
শাহজালাল সম্রাট ## যশোরের শার্শায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ করোনার টিকা নিচ্ছেন। দিন দিন টিকাদান কেন্দ্রে ভিড় বাড়ছে বলে দাবি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ৬০ জনকে টিকাদানের মাধ্যমে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। শনিবার (১৪ মার্চ) পর্যন্ত উপজেলায় মোট আট হাজার ৯১৯ নারী-পুরুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ জেসমিন আকতার। যা যশোর জেলার মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে সর্বাধিক। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টিকা দেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে সাহস পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলি বলেন, স্থানীয় এমপি শেখ আফিল উদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু, বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসনা শারমিন মিথি, সাংবাদিক, রাজনীতিকসহ উপজেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা টিকা নিয়েছেন। এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে টিকা কেন্দ্রে হু হু করে লোক আসতে শুরু করেছে। মানুষের মনে যে শঙ্কা ছিল তা কেটে গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, টিকা গ্রহণকারীরা সকাল থেকে কেন্দ্রে ভিড় করছেন। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূর সামটা গ্রাম থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা নিতে এসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব ফতেমা বেগম। তিনি এবং তার দুই ছেলে মুকুল হোসেন ও মিকাইল হোসেন টিকা নেন।
ফতেমা বলেন, ‘করোনার টিকা নিয়ে গুজবে ভয় পেয়েলাম। এই জন্যি প্রথমে টিকা নিতি সাহস পাইনি। কিন্তু দেখলাম সবই বাজে কথা। দেশের লাখ লাখ মানুষ টিকা নোয়ার পরও ভালো (সুস্থ) আছে। তাই ছেলেদের দিয়ে নিবন্ধন করে টিকা নিলাম। টিকা নোয়ার পর আমরা তিনজনই সুস্থ আছি।’
শনিবার সকালে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেবা সহজীকরণ করতে টিকাদান কেন্দ্রতেই ফ্রি রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। গ্রহণকারীরা ভোটার আইডি কার্ড ও একটি সচল মোবাইল ফোন নিয়ে রেজিস্ট্রেশন বুথে যাচ্ছেন। সেখানে স্বেচ্ছাসেবকরা রেজিস্ট্রেশন করিয়ে তাদের কার্ড সরবরাহ করছেন। পরে তারা একজন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিয়ে টিকা নিচ্ছেন।
বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বলেন, ‘আমি পরিষদের সবাইকে নিয়ে টিকা নিতে এসেছি। সবাই টিকা নিলাম। কারো কোনো সমস্যা হয়নি।’
টিকা নেওয়ার পর কেমন আছেন- জানতে চাইলে যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, ‘খুব ভালো আছি। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। হাসপাতালে যেয়েই সহজেই টিকা নিয়েছি। গুজবে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। সবাই করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন, নিরাপদ থাকুন।’
বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সদস্য মশিয়ার রহমান টিকা নিয়েছেন দশ দিন আগে। তিনি বলেন, ‘টিকা নেওয়ার পর দিন শরীরে একটু ব্যথা ব্যথা অনুভব করেছিলাম। বিশ্রামে থাকায় পর দিনই তা সেরে গেছে। তারপর থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম করে বেড়াচ্ছি।’
সবাইকে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সাংবাদিক রাশেদুর রহমান রাশু বলেন, ‘টিকা নিয়ে নিজেকে অনেক হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে, অনেক বড় একটা বোঝা নেমে গেল। কোনো টেনশনের কারণ নেই। কোনো ব্যথাও পাইনি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইউসুফ আলি বলেন, ‘শনিবার (১৪ মার্চ) পর্যন্ত আট হাজার ৯১৯ জন নারী-পুরুষ টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ছয় হাজার ১০৭ জন ও নারী দুই হাজার ৮১২। এখন পর্যন্ত শার্শা উপজেলায় রেজিস্ট্রেশন করেছেন প্রায় ১২ হাজারের মত। এ পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন তাদের সাধারণত একটু মাথা ব্যথা ও সামান্য জ্বর ছাড়া তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখেছি, সবাই সুস্থ আছেন। দিনকে দিন টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ছে।’
2 Attachments
নিজস্ব সংবাদদাতা 



















