শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম কাস্টমসে বড় ধরনের রাজস্ব জালিয়াতি

মামুন বাবু ##

বন্ধ থাকা তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের বিআইএন (ব্যাবসা নিবন্ধন নম্বর) ব্যবহার এবং জাল কাগজপত্রের সাহায্যে বিদেশ থেকে কাপড় আমদানি করেছে একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র। উপরন্তু চক্রটি আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রায় পাওয়ার পর চট্টগ্রাম কাস্টমসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে শুল্ক-কর পরিশোধ না করেই পণ্যের খালাস নিয়েছে।

অথচ চট্টগ্রাম কাস্টমসের দায়েরকৃত মামলায় ওয়াসিফ নিট কম্পোজিট নামের বন্ধ থাকা তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটির মালিক নির্দোষ হয়েও ন্যায়বিচারের আশায় আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন, যা মোটেই কাম্য নয়। জানা গেছে, জালিয়াতির পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ওয়াসিফ নিট কম্পোজিটের প্যাড, স্ট্যাম্প ও স্বাক্ষরই শুধু জাল করা হয়নি; প্রতিষ্ঠানটির মালিকের ভুয়া এনআইডি নম্বরও ব্যবহার করা হয়েছে।

আশ্চর্যজনক হলো, কাস্টমস কর্তৃক নোটিশ পাওয়ার পর ওয়াসিফ নিট কম্পোজিটের মালিক আমীনুল ইসলাম চালানটি তিনি আমদানি করেননি বলে লিখিতভাবে উল্লেখ করে এর পক্ষে সব কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সব বিষয়ে একাত্মতা প্রকাশ করলেও তিনি আদৌ আদালতে গিয়েছেন কি না, তা যাচাই করেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে পাওয়া আদালতের রায় নিয়ে পণ্য খালাস করার বিষয়টি জালিয়াত চক্রের জন্য সহজ হয়েছে। আমরা মনে করি, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এ দায় এড়াতে পারে না। একইসঙ্গে ওয়াসিফ নিট কম্পোজিটের মালিককে দ্রুত হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে রেহাই দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস জাতীয় রাজস্ব আদায়ে একক বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি খাতে সরকারের রাজস্ব আয় বছরে অন্যূন ৪০ শতাংশ।

অথচ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি এ অফিসটি নিয়ন্ত্রণ করছে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী, যা মেনে নেওয়া কষ্টকর। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে নাকি প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার ঘুস আদায় হয়। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা টাকার বিনিময়ে পারেন না, এমন কোনো কাজ নেই। তাদের কারসাজিতে নদী হয় ‘পাহাড়’, পাহাড় হয়ে যায় ‘নদী’।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ফাইল দুর্নীতিবাজ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সহায়তায় গায়েব করে দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে অনিয়ম ও দুর্নীতি বিস্তার লাভ করায় একদিকে দেশের অর্থনীতিতে যেমন এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, অন্যদিকে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি বন্ধ করতে এ প্রতিষ্ঠান থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও দারিদ্র্য বিমোচনের প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। সুতরাং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। দুর্নীতি রোধ করতে পারলে আমাদের বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতাও অনেকাংশে কমে আসবে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত করার পাশাপাশি ওয়াসিফ নিট কম্পোজিটের নির্দোষ মালিকের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে-এটাই প্রত্যাশা।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

রাজনীতিতে নাম লেখাতে যাচ্ছেন সানিয়া মির্জা

চট্টগ্রাম কাস্টমসে বড় ধরনের রাজস্ব জালিয়াতি

প্রকাশের সময় : ০৪:৫৫:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী ২০২১

মামুন বাবু ##

বন্ধ থাকা তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের বিআইএন (ব্যাবসা নিবন্ধন নম্বর) ব্যবহার এবং জাল কাগজপত্রের সাহায্যে বিদেশ থেকে কাপড় আমদানি করেছে একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র। উপরন্তু চক্রটি আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রায় পাওয়ার পর চট্টগ্রাম কাস্টমসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে শুল্ক-কর পরিশোধ না করেই পণ্যের খালাস নিয়েছে।

অথচ চট্টগ্রাম কাস্টমসের দায়েরকৃত মামলায় ওয়াসিফ নিট কম্পোজিট নামের বন্ধ থাকা তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটির মালিক নির্দোষ হয়েও ন্যায়বিচারের আশায় আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন, যা মোটেই কাম্য নয়। জানা গেছে, জালিয়াতির পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ওয়াসিফ নিট কম্পোজিটের প্যাড, স্ট্যাম্প ও স্বাক্ষরই শুধু জাল করা হয়নি; প্রতিষ্ঠানটির মালিকের ভুয়া এনআইডি নম্বরও ব্যবহার করা হয়েছে।

আশ্চর্যজনক হলো, কাস্টমস কর্তৃক নোটিশ পাওয়ার পর ওয়াসিফ নিট কম্পোজিটের মালিক আমীনুল ইসলাম চালানটি তিনি আমদানি করেননি বলে লিখিতভাবে উল্লেখ করে এর পক্ষে সব কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সব বিষয়ে একাত্মতা প্রকাশ করলেও তিনি আদৌ আদালতে গিয়েছেন কি না, তা যাচাই করেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে পাওয়া আদালতের রায় নিয়ে পণ্য খালাস করার বিষয়টি জালিয়াত চক্রের জন্য সহজ হয়েছে। আমরা মনে করি, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এ দায় এড়াতে পারে না। একইসঙ্গে ওয়াসিফ নিট কম্পোজিটের মালিককে দ্রুত হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে রেহাই দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস জাতীয় রাজস্ব আদায়ে একক বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি খাতে সরকারের রাজস্ব আয় বছরে অন্যূন ৪০ শতাংশ।

অথচ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি এ অফিসটি নিয়ন্ত্রণ করছে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী, যা মেনে নেওয়া কষ্টকর। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে নাকি প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার ঘুস আদায় হয়। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা টাকার বিনিময়ে পারেন না, এমন কোনো কাজ নেই। তাদের কারসাজিতে নদী হয় ‘পাহাড়’, পাহাড় হয়ে যায় ‘নদী’।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ফাইল দুর্নীতিবাজ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সহায়তায় গায়েব করে দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে অনিয়ম ও দুর্নীতি বিস্তার লাভ করায় একদিকে দেশের অর্থনীতিতে যেমন এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, অন্যদিকে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি বন্ধ করতে এ প্রতিষ্ঠান থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও দারিদ্র্য বিমোচনের প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। সুতরাং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। দুর্নীতি রোধ করতে পারলে আমাদের বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতাও অনেকাংশে কমে আসবে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত করার পাশাপাশি ওয়াসিফ নিট কম্পোজিটের নির্দোষ মালিকের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে-এটাই প্রত্যাশা।