মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মরুভূমির এই স্কুল এসি ছাড়াই ঠাণ্ডা থাকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ##
মরুভূমির মাঝে স্কুল, ব্যাপারটি কখনও ভেবে দেখেছেন! তার মাঝেই চলছে পড়াশোনা। ভাবনাতেও যেন গরম হাওয়া গায়ে ছ্যাঁকা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ বাস্তবেও রয়েছে এমনই এক স্কুল। 

বালিপাথর দিয়ে স্কুলটি তৈরি করায় কার্বন অনেক কম নির্গত হয়। ফলে স্কুল এবং স্কুলের আশপাশের পরিবেশ তুলনামূলক অনেক ঠাণ্ডা। প্রাকৃতিক নিয়মে মরুভূমি রাতে ঠাণ্ডা এবং দিনে গরম হয়ে যায়। কিন্তু স্কুলের গঠন এমনভাবেই করা যাতে রাতের ঠাণ্ডা হাওয়া দিনভর স্কুলের ভেতরে আটকে থাকে। ফলে বাইরের থেকে অনেকটাই আলাদা স্কুলের ভেতরের তাপমাত্রা।

তাও আবার কোনও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছাড়াই। স্কুলটিতে এতটাই বিজ্ঞানের ব্যবহার হয়েছে যে খোলামেলা পরিবেশে পড়াশোনা করেও গরম হাওয়া উপেক্ষা করা যায় সহজেই। 

রাজস্থানের থর মরুভূমির মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে বালিপাথরের তৈরি এই অত্যাধুনিক পরিকাঠামো। মরুভূমির মাঝে এই পরিকাঠামো দেখে যে কেউ বিস্মিত হতে পারেন। আসলে এটি মেয়েদের একটি স্কুল! 

স্কুলটির নাম রাজকুমারী রত্নাবতী গার্লস স্কুল। স্থানীয় হলুদ বালিপাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে স্কুলটি। স্কুলটিতে কোনও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র নেই। তা সত্ত্বেও বাইরের এবং ভেতরের তাপমাত্রার আকাশ-পাতাল পার্থক্য। স্কুল ক্যাম্পাসের ভেতরের মাঠে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে খেলাধুলোও করতে পারবে। 

স্কুলটিকে তৈরি করেছে আমেরিকার একটি বেসরকারি অলাভজনক সংস্থা। অনেক খুঁজে রাজস্থানের থর মরুভূমির এই জায়গাটিকে চিহ্নিত করে ওই সংস্থা। ২০১০ সালে প্রথম এ রকম একটি স্কুল তৈরির পরিকল্পনা করেন ওই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল দৌবে। তার জন্য দীর্ঘ সময় রাজস্থানে কাটিয়েছেন তিনি। সেখানকার সংস্কৃতি, পরিবেশ গভীরভাবে বুঝেছেন। 

এলাকার রাজনৈতিক নেতা এবং সরকারি স্তরে অনেক আলাপ-আলোচনার পরই এই স্কুলের অনুমতি পান তিনি। স্কুলটি কিন্ডারগার্টেন থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। 

বলা চলে, এই অঞ্চলের বেশিরভাগ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। মেয়েদের শিক্ষার হার একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। সেই অবস্থা কাছ থেকে উপলব্ধি করার পর মাইকেল চেয়েছিলেন এমন একটি স্কুল করতে যা সারা ভারতে নজির তৈরি করবে। যে স্কুলে ভর্তি হলে গর্ববোধ করবেন অভিভাবকেরা। যে স্কুল শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যাই দেবে না বরং এই অঞ্চলের সংস্কৃতিকেও তুলে ধরবে। 

স্কুলটি ডিম্বাকার। চারদিক দিয়ে ঘেরা স্কুলের মাঝখানে ফাঁকা খেলার মাঠ। ছাদে এবং মাঠের উপর অর্থাৎ পুরো স্কুল ক্যাম্পাস জুড়েই রয়েছে সোলার প্যানেল। একদিকে যেমন এই সোলার প্যানেল বিদ্যুতের জোগান দেয় তেমন মাঠে ছায়া দেয়। যার নিচে নিশ্চিন্তে খেলাধুলা করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। 

স্কুলের ভেতরের দেওয়াল চুন দিয়ে প্লাস্টার করা। এটিও ইনসুলেটরের কাজ করে। ফলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছাড়াই স্কুলের ভেতরের পরিবেশ তুলনামূলক ঠাণ্ডা রাখা যায়।

 

স্কুলটির বাইরের দিকের দেওয়ালে কোনও জানালা নেই। সব জানলাই ভিতরের মাঠের দিকে। তাই হাওয়ার সঙ্গে বালি উড়ে স্কুলের ভেতরে ঢোকার উপায় নেই। 

২০১৮ সালে স্কুল তৈরির কাজ শুরু হয়। ১ বছরের মধ্যেই সেটি সম্পূর্ণ হয়ে যায়। এই স্কুলটিকে পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হয়েছে। তবে পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলেও স্কুলটিতে এখনও সে ভাবে পড়াশোনা চালু করা যায়নি মহামারির কারণে। চলতি বছরে শুরু করা যাবে বলেই আশাবাদী মাইকেল।
জনপ্রিয়

১০ দলীয় সমঝোতায় সিরাজগঞ্জের তিন আসনে এনসিপির প্রার্থিতা প্রত্যাহার

মরুভূমির এই স্কুল এসি ছাড়াই ঠাণ্ডা থাকে

প্রকাশের সময় : ০৬:১৫:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুন ২০২১
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ##
মরুভূমির মাঝে স্কুল, ব্যাপারটি কখনও ভেবে দেখেছেন! তার মাঝেই চলছে পড়াশোনা। ভাবনাতেও যেন গরম হাওয়া গায়ে ছ্যাঁকা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ বাস্তবেও রয়েছে এমনই এক স্কুল। 

বালিপাথর দিয়ে স্কুলটি তৈরি করায় কার্বন অনেক কম নির্গত হয়। ফলে স্কুল এবং স্কুলের আশপাশের পরিবেশ তুলনামূলক অনেক ঠাণ্ডা। প্রাকৃতিক নিয়মে মরুভূমি রাতে ঠাণ্ডা এবং দিনে গরম হয়ে যায়। কিন্তু স্কুলের গঠন এমনভাবেই করা যাতে রাতের ঠাণ্ডা হাওয়া দিনভর স্কুলের ভেতরে আটকে থাকে। ফলে বাইরের থেকে অনেকটাই আলাদা স্কুলের ভেতরের তাপমাত্রা।

তাও আবার কোনও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছাড়াই। স্কুলটিতে এতটাই বিজ্ঞানের ব্যবহার হয়েছে যে খোলামেলা পরিবেশে পড়াশোনা করেও গরম হাওয়া উপেক্ষা করা যায় সহজেই। 

রাজস্থানের থর মরুভূমির মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে বালিপাথরের তৈরি এই অত্যাধুনিক পরিকাঠামো। মরুভূমির মাঝে এই পরিকাঠামো দেখে যে কেউ বিস্মিত হতে পারেন। আসলে এটি মেয়েদের একটি স্কুল! 

স্কুলটির নাম রাজকুমারী রত্নাবতী গার্লস স্কুল। স্থানীয় হলুদ বালিপাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে স্কুলটি। স্কুলটিতে কোনও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র নেই। তা সত্ত্বেও বাইরের এবং ভেতরের তাপমাত্রার আকাশ-পাতাল পার্থক্য। স্কুল ক্যাম্পাসের ভেতরের মাঠে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে খেলাধুলোও করতে পারবে। 

স্কুলটিকে তৈরি করেছে আমেরিকার একটি বেসরকারি অলাভজনক সংস্থা। অনেক খুঁজে রাজস্থানের থর মরুভূমির এই জায়গাটিকে চিহ্নিত করে ওই সংস্থা। ২০১০ সালে প্রথম এ রকম একটি স্কুল তৈরির পরিকল্পনা করেন ওই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল দৌবে। তার জন্য দীর্ঘ সময় রাজস্থানে কাটিয়েছেন তিনি। সেখানকার সংস্কৃতি, পরিবেশ গভীরভাবে বুঝেছেন। 

এলাকার রাজনৈতিক নেতা এবং সরকারি স্তরে অনেক আলাপ-আলোচনার পরই এই স্কুলের অনুমতি পান তিনি। স্কুলটি কিন্ডারগার্টেন থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। 

বলা চলে, এই অঞ্চলের বেশিরভাগ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। মেয়েদের শিক্ষার হার একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। সেই অবস্থা কাছ থেকে উপলব্ধি করার পর মাইকেল চেয়েছিলেন এমন একটি স্কুল করতে যা সারা ভারতে নজির তৈরি করবে। যে স্কুলে ভর্তি হলে গর্ববোধ করবেন অভিভাবকেরা। যে স্কুল শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যাই দেবে না বরং এই অঞ্চলের সংস্কৃতিকেও তুলে ধরবে। 

স্কুলটি ডিম্বাকার। চারদিক দিয়ে ঘেরা স্কুলের মাঝখানে ফাঁকা খেলার মাঠ। ছাদে এবং মাঠের উপর অর্থাৎ পুরো স্কুল ক্যাম্পাস জুড়েই রয়েছে সোলার প্যানেল। একদিকে যেমন এই সোলার প্যানেল বিদ্যুতের জোগান দেয় তেমন মাঠে ছায়া দেয়। যার নিচে নিশ্চিন্তে খেলাধুলা করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। 

স্কুলের ভেতরের দেওয়াল চুন দিয়ে প্লাস্টার করা। এটিও ইনসুলেটরের কাজ করে। ফলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছাড়াই স্কুলের ভেতরের পরিবেশ তুলনামূলক ঠাণ্ডা রাখা যায়।

 

স্কুলটির বাইরের দিকের দেওয়ালে কোনও জানালা নেই। সব জানলাই ভিতরের মাঠের দিকে। তাই হাওয়ার সঙ্গে বালি উড়ে স্কুলের ভেতরে ঢোকার উপায় নেই। 

২০১৮ সালে স্কুল তৈরির কাজ শুরু হয়। ১ বছরের মধ্যেই সেটি সম্পূর্ণ হয়ে যায়। এই স্কুলটিকে পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা হয়েছে। তবে পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলেও স্কুলটিতে এখনও সে ভাবে পড়াশোনা চালু করা যায়নি মহামারির কারণে। চলতি বছরে শুরু করা যাবে বলেই আশাবাদী মাইকেল।