রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২৮ ঘন্টা বাঘের ডেরায়, রাত কেটেছে কেওড়া গাছের ডালে

জেলে নান্না মিয়া

শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি

বাঘের ডেড়ায় রুদ্ধশ্বাস ২৮ ঘন্টা পার করে অবশেষে সুন্দরবনের সুপতি এলাকার কেচুয়ারখালে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া জেলে নান্না মিয়া অক্ষত অবস্থায় নৌকায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছেন। বাঘ-সাপের ভয়ে সারা রাত ছিলেন বনের উচু কেওড়া গাছের ডালে। সকালে গাছ থেকে নেমে সারাদিন পথভুলে হেটেছেন বনে বনে। কখনো চিৎকার করে ডেকেছেন সঙ্গীয় জেলেদের। ভয়ংকর বনে কাটা আর লতায় হেটে হেটে ক্ষুধা আর কস্টে হয়েছেন নিস্তেজ। কিন্ত মনোবল হারাননি তিনি। হারিয়ে যাওয়ার স্থান থেকে অন্তত ১৫ কিঃমিঃ দুরে বনের লাঠিমারা চউড্ডারখাল এলাকায় মঙ্গলবার রাত ৯ টার দিকে এসে কান্নাজড়িত কন্ঠে সাথী জেলেদের নাম ধরে ডাকছিলেন তিনি। তখন তার ডাকে সারা দেন সেখানে অবস্থানরত নৌকার জেলে রিপন।

শরণখোলার মাছ ব্যাবসায়ী মো. ফেরদৌস খান জানান, সোমবার বিকেলে (২৫ মার্চ) সঙ্গীয় জেলেদের সাথে খালে মাছ ধরতে নেমে সবার অলক্ষে হারিয়ে যান শরণখোলা উপজেলার বকুলতলা গ্রামের নান্না মিয়া। অনেক খোজাখুজি করেও না পেয়ে সবার মাঝে ধারনা হয় কুমির অথবা বাঘের কবলে প্রান হারিয়েছেন তিনি। নান্না মিয়ার নিখোঁজের সংবাদ তার স্বজনদের মাঝে পৌছলে সবাই কান্নয় ভেঙ্গে পড়েন। রহস্যজনক এ হারিয়ে যাওয়া নিয়ে চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন বনবিভাগের লোকজন সহ জেলেরা।

সুন্দরবনের মাছ ব্যাবসায়ী মোঃ মাহবুবুর রহমান শেলু জানান, তার নৌকার চরপাটা জেলে নান্না মিয়া সহ ৪ জেলে সোমবার বিকেলে (পার্মীট করে) বনের কেচুয়ার খালে মাছ ধরতে নামেন। সবাই তারা জাল পাততে থাকেন কিন্ত হঠাৎ উধাও হয়ে যান নান্না মিয়া। তখন সবাই ভেবে ছিলেন তাকে কুমিরে নিয়ে গেছে। আবার কেউ কেউ ভাবছিলো তাকে বাঘে নিয়ে গেছে । পানিতে ও বনের মধ্যে তাে অনেক খোজাখুজি করা হয়। কোথাও তার কোন সন্ধান মিলছিলনা। সন্ধা ঘনিয়ে আসায় নৌকায় ফিরে আসে বাকি জেলেরা। পরের দিন মঙ্গলবার তিনি সহ ১০/১৫ জন জেলে মিলে নিখোজ হওয়া এলাকায় খুজতে থাকেন নান্না মিয়াকে। কোথাও কোন সন্ধান না পেয়ে আবারও হতাশ মনে সবাই নৌকায় গিয়ে আশ্রয় নেন।

এর মধ্যে রাত ৯ টার দিকে বনের চউড্ডার খালে নৌকায় অবস্থানরত জেলেরা শুনতে পান বনের মধ্যে মানুষের কান্নর শব্দ। তখন জেলেরা কাছে গিয়ে নান্না মিয়াকে দেখতে পান এবং দ্রুত নৌকায় তুলে খাবার খেতে দেন। এ সময় নান্না মিয়া আরও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বনে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ননা করেন। নান্না মিয়া জানান, খালে নেমে জালপাতার সময় তিনি কিছুটা অস্বস্তিবোধ করতে থাকলে কাউকে না বলে বনের উপড় উঠে আসেন এবং চেতনা হারিয়ে ফেলেন। তার জ্ঞান ফিরলে চারদিকে তাকিয়ে দেখেন অন্ধকার। তিন বাঘের ভয়ে একটি কেওড়া গাছে উঠে আশ্রয় নেন। সকালে গাছ থেকে নেমে ভয় এবং আতংকে পথ হারিয়ে ফেলেন। তিনি ১২/১৫ কিঃমিঃ পথ বনের মধ্যে হাটতে থাকনে। কখনো বাঘের ভয়ে শিহরিত হয়েছেন আবার ক্ষুধায়ও কাতর হয়েছেন। ভেবেছিলেন বাঘের পেটেই তার জীবন চলে যাবে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ষ্টেশন কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, বনে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোজ হওয়া জেলে নান্না মিয়ার সন্ধান মিলেছে। তাকে বন থেকে লোকালয়ে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

জনপ্রিয়

ঢাকায় দূতাবাস খুলবে আজারবাইজান

২৮ ঘন্টা বাঘের ডেরায়, রাত কেটেছে কেওড়া গাছের ডালে

প্রকাশের সময় : ০২:৪৩:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি

বাঘের ডেড়ায় রুদ্ধশ্বাস ২৮ ঘন্টা পার করে অবশেষে সুন্দরবনের সুপতি এলাকার কেচুয়ারখালে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া জেলে নান্না মিয়া অক্ষত অবস্থায় নৌকায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছেন। বাঘ-সাপের ভয়ে সারা রাত ছিলেন বনের উচু কেওড়া গাছের ডালে। সকালে গাছ থেকে নেমে সারাদিন পথভুলে হেটেছেন বনে বনে। কখনো চিৎকার করে ডেকেছেন সঙ্গীয় জেলেদের। ভয়ংকর বনে কাটা আর লতায় হেটে হেটে ক্ষুধা আর কস্টে হয়েছেন নিস্তেজ। কিন্ত মনোবল হারাননি তিনি। হারিয়ে যাওয়ার স্থান থেকে অন্তত ১৫ কিঃমিঃ দুরে বনের লাঠিমারা চউড্ডারখাল এলাকায় মঙ্গলবার রাত ৯ টার দিকে এসে কান্নাজড়িত কন্ঠে সাথী জেলেদের নাম ধরে ডাকছিলেন তিনি। তখন তার ডাকে সারা দেন সেখানে অবস্থানরত নৌকার জেলে রিপন।

শরণখোলার মাছ ব্যাবসায়ী মো. ফেরদৌস খান জানান, সোমবার বিকেলে (২৫ মার্চ) সঙ্গীয় জেলেদের সাথে খালে মাছ ধরতে নেমে সবার অলক্ষে হারিয়ে যান শরণখোলা উপজেলার বকুলতলা গ্রামের নান্না মিয়া। অনেক খোজাখুজি করেও না পেয়ে সবার মাঝে ধারনা হয় কুমির অথবা বাঘের কবলে প্রান হারিয়েছেন তিনি। নান্না মিয়ার নিখোঁজের সংবাদ তার স্বজনদের মাঝে পৌছলে সবাই কান্নয় ভেঙ্গে পড়েন। রহস্যজনক এ হারিয়ে যাওয়া নিয়ে চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন বনবিভাগের লোকজন সহ জেলেরা।

সুন্দরবনের মাছ ব্যাবসায়ী মোঃ মাহবুবুর রহমান শেলু জানান, তার নৌকার চরপাটা জেলে নান্না মিয়া সহ ৪ জেলে সোমবার বিকেলে (পার্মীট করে) বনের কেচুয়ার খালে মাছ ধরতে নামেন। সবাই তারা জাল পাততে থাকেন কিন্ত হঠাৎ উধাও হয়ে যান নান্না মিয়া। তখন সবাই ভেবে ছিলেন তাকে কুমিরে নিয়ে গেছে। আবার কেউ কেউ ভাবছিলো তাকে বাঘে নিয়ে গেছে । পানিতে ও বনের মধ্যে তাে অনেক খোজাখুজি করা হয়। কোথাও তার কোন সন্ধান মিলছিলনা। সন্ধা ঘনিয়ে আসায় নৌকায় ফিরে আসে বাকি জেলেরা। পরের দিন মঙ্গলবার তিনি সহ ১০/১৫ জন জেলে মিলে নিখোজ হওয়া এলাকায় খুজতে থাকেন নান্না মিয়াকে। কোথাও কোন সন্ধান না পেয়ে আবারও হতাশ মনে সবাই নৌকায় গিয়ে আশ্রয় নেন।

এর মধ্যে রাত ৯ টার দিকে বনের চউড্ডার খালে নৌকায় অবস্থানরত জেলেরা শুনতে পান বনের মধ্যে মানুষের কান্নর শব্দ। তখন জেলেরা কাছে গিয়ে নান্না মিয়াকে দেখতে পান এবং দ্রুত নৌকায় তুলে খাবার খেতে দেন। এ সময় নান্না মিয়া আরও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বনে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ননা করেন। নান্না মিয়া জানান, খালে নেমে জালপাতার সময় তিনি কিছুটা অস্বস্তিবোধ করতে থাকলে কাউকে না বলে বনের উপড় উঠে আসেন এবং চেতনা হারিয়ে ফেলেন। তার জ্ঞান ফিরলে চারদিকে তাকিয়ে দেখেন অন্ধকার। তিন বাঘের ভয়ে একটি কেওড়া গাছে উঠে আশ্রয় নেন। সকালে গাছ থেকে নেমে ভয় এবং আতংকে পথ হারিয়ে ফেলেন। তিনি ১২/১৫ কিঃমিঃ পথ বনের মধ্যে হাটতে থাকনে। কখনো বাঘের ভয়ে শিহরিত হয়েছেন আবার ক্ষুধায়ও কাতর হয়েছেন। ভেবেছিলেন বাঘের পেটেই তার জীবন চলে যাবে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ষ্টেশন কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, বনে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোজ হওয়া জেলে নান্না মিয়ার সন্ধান মিলেছে। তাকে বন থেকে লোকালয়ে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।