মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাঝবয়সের পর ধীরে হাঁটা ‘বৃদ্ধ হওয়ার লক্ষণ’

রোকনুজ্জামান রিপন :=

প্রত্যেক মানুষেরই স্বাস্থ্যের প্রতি বাড়তি সতর্কতা দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তবে বয়স একটু বেড়ে গেলে সেই সতর্কতাও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে হবে। মাঝবয়সে অর্থ্যাৎ বয়স চল্লিশ পার হলে আপনি কত দ্রুত হাঁটতে পারছেন তার মাধ্যমে জানা যাবে আপনার মগজ এবং শরীরের বয়স কত দ্রুত বাড়ছে বা বাড়ছে না। অর্থ্যাৎ হাঁটার গতি পর্যালোচনা করে জানা যাবে আপনি কত দ্রুত বৃদ্ধ হবেন।

হাঁটার গতির ওপর সহজ এক পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা কত দ্রুত বয়স বাড়ছে সেটা পরিমাপ করে এ তথ্য দিয়েছেন। যারা ধীরে হাঁটেন তারা যে শুধু তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যান তাই নয়, তাদের মুখও দেখায় বুড়োটে এবং তাদের মস্তিষ্কের আকৃতিও ছোট হয়ে যায়। খবর বিবিসির।

আন্তর্জাতিক গবেষকদের দলটি বলেছে, তাদের এই গবেষণার ফলাফল ‘দারুণ চমকপ্রদ’। চিকিৎসকরা সাধারণত হাঁটার গতি ও ভঙ্গী দেখে কারো স্বাস্থ্যের সার্বিক অবস্থা বুঝতে পারেন, বিশেষ করে ৬৫ বছরের বেশি বয়স যাদের। কারণ হাঁটার গতিপ্রকৃতি থেকে মাংসপেশীর শক্তি, ফুসফুসের সুস্থতা, মেরুদণ্ডের শক্তি এবং দৃষ্টিশক্তির উজ্জ্বলতা বোঝা যায়।

বৃদ্ধ বয়সে হাঁটার গতি ধীর হয়ে যাওয়ার সঙ্গে স্মৃতিভ্রমের যোগাযোগও করেছেন কোনো কোনো বিজ্ঞানী।

এই গবেষণা চালানো হয়েছে নিউজিল্যাণ্ডে এক হাজার লোকের ওপর। যাদের জন্ম ১৯৭০ এর দশকে। ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের সবরকম তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের হাঁটার গতিপ্রকৃতির ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে আগে থেকেই।

এই গবেষণায় যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করা হতো, বিভিন্ন সময়ে তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার পরীক্ষা নেয়া হতো এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্ক্যান করা হতো। তাদের শিশু বয়স থেকে প্রতি দুবছর অন্তর বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তাশক্তির সক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখা হতো।

লণ্ডনের কিংস কলেজ এবং আমেরিকার ডিউক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং এই গবেষণা পত্রের প্রধান লেখক টেরি মফিট বলেন, ‘এই গবেষণায় দেখা গেছে বৃদ্ধ বয়স হওয়ার আগেই ধীরগতিতে হাঁটা সমস্যার প্রতি একটা ইঙ্গিত। এমনকী ৪৫ বছর বয়সী যারা ধীরে হাঁটেন তাদের মধ্যেও হাঁটার গতিতে বিস্তর ফারাক দেখা যায়।’

তবে তার কথায় আসল বিষয়টা হল, যাদের হাঁটার গতি যত ধীর হয়ে যায় তাদের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াও তত দ্রুততা পায়। তাদের ফুসফুসের ক্ষমতা, দাঁতের অবস্থা এবং রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা যারা দ্রুত হাঁটেন তাদের থেকে খারাপ হয়ে যায়।

এই গবেষণায় সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত যে ফলাফল পাওয়া গেছে তা হলো মস্তিষ্কের স্ক্যান থেকে দেখা গেছে যাদের হাঁটার গতি যত ধীর হয়ে গেছে, তাদের মস্তিষ্কের বয়স তত বেশি বেড়ে গেছে।

গবেষকরা আরও দেখেছেন, মাত্র তিন বছর বয়সে মানুষের বুদ্ধি, ভাষা ও স্নায়বিক দক্ষতা পরীক্ষা করে তারা নির্ধারণ করতে পারেন ৪৫ বছর বয়সে তাদের হাঁটার গতি কী হবে।

তারা বলছেন, চল্লিশের বেশি বয়সে যাদের হাঁটার গতি ধীর হয়ে যায়, শিশুকালে তাদের আই.কিউ. (বুদ্ধিমত্তার মাপকাঠি) যারা ৪৫ বছরেও দ্রুত হাঁটেন তাদের থেকে ১২ পয়েন্ট কম ছিল।

আন্তর্জাতিক গবেষক দল তাদের গবেষণা ফলাফলে লিখেছেন, স্বাস্থ্য এবং বুদ্ধিমত্তার মধ্যে পার্থক্যের একটা কারণ শিশুকাল থেকে জীবনযাপনের মান। জীবনের শুরুতে যারা ভাল মানের জীবনযাপনের সুযোগ পেয়েছেন তাদের বুদ্ধিমত্তা ও স্বাস্থ্যের ওপর তার একটা প্রভাব পড়েছে।

গবেষকরা বলছেন, অল্প বয়সে হাঁটার গতি পরিমাপ করে মানুষের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধীরগতি করার পদ্ধতি বা চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা সম্ভব। নিচু ক্যালরির খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে মেটফরমিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার উপযোগিতা নিয়ে এখন গবেষণা চালানো হচ্ছে।

তারা বলছেন, এই গবেষণার ফলাফল বয়স কম এবং স্বাস্থ্য ভাল থাকা অবস্থায় মানুষকে মস্তিষ্কের বয়স বাড়া বা সাধারণভাবে স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য জীবনযাপনের মান বদলানোর বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে সাহায্য করবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

জনপ্রিয়

সিরাজগঞ্জ সিজেডএমের উদ্যোগে ৬০০ হতদরিদ্রের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের কৈজুরি পাথালিয়াপাড়া এলাকায় সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) এর জীবিকা উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে ৬০০ হতদরিদ্র নারী ও পুরুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৈজুরি বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও কৈজুরি মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক মাওলানা মো. জয়নাল আবেদীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন একই মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল খালেক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিজেডএমের জীবিকা উন্নয়ন কেন্দ্র, শাহজাদপুর উপজেলা শাখার প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মো. ইসমাইল হক। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন একাউন্টস অ্যান্ড অ্যাডমিন অফিসার হাফিজুর রহমান, ফিল্ড অফিসার মো. শহিদুল ইসলামসহ জীবিকা উন্নয়ন কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। শীতবস্ত্র পেয়ে উপকারভোগী নারী ও পুরুষরা সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং শীত মৌসুমে এ সহায়তাকে সময়োপযোগী ও মানবিক উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেন।

মাঝবয়সের পর ধীরে হাঁটা ‘বৃদ্ধ হওয়ার লক্ষণ’

প্রকাশের সময় : ০৪:৫৩:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৯
রোকনুজ্জামান রিপন :=

প্রত্যেক মানুষেরই স্বাস্থ্যের প্রতি বাড়তি সতর্কতা দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তবে বয়স একটু বেড়ে গেলে সেই সতর্কতাও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে হবে। মাঝবয়সে অর্থ্যাৎ বয়স চল্লিশ পার হলে আপনি কত দ্রুত হাঁটতে পারছেন তার মাধ্যমে জানা যাবে আপনার মগজ এবং শরীরের বয়স কত দ্রুত বাড়ছে বা বাড়ছে না। অর্থ্যাৎ হাঁটার গতি পর্যালোচনা করে জানা যাবে আপনি কত দ্রুত বৃদ্ধ হবেন।

হাঁটার গতির ওপর সহজ এক পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা কত দ্রুত বয়স বাড়ছে সেটা পরিমাপ করে এ তথ্য দিয়েছেন। যারা ধীরে হাঁটেন তারা যে শুধু তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যান তাই নয়, তাদের মুখও দেখায় বুড়োটে এবং তাদের মস্তিষ্কের আকৃতিও ছোট হয়ে যায়। খবর বিবিসির।

আন্তর্জাতিক গবেষকদের দলটি বলেছে, তাদের এই গবেষণার ফলাফল ‘দারুণ চমকপ্রদ’। চিকিৎসকরা সাধারণত হাঁটার গতি ও ভঙ্গী দেখে কারো স্বাস্থ্যের সার্বিক অবস্থা বুঝতে পারেন, বিশেষ করে ৬৫ বছরের বেশি বয়স যাদের। কারণ হাঁটার গতিপ্রকৃতি থেকে মাংসপেশীর শক্তি, ফুসফুসের সুস্থতা, মেরুদণ্ডের শক্তি এবং দৃষ্টিশক্তির উজ্জ্বলতা বোঝা যায়।

বৃদ্ধ বয়সে হাঁটার গতি ধীর হয়ে যাওয়ার সঙ্গে স্মৃতিভ্রমের যোগাযোগও করেছেন কোনো কোনো বিজ্ঞানী।

এই গবেষণা চালানো হয়েছে নিউজিল্যাণ্ডে এক হাজার লোকের ওপর। যাদের জন্ম ১৯৭০ এর দশকে। ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের সবরকম তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের হাঁটার গতিপ্রকৃতির ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে আগে থেকেই।

এই গবেষণায় যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করা হতো, বিভিন্ন সময়ে তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার পরীক্ষা নেয়া হতো এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্ক্যান করা হতো। তাদের শিশু বয়স থেকে প্রতি দুবছর অন্তর বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তাশক্তির সক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখা হতো।

লণ্ডনের কিংস কলেজ এবং আমেরিকার ডিউক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং এই গবেষণা পত্রের প্রধান লেখক টেরি মফিট বলেন, ‘এই গবেষণায় দেখা গেছে বৃদ্ধ বয়স হওয়ার আগেই ধীরগতিতে হাঁটা সমস্যার প্রতি একটা ইঙ্গিত। এমনকী ৪৫ বছর বয়সী যারা ধীরে হাঁটেন তাদের মধ্যেও হাঁটার গতিতে বিস্তর ফারাক দেখা যায়।’

তবে তার কথায় আসল বিষয়টা হল, যাদের হাঁটার গতি যত ধীর হয়ে যায় তাদের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াও তত দ্রুততা পায়। তাদের ফুসফুসের ক্ষমতা, দাঁতের অবস্থা এবং রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা যারা দ্রুত হাঁটেন তাদের থেকে খারাপ হয়ে যায়।

এই গবেষণায় সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত যে ফলাফল পাওয়া গেছে তা হলো মস্তিষ্কের স্ক্যান থেকে দেখা গেছে যাদের হাঁটার গতি যত ধীর হয়ে গেছে, তাদের মস্তিষ্কের বয়স তত বেশি বেড়ে গেছে।

গবেষকরা আরও দেখেছেন, মাত্র তিন বছর বয়সে মানুষের বুদ্ধি, ভাষা ও স্নায়বিক দক্ষতা পরীক্ষা করে তারা নির্ধারণ করতে পারেন ৪৫ বছর বয়সে তাদের হাঁটার গতি কী হবে।

তারা বলছেন, চল্লিশের বেশি বয়সে যাদের হাঁটার গতি ধীর হয়ে যায়, শিশুকালে তাদের আই.কিউ. (বুদ্ধিমত্তার মাপকাঠি) যারা ৪৫ বছরেও দ্রুত হাঁটেন তাদের থেকে ১২ পয়েন্ট কম ছিল।

আন্তর্জাতিক গবেষক দল তাদের গবেষণা ফলাফলে লিখেছেন, স্বাস্থ্য এবং বুদ্ধিমত্তার মধ্যে পার্থক্যের একটা কারণ শিশুকাল থেকে জীবনযাপনের মান। জীবনের শুরুতে যারা ভাল মানের জীবনযাপনের সুযোগ পেয়েছেন তাদের বুদ্ধিমত্তা ও স্বাস্থ্যের ওপর তার একটা প্রভাব পড়েছে।

গবেষকরা বলছেন, অল্প বয়সে হাঁটার গতি পরিমাপ করে মানুষের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধীরগতি করার পদ্ধতি বা চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা সম্ভব। নিচু ক্যালরির খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে মেটফরমিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার উপযোগিতা নিয়ে এখন গবেষণা চালানো হচ্ছে।

তারা বলছেন, এই গবেষণার ফলাফল বয়স কম এবং স্বাস্থ্য ভাল থাকা অবস্থায় মানুষকে মস্তিষ্কের বয়স বাড়া বা সাধারণভাবে স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য জীবনযাপনের মান বদলানোর বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে সাহায্য করবে।