
আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান:/=
২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঋণ দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে সেবা খাত হিসেবে বাংলাদেশ বিমানেরই রয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এ নিয়ে গতকাল পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পোদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। ঋণ বিতরণের নীতিমালায় বলা হয়েছিল কোনো ঋণখেলাপি হলে প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ওই ঋণের উদ্যোক্তা ঋণ পাবেন না। অপর দিকে, ২০১৯ সালের মধ্যে মঞ্জুর করা চলতি মূলধনের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ঋণ নিতে পারবেন উদ্যোক্তারা। সার্কুলারের সব নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রকৃত উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে কি না তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য শর্ত দিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো কোম্পানি বা উদ্যোক্তা ঋণের জন্য আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক প্রথমে সার্কুলার অনুসারে যাচাই-বাছাই করবে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠাতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত এপ্রিল মাসে এ প্যাকেজ ঘোষণা করলেও ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ আসে, অনেকেই ঋণের জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু ব্যাংকগুলো অনুমোদন দিচ্ছে না। বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর প্রণোদনার প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়। বলা হয়, যারাই ঋণের জন্য আবেদন করেছেন, যাচাই-বাছাই করে ঋণ পাওয়ার যোগ্য হলে দ্রুত ঋণ ছাড় করতে হবে। আর যদি ঋণ পাওয়ার যোগ্য না হন, তাহলেও দ্রুত গ্রাহককে তা অবহিত করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমন নির্দেশনা পাওয়ার পর ব্যাংকগুলো অনেকটা নড়েচড়ে বসে। তারা বিভিন্ন গ্রাহক থেকে প্রাপ্ত ঋণের প্রস্তাব নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে অনুমোদন নিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠাতে শুরু করেছে। তবে, যেভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা উদ্যোক্তারা আশা করছেন সেই গতিতে দেয়া হচ্ছে না।
ব্যাংকগুলো তহবিল সঙ্কটের কারণে প্রণোদনার প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে অসুবিধা হচ্ছে বলে প্রথমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার অর্ধেক অর্থাৎ ১৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়। অপর দিকে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। ব্যাংকগুলোর আর্থিক সঙ্কটের দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ হাজার কোটি টাকার জোগান দেয়ার ঘোষণা দেয়। ফলে ৫০ হাজার কোটি টাকার অর্ধেক অর্থাৎ ২৫ হাজার কোটি টাকাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জোগান দেয়া হবে। কিন্তু এর পরেও ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ঋণ বিতরণে অনীহা প্রদর্শন করছে। বলা হচ্ছে এ মুহূর্তে ঋণ দিলে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার আরো বেড়ে যাবে। কারণ, ব্যাংকগুলো কোনো গ্রাহককে ঋণ দিলে অর্ধেক বাংলাদেশ ব্যাংক জোগান দেবে। কিন্তু দিন শেষে ঋণ ফেরত না পেলে ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান খেলাপি ঋণ আরো বেড়ে যাবে। অপর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে থাকা ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট থেকে দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন তহবিল সমন্বয় করবে। এতে উভয় সঙ্কটে পড়বে ব্যাংকগুলো। এ কারণেই চলমান অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের ঋণ বিতরণে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো।
নিজস্ব সংবাদদাতা 






































