
নুরুজ্জামান লিটন ।।
“আজ ছুটি হলো?” – কি যে এক অদ্ভুত, অপার্থিব আনন্দের অভিব্যক্তি সবার চোখে!!
এখানে ডাক্তার থেকে শুরু করে সবাই ডিসচার্জড হওয়াকে ছুটি বলে। এই রকম ছুটির অভিজ্ঞতা আমার এই প্রথম। যে নার্স আমার মেয়ের ক্যানোলা খুলছিল তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম এই ওয়ার্ডে বাচ্চাদের এত কষ্ট দেখতে কষ্ট হয় না আপনাদের? উত্তরে তিনি বললেন কষ্টগুলি সব ম্লান হয়ে যায় যখন এক একটা বাচ্চা সুস্থ হয় আর আমরা ছুটি দেয়ার জন্য তাদের রেডী করি!! আলহামদুলিল্লাহ্!!! এই ছুটি প্রতিটি মায়ের জন্য, প্রতিটি বাবার জন্য, প্রতিটি শুভাকাঙ্ক্ষীর জন্য আল্লাহ্পাকের দেয়া এক অনন্য উপহার। আল্লাহ্ সকল বাচ্চাকে সুস্থ রাখুন, আমাদের সকলকে হেফাজতে রাখুন।
মেয়ের ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে এপোলো হসপিটালে ভর্তি ছিলাম আট দিন। আট দিনে আমার সাড়ে তিন বছরের অবুঝ বাচ্চার যে কষ্ট (হাতের ক্যানোলায় সারাক্ষণ চলতে থাকা স্যালাইন, রক্ত পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন স্যাম্পল দেয়া, রক্তের স্যাম্পল দেয়ার সময় মা-বাবা যে বুকের তলায় চেপে ধরে রেখেছে সেই কষ্ট আর আশ্রয়হীনতায় বাচ্চার মানসিকভাবে ট্রমাটাইজড হওয়া) তা আমার আগের সব কষ্টকে ছাড়িয়ে গেছে। তাই চাই আল্লাহ্ সবাইকে হেফাজতে রাখুন।
মহামারী আকারে ছড়িয়েছে এই জ্বর। জীবনের ঝুঁকি খুব বেশি না থাকলেও সাম্প্রতিক বেশ কিছু জীবনহানি সবাইকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে শঙ্কিত সবাই। সবচেয়ে বড় কথা এই জ্বরের যে কষ্ট আর যে চিকিত্সা পদ্ধতি তা একটা ছোট বাচ্চার জন্য দুর্বিষহ। আর তখন বাবা মায়ের অসহায়ত্ব আর ব্যথা বর্ণনাতীত।
কারও কারও অনুরোধে তাই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শেয়ার করছি এই লেখায়। কারণ আমার মনে হয়েছে সচেতনতা, সাবধানতা আর সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আমাদেরকে রক্ষা করবে ইনশাআল্লাহ্। যে কোন চিকিত্সার জন্য নিজেকে একজন চিকিত্সকের কাছে তুলে দেওয়া আর বাচ্চাকে তুলে দেওয়ার মধ্যে যে পার্থক্য তা এবারে খুব ভালো করে বুঝেছি। তাই হাসপাতাল এবং তারও আগে কোন্ ডাক্তারের অধীনে ভর্তি করাবেন সেটা ভেবে নেয়া জরুরি। এই জ্বরে জরুরি এবং সার্বক্ষণিক সেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রচন্ড জ্বর আর আপনার সারাক্ষণই চলমান বাচ্চার চোখ বন্ধ হয়ে নিশ্চুপ হয়ে যাওয়া দেখামাত্রই দেরি না করে সোজা হসপিটাল। যদি মনে হয় বাচ্চার ওজন অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় লিকুইড খাবার দিতে আপনি পারছেন না এবং বাচ্চার ফ্লুইড আউটপুট (প্রস্রাবের পরিমাণ) কমে গেছে তাহলে হসপিটাল না চাইলেও ভর্তি হয়ে যাবেন কারণ তখন অবশ্যই স্যালাইন করতে হবে।
যদি আল্লাহ্ র রহমতে ভালো ডাক্তার পেয়ে যান (যেমনটা আমরা পেয়েছিলাম, ধন্যবাদ জানাই এপোলো হসপিটালের শিশু বিশেষজ্ঞ ড. কামরুল হাসান স্যার কে) তাহলে তিনি অবশ্যই কেবলমাত্র প্লাটিলেট কনসার্ন না হয়ে ব্লাডের কমপ্লিট কাউন্ট, লিভার ফাংশন, ব্লাড প্রেশার, পালস রেট, কিডনি কনডিশন, ওজন অনুযায়ী ফ্লুইড ইনটেকসহ অন্যান্য রিলেটেড আরও সকল বিষয়ই সার্বক্ষণিক মনিটর করবেন। আর এ সকল বিষয় মনিটর করছেন কিনা তা এনসিওর করার দায়িত্ব আপনার।
বাচ্চা মুখে লিকুইড ইনটেক করবে বেশি। মুখে বেশি লিকুইড ইনটেক এনসিওর করা গেলে স্যালাইনের মাধ্যমে লিকুইড দেয়া হিসেব অনুযায়ী কমিয়ে দিতে হবে। বাচ্চার ওজন অনুযায়ী ফ্লুইড এর সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক কষ্ট কমাতে কিছু রিক্রিয়েশন (প্রিয় খেলনা, প্রিয় মানুষ) এর ব্যবস্থা রাখা উচিত।
সঠিক সময়ে সচেতনতার সাথে সঠিক সিদ্ধান্ত সব সময়ই মঙ্গল। অনেক বড় একটা লেখা। কষ্ট করে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আজ আবার ব্লাড স্যাম্পল দিতে হবে। দোয়া করবেন সবাই। ছুটি সব সময়ই আনন্দের। আর হাসপাতাল থেকে রোগ নিরাময়ের পরের ছুটি আল্লাহ্ র অসীম রহমত। মঙ্গল হোক সবার।
নিজস্ব সংবাদদাতা 







































