুলো অলস সময় কাঁটাচ্ছে। মাত্র ৭-৮ টি ছোট বড় ফেরি দিয়ে দৌলতদিয়া পাটুরিয়া ঘাট সচল রাখা হয়েছে। বর্তমান ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৪ হাজার বিভিন্ন প্রকার যানবাহন নদী পারাপার হয়ে থাকে।লঞ্চ ঘাটের চিত্র আরো করুন। পূর্বের সেই চিরচেনা চিত্র নেই। লঞ্চ ঘাটে যাত্রীদের কোলাহল আর চোখে পড়ে না। লাল পোশাক পরে দল বেঁধে কুলিদের দেখা মেলে না। হকারদের আনা গোনা নেই। ঘাটের চার পাশে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসে থাকে না কোন ভাসমান দোকান। একটি সময় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া লঞ্চ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন ১২-১৫ হাজার যাত্রী পারাপার হতো। পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় উভয় ঘাট মিলে এখন সর্বোচ্চ ৩ হাজার যাত্রী পারাপার হয়। এই পরিবর্তনের প্রভাবে দৌলতদিয়া পাটুরিয়া ঘাটের দুই পাশে জৌলুশ হারিয়েছে। দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাট কেন্দ্রীক অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। হোটেল, রেস্তোরাঁ, আবাসিক হোটেল, স্থায়ী ব্যবসায়ীরা লোকসানের কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। খালি পরে রয়েছে শত শত দোকান। স্থানীয় ব্যবসায়ী শহিদুল মিয়া বলেন, আগে দিন-রাত লাখ টাকার ব্যাচা বিক্রি হতো। এখন খরচ উঠানোই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণ করেছে ঠিকই কিন্তু আমাদের কর্মহীন করে তুলেছে। দীর্ঘদিন চা বিক্রেতা সাকাত হোসেন বলেন, আগে দিনে হাজার কাপ চা বিক্রি হতো, এখন ১০০ কাপও বিক্রি হয় না। বাধ্য হয়ে দোকান বন্ধের কথা ভাবছি।স্কুল শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, নতুন প্রজন্ম হয়তো কখনো কল্পনাও করতে পারবে না দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া ঘাটের একসময়কার ব্যস্ততা ও কোলাহল। তাঁর ভাষায়, এটা শুধু যাতায়াতের পথ ছিল না, বরং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ছিল। গোয়ালন্দের সংবাদপত্র এজেন্ট ও বাংলাদেশ সংবাদপত্র এজেন্ট এসোসিয়েশন কল্যান এর ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন আগের মতো পত্রিকা এখন দৌলতদিয়া ঘাটে চলে না। আগে আমার তিন-চার হকার হাজার পত্রিকা বিক্রি করতো এখন তার চার ভাগের এক ভাগ পত্রিকা চলে। প্রায় ২০ বছর যাবত দৌলতদিয়া ঘাটের সাথে কর্মরত সাদেকুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুতে রেল চালুর পর ফেরিঘাট আরও অচল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, লঞ্চঘাটের পুরোনো কাঠামো ভেঙে যাচ্ছে। এক সময়কার জাঁকজমকপূর্ণতা এখন পরিণত হয়েছে নির্জনতায়।এ যেন উন্নয়নের এক ভিন্ন চিত্র সময় বাঁচল বটে, কিন্তু হারিয়ে গেল হাজার হাজার মানুষের জীবিকা। একসময়ের প্রাণবন্ত দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট এখন কেবল ইতিহাসের অংশ, আর স্মৃতির পাতায় রয়ে গেছে তাদের জৌলুশময় দিনগুলো।দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের ম্যানেজার মো.নুরুল আনোয়ার মিলন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার যাত্রী এই ঘাট দিয়ে লঞ্চে পদ্মা পার হতো। তখন আমাদের ২২টি লঞ্চ দিয়েও যাত্রী পারাপারে হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু এখন প্রায় সময়ই বেশিরভাগ লঞ্চ বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে।সেতু চালুর পরও কিছুটা যাত্রী পাওয়া যেত। তবে সেতুতে রেল চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে ঘাট একেবারে যাত্রীশূন্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এই ঘাট দিয়ে সর্বোচ্চ এক হাজার থেকে দেড় হাজার যাত্রী পারাপার হয়।বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো.সালাউদ্দিন জানান, সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টায় শুধু দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্ত দিয়েই ৫ হাজারেরও বেশি যানবাহন পারাপার করা হতো। তখন ঘাট এলাকায় সব সময়ই যানবাহনের দীর্ঘ সিরিয়াল থাকতো।তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সবগুলো ফেরি সচল থাকলেও এখন ঘাটে গাড়ির জন্য ফেরিকে অপেক্ষা করতে হয়। ফলে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আর আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য নেই।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho