সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বনগাও মহাকুমায় বিধানসভার নির্বাচনে পুলিশ-বিজেপি সংঘর্ষ

কোলকাতা ব্যুরো ##

পশ্চিমবংগের বনগাও  বাগদা বিধানসভার রণঘাট অঞ্চলের ৩৫ ও ৩৬ নম্বর বুথ। সকাল থেকে নিশ্চিন্তে ভোট হচ্ছিল। শান্তিতে ভাটা পড়ল বেলা গড়িয়ে। জমায়েত সরাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসা, গুলি। দুই পুলিস অফিসার ও কর্মী সহ জখম আরও তিনজন গ্রামবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দুপুরের পর থেকে বুথের ২০০ মিটারের মধ্যে বিজেপি ক্যাম্প করেছিল। ক্যাম্পে অনেক মানুষের জমায়েত হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা এবং তৃণমূলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো হলে পরিস্থিতি সামলাতে আসেন স্থানীয় নির্বাচনী আধিকারিক এবং বাগদা থানার পুলিস। জমায়েত ফাঁকা করতে বললে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা তা মানেননি বলে অভিযোগ। তা নিয়ে সেক্টর অফিসার ও পুলিসের সঙ্গে বচসা চরমে পৌঁছায়। বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের কাছে ধারালো অস্ত্র ছিল বলে অভিযোগ। তাঁদের অস্ত্রের আঘাতে জখম হন বাগদা থানার ওসি উৎপল সাহা এবং এক কনস্টেবল। ওসির মাথায় কোপ লেগেছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে লাঠিচার্জ শুরু হয়। চালানো হয় গুলি। তাতে তিন গ্রামবাসী জখম হন। তাঁদের দলীয় কর্মী বলে দাবি করেছে বিজেপি। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে প্রথমে বাগদা গ্রামীণ হাসপাতাল এবং পরে বনগাঁ মহাকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের নাম মৃত্যুঞ্জয় সাঁতরা ও বুধো সাঁতরা। তৃতীয়জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসের অবশ্য দাবি, পুলিস অকারণে গুলি চালিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, স্থানীয় পুলিস তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে। মানুষ রুখে দাঁড়াতেই সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে পুলিস। যদিও বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কমিশন জানিয়েছে, গুলি চালান জরুরি ছিল। কমিশনের পক্ষ থেকে সিইও আরিজ আফতাব বলেন, সেক্টর অফিসারের ওপর হামলা হয়। তাঁকে বাঁচাতে যান ওসি। তখন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের উপর হামলা হয়। তাই গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিস। বিশেষ রাজনৈতিক দলের ২৫০ জন সমর্থক ছিলেন। ওসির সঙ্গে এক কনস্টেবলও গুরুতরভাবে জখম হয়েছেন। তিন রাউন্ড গুলি চলেছে। একজনের হাতে লেগেছে। জখম হয়েছেন মোট তিনজন।
অন্যদিকে, এদিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের জনাকীর্ণ এলাকা। সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯২ এবং ৯৩ নম্বর বুথ ঘিরে গন্ডগোল বাধে। স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মণ্ডল, শাহাবউদ্দিন মণ্ডল, সুধীর প্রামাণিক, দীনবন্ধু দলপতিদের অভিযোগ, একটি দোকানে ৩-৪ জন গ্রামবাসী বসেছিল। সেখানে এসে কোনও কিছু না শুনেই অতর্কিতে হামলা করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বিশাল পুলিস বাহিনী গিয়ে সামাল দেয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল রায়। তিনি বলেন, অনেক জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতি সক্রিয়তার অভিযোগ সামনে এসেছে। কমিশনকে বিষয়টি জানিয়েছি।
এই দু’টি ঘটনা বাদ দিলে মোটের উপর বনগাঁ মহকুমার চার কেন্দ্র (বনগাঁ উত্তর ও দক্ষিণ, বাগদা এবং গাইঘাটা) নির্বাচন মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ছিল। সকালের দিকে দু’-একটি জায়গা থেকে ইভিএম খারাপের খবর মিলেছিল। করোনাবিধি মেনেই ভোটদানের ছবি দেখা গিয়েছে বিভিন্ন বুথে। নির্দিষ্ট দূরত্ববিধি মেনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। নারিকেলা গাইঘাটা লক্ষীনারায়ণ প্রাথমিক বিশ্ববিদ্যালয়, রায়পুর বিদ্যালয় চত্বরে সামাজিক দূরত্ব মেনে লাইনে দেখা গিয়েছে ভোটারদের। আবার, সুভাষনগর জীবনস্মৃতি ইনস্টিটিউশন, যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাপীঠ, গোপালনগর ষষ্ঠীচরণ আদর্শ অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো অনেক ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড়ে মানা যায়নি দূরত্ববিধি। তবে, যত্রতত্র মাস্ক, গ্লাভস পড়ে রয়েছে এমন ছবি দেখা যায়নি। সচেতনভাবে ভোটাররা নির্দিষ্ট হলুদ ডাস্টবিনে চিকিৎসা বর্জ্য ফেলেছেন। সামগ্রিকভাবে নির্ঝঞ্ঝাট বা শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও বেলা গড়িয়ে বাগদার ঘটনা চোনা ফেলে দিয়েছে বনগাঁর নির্বাচনে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

জনপ্রিয়

জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর করতে বিজিবিকে প্রস্তুতির নির্দেশ

বনগাও মহাকুমায় বিধানসভার নির্বাচনে পুলিশ-বিজেপি সংঘর্ষ

প্রকাশের সময় : ০৯:০৫:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল ২০২১

কোলকাতা ব্যুরো ##

পশ্চিমবংগের বনগাও  বাগদা বিধানসভার রণঘাট অঞ্চলের ৩৫ ও ৩৬ নম্বর বুথ। সকাল থেকে নিশ্চিন্তে ভোট হচ্ছিল। শান্তিতে ভাটা পড়ল বেলা গড়িয়ে। জমায়েত সরাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসা, গুলি। দুই পুলিস অফিসার ও কর্মী সহ জখম আরও তিনজন গ্রামবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দুপুরের পর থেকে বুথের ২০০ মিটারের মধ্যে বিজেপি ক্যাম্প করেছিল। ক্যাম্পে অনেক মানুষের জমায়েত হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা এবং তৃণমূলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো হলে পরিস্থিতি সামলাতে আসেন স্থানীয় নির্বাচনী আধিকারিক এবং বাগদা থানার পুলিস। জমায়েত ফাঁকা করতে বললে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা তা মানেননি বলে অভিযোগ। তা নিয়ে সেক্টর অফিসার ও পুলিসের সঙ্গে বচসা চরমে পৌঁছায়। বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের কাছে ধারালো অস্ত্র ছিল বলে অভিযোগ। তাঁদের অস্ত্রের আঘাতে জখম হন বাগদা থানার ওসি উৎপল সাহা এবং এক কনস্টেবল। ওসির মাথায় কোপ লেগেছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে লাঠিচার্জ শুরু হয়। চালানো হয় গুলি। তাতে তিন গ্রামবাসী জখম হন। তাঁদের দলীয় কর্মী বলে দাবি করেছে বিজেপি। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে প্রথমে বাগদা গ্রামীণ হাসপাতাল এবং পরে বনগাঁ মহাকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের নাম মৃত্যুঞ্জয় সাঁতরা ও বুধো সাঁতরা। তৃতীয়জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসের অবশ্য দাবি, পুলিস অকারণে গুলি চালিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, স্থানীয় পুলিস তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে। মানুষ রুখে দাঁড়াতেই সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে পুলিস। যদিও বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কমিশন জানিয়েছে, গুলি চালান জরুরি ছিল। কমিশনের পক্ষ থেকে সিইও আরিজ আফতাব বলেন, সেক্টর অফিসারের ওপর হামলা হয়। তাঁকে বাঁচাতে যান ওসি। তখন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের উপর হামলা হয়। তাই গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিস। বিশেষ রাজনৈতিক দলের ২৫০ জন সমর্থক ছিলেন। ওসির সঙ্গে এক কনস্টেবলও গুরুতরভাবে জখম হয়েছেন। তিন রাউন্ড গুলি চলেছে। একজনের হাতে লেগেছে। জখম হয়েছেন মোট তিনজন।
অন্যদিকে, এদিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের জনাকীর্ণ এলাকা। সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯২ এবং ৯৩ নম্বর বুথ ঘিরে গন্ডগোল বাধে। স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মণ্ডল, শাহাবউদ্দিন মণ্ডল, সুধীর প্রামাণিক, দীনবন্ধু দলপতিদের অভিযোগ, একটি দোকানে ৩-৪ জন গ্রামবাসী বসেছিল। সেখানে এসে কোনও কিছু না শুনেই অতর্কিতে হামলা করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বিশাল পুলিস বাহিনী গিয়ে সামাল দেয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল রায়। তিনি বলেন, অনেক জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতি সক্রিয়তার অভিযোগ সামনে এসেছে। কমিশনকে বিষয়টি জানিয়েছি।
এই দু’টি ঘটনা বাদ দিলে মোটের উপর বনগাঁ মহকুমার চার কেন্দ্র (বনগাঁ উত্তর ও দক্ষিণ, বাগদা এবং গাইঘাটা) নির্বাচন মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ছিল। সকালের দিকে দু’-একটি জায়গা থেকে ইভিএম খারাপের খবর মিলেছিল। করোনাবিধি মেনেই ভোটদানের ছবি দেখা গিয়েছে বিভিন্ন বুথে। নির্দিষ্ট দূরত্ববিধি মেনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। নারিকেলা গাইঘাটা লক্ষীনারায়ণ প্রাথমিক বিশ্ববিদ্যালয়, রায়পুর বিদ্যালয় চত্বরে সামাজিক দূরত্ব মেনে লাইনে দেখা গিয়েছে ভোটারদের। আবার, সুভাষনগর জীবনস্মৃতি ইনস্টিটিউশন, যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাপীঠ, গোপালনগর ষষ্ঠীচরণ আদর্শ অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো অনেক ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড়ে মানা যায়নি দূরত্ববিধি। তবে, যত্রতত্র মাস্ক, গ্লাভস পড়ে রয়েছে এমন ছবি দেখা যায়নি। সচেতনভাবে ভোটাররা নির্দিষ্ট হলুদ ডাস্টবিনে চিকিৎসা বর্জ্য ফেলেছেন। সামগ্রিকভাবে নির্ঝঞ্ঝাট বা শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও বেলা গড়িয়ে বাগদার ঘটনা চোনা ফেলে দিয়েছে বনগাঁর নির্বাচনে।