রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে ১০টি

স্টাফ রিপোর্টার।। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কেননা ২০১০-২০১১ সালের বিদ্যুতের মাস্টার প্ল্যানে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন করা যায়নি। বাতিল করার ক্ষেত্রে সেই বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

কয়লাভিত্তিক যে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাদ দেয়া হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে পটুয়াখালীর ২৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, উত্তরবঙ্গের ১২০০ মেগাওয়াট সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট, মাওয়ার ৫২২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকার ২৮২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রামের ২৮২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, খুলনার ৫৬৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহেশখালীর দুটি ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সিপিজিসিবিএল-সুমিতোমো ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারের ‘ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টারপ্ল্যানে’ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ‘যৌক্তিক পর্যায়ে পুনর্নির্ধারণ’ করা প্রয়োজন। তাছাড়া প্যারিস এগ্রিমেন্টে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় পরিবেশবান্ধব জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।

২০০৮ সালের পর দেশে যে ১৮টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন পায়, তার মধ্যেই ১০টি প্রকল্প এখন বাতিল হলো।

কয়েক বছর ধরে এসব প্রকল্পের কাজ থমকে থাকায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এগুলো বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছিল বলে এর আগে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সময়মতো আসতে না পারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পাওয়ার প্লান্টগুলো বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এই পাওয়ার প্লান্টগুলো বাদ দেয়ার ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে না। ভবিষ্যতে কোন অঞ্চলে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগবে, তার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের হাতে যে পরিমাণ পাওয়ার প্লান্ট আছে এবং আগামীতে যে পরিমাণ আমরা পাব, এতে দেখা যাচ্ছে আমাদের প্রায় ১৩ হাজার মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে সিস্টেমে অতিরিক্ত থাকবে।’

সরকারের বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাস বা এলএনজি থেকে ৩৫ শতাংশ, কয়লা থেকে ৩৫ শতাংশ, আমদানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১৫ শতাংশ, পারমাণবিক শক্তি থেকে ১০ শতাংশ এবং তেল থেকে পাঁচ শতাংশ আসবে বলে ধরা হয় ওই ‘মাস্টার প্ল্যানে’।

তবে কয়লা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে সরকারের ওই পরিকল্পনা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন সংগঠন। বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোরও পরামর্শ ছিল তাদের।

গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক অনেক দাতা সংস্থাও এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। ফলে দেশের এসব কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে।

বিদ্যুতের বিষয়ে ২০১০ সালে নেয়া মহাপরিকল্পনা প্রতি পাঁচ বছর পরপর পর্যালোচনা করা হয় বলে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলন, ‘কভিড পরিস্থিতির কারণে দেড় বছর ধরে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসছে। নতুন টেকনোলজি, নতুন সম্ভাবনা এবং জ্বালানি ক্ষেত্রের দামের ওঠা-নামার কারণে নতুনভাবে চিন্তা করতে হচ্ছে।’

জনপ্রিয়

শিল্পা শেঠির আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ভাইরাল, নিলেন বড় পদক্ষেপ

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে ১০টি

প্রকাশের সময় : ১০:০০:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুন ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার।। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কেননা ২০১০-২০১১ সালের বিদ্যুতের মাস্টার প্ল্যানে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন করা যায়নি। বাতিল করার ক্ষেত্রে সেই বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

কয়লাভিত্তিক যে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাদ দেয়া হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে পটুয়াখালীর ২৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, উত্তরবঙ্গের ১২০০ মেগাওয়াট সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট, মাওয়ার ৫২২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকার ২৮২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রামের ২৮২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, খুলনার ৫৬৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহেশখালীর দুটি ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সিপিজিসিবিএল-সুমিতোমো ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারের ‘ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টারপ্ল্যানে’ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ‘যৌক্তিক পর্যায়ে পুনর্নির্ধারণ’ করা প্রয়োজন। তাছাড়া প্যারিস এগ্রিমেন্টে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় পরিবেশবান্ধব জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।

২০০৮ সালের পর দেশে যে ১৮টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন পায়, তার মধ্যেই ১০টি প্রকল্প এখন বাতিল হলো।

কয়েক বছর ধরে এসব প্রকল্পের কাজ থমকে থাকায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এগুলো বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছিল বলে এর আগে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সময়মতো আসতে না পারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পাওয়ার প্লান্টগুলো বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এই পাওয়ার প্লান্টগুলো বাদ দেয়ার ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে না। ভবিষ্যতে কোন অঞ্চলে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগবে, তার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের হাতে যে পরিমাণ পাওয়ার প্লান্ট আছে এবং আগামীতে যে পরিমাণ আমরা পাব, এতে দেখা যাচ্ছে আমাদের প্রায় ১৩ হাজার মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে সিস্টেমে অতিরিক্ত থাকবে।’

সরকারের বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাস বা এলএনজি থেকে ৩৫ শতাংশ, কয়লা থেকে ৩৫ শতাংশ, আমদানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১৫ শতাংশ, পারমাণবিক শক্তি থেকে ১০ শতাংশ এবং তেল থেকে পাঁচ শতাংশ আসবে বলে ধরা হয় ওই ‘মাস্টার প্ল্যানে’।

তবে কয়লা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে সরকারের ওই পরিকল্পনা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন সংগঠন। বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোরও পরামর্শ ছিল তাদের।

গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক অনেক দাতা সংস্থাও এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। ফলে দেশের এসব কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে।

বিদ্যুতের বিষয়ে ২০১০ সালে নেয়া মহাপরিকল্পনা প্রতি পাঁচ বছর পরপর পর্যালোচনা করা হয় বলে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলন, ‘কভিড পরিস্থিতির কারণে দেড় বছর ধরে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসছে। নতুন টেকনোলজি, নতুন সম্ভাবনা এবং জ্বালানি ক্ষেত্রের দামের ওঠা-নামার কারণে নতুনভাবে চিন্তা করতে হচ্ছে।’