প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৯, ২০২৫, ১১:৩৭ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫, ৯:৩৫ পি.এম

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ঋণ পরিশোধ ও প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলার ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) টাইগারপাসস্থ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন।
সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ সামছুল হক, সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শওকত ওসমান এবং সহকারী সচিব এস এম হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন। সভায় চসিকের পক্ষে বিভাগীয় ও শাখা প্রধানবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
মেয়র বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অতীতের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পূর্বের মেয়রদের সময়ে ঘটা একটি দূর্নীতির ঘটনায় রাজস্ব বিভাগে ফিল্ডবুক ঘষামাজা করে দুই প্রতিষ্ঠানের ৪০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় দুই কর কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিনজনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পরিচ্ছন্ন বিভাগে দায়িত্বে অবহেলা করায় কয়েকজন কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কর্মচারীদের নিয়মিত উপস্থিতি ও দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই বিভিন্ন দপ্তর ও ওয়ার্ড অফিস পরিদর্শন করা হচ্ছে। নগরবাসী কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে কি না, তা সরেজমিনে যাচাই করা হচ্ছে।
হোল্ডিং ট্যাক্স ও রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, অতীতে অযৌক্তিকভাবে যেসব গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেগুলো যৌক্তিক করতে নিয়মিত রিভিউ বোর্ড বসানো হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে সঠিক ও ন্যায্যভাবে কর নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
মেয়র বলেন, রেলওয়ে, বন্দর, তেল কোম্পানি, বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেট সংস্থাগুলোকে অবশ্যই তাদের প্রাপ্য রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে। কারণ রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বর্তমানে যে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হচ্ছে, তা প্রকৃত পাওনার তুলনায় অনেক কম। যৌথ জরিপের মাধ্যমে প্রকৃত কর নির্ধারণের কাজ চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।
বন্দর বছরে ২৬৪ কোটি টাকার কর দেওয়ার কথা। সেখানে তারা দিচ্ছে মাত্র ৪৫ কোটি। আমাদের ন্যায্য যে হোল্ডিং ট্যাক্স (পৌর কর) সেটা পাচ্ছিনা। আমাদের সিটি করপোরেশনের অধীনে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। পুরো নগরীতে আমরা ওয়ার্ড পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি। বছরে প্রায় ৯৬ কোটি টাকা আমাদের জনস্বার্থে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
মেয়র বলেন, নগরীর সড়ক অবকাঠামোর নকশাগত ধারণক্ষমতা যেখানে সর্বোচ্চ ১০ টন, সেখানে বন্দরের ভারী যানবাহন নিয়মিতভাবে ২০ থেকে ৩৫ টন পর্যন্ত অতিরিক্ত ওজন বহন করে চলাচল করছে। একেকটি লরি অনুমোদিত সীমার তিন গুণেরও বেশি ওজন নিয়ে সড়ক ব্যবহার করছে, যা সড়কের স্বাভাবিক স্থায়িত্ব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
তিনি বলেন, একটি সড়কের গড় আয়ুষ্কাল যেখানে স্বাভাবিকভাবে তিন থেকে পাঁচ বছর থাকার কথা, সেখানে অতিরিক্ত ওজন বহনকারী এসব যানবাহনের কারণে সড়ক দ্রুত ভেঙে পড়ছে। এর ফলে প্রতি বছর শুধুমাত্র সড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। বন্দর থেকে সঠিক পরিমাণে হোল্ডিং ট্যাক্স পেলে সড়ক সংস্কার ঠিকমতো করা যাবে, যা বন্দরকে আরো সচল করবে।
চসিকের রাজস্ব বৃদ্ধি ও আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে অব্যবহৃত ও লোকসানি সম্পদ কাজে লাগানোর পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন মেয়র। তিনি জানান, পুরনো ভবন ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ, আধুনিক মার্কেট ও বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলা, মধ্যবিত্তদের জন্য আবাসন প্রকল্প গ্রহণ, আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেটের মাধ্যমে হকার পুনর্বাসন এবং পর্যটনভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে আর কারও ওপর নির্ভরশীল রাখা যাবে না। নিজেদের সম্পদ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করে চসিককে একটি স্বাবলম্বী ও টেকসই নগর সরকার হিসেবে গড়ে তুলাই আমাদের লক্ষ্য।
মেয়র আরো বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ লক্ষাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে ধারণা করা হলেও বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা দেড় লক্ষেরও কম। ফলে বিপুল পরিমাণ সম্ভাব্য রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।
কোচিং সেন্টারসহ সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেড লাইসেন্স এবং বিজ্ঞাপন বাবদ রাজস্ব আদায়ে জোরারোপ করা হচ্ছে। রাজস্ব আদায় জোরদার করতে লাইসেন্স ও হোল্ডিং শাখার কর কর্মকর্তা, উপকর কর্মকর্তা ও লাইসেন্স ইন্সপেক্টরদের ভেস্ট ও আইডি কার্ড প্রদান, নিয়মিত সভা, টার্গেট নির্ধারণ, প্রতিদিন মনিটরিং, সার্কেল অফিস পরিদর্শন ও মাঠপর্যায়ে ভিজিট বাড়ানো হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মহসিন মিলন
সম্পাদকীয় পরিষদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: নুরুজ্জামান লিটন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: রোকনুজ্জামান রিপন, নির্বাহী সম্পাদক: আব্দুল লতিফ, যুগ্ন নির্বাহী সম্পাদক: আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, সহকারী সম্পাদক: সাজ্জাদুল ইসলাম সৌরভ, মামুন বাবু, বার্তা সম্পাদক: নজরুল ইসলাম
সম্পাদকীয় কার্যালয়
বার্তা ও বানিজ্যক কার্যালয়: গাজীপুর আবাসিক এলাকা, বেনাপোল, যশোর। ইমেইল: mohsin.milon@gmail.com, bartakontho@gmail.com ফোন: ৭৫২৮৯, ৭৫৬৯৫ মোবা: ০১৭১১৮২০৩৯৪
All Rights Reserved © Barta Kontho