বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম থাকে না ফিশিং বোটে, তিন দশকে দেড় হাজার মৃত্যু

জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জামছাড়া সাগরে যাওয়ার প্রস্ততি ফিশিংবোটের। ছবি- শরণখোলা মৎস্যঘাট

জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম ছাড়া জেলেরা ফিশিংবোট নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের তদারকি না থাকায় প্রতি বছর দুর্যোগে জেলেরা সাগরে বেঘোরে প্রাণ হারায়। গত তিন দশকে সাগরে ডুবে প্রায় দেড় হাজার জেলে মারা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমুদ্রগামী কয়েকজন জেলে জানান, জীবন জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাজনদের ফিশিংবোটে সাগরে মাছ ধরতে যাই। বোটে খাবার সামগ্রী ছাড়া ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছাসে জীবনরক্ষাকারী লাইফ জ্যাকেট ও লাইফবয়া নেওয়া হয়না ফলে সাগরে বোট ডুবে গেলে আমাদের বেঁচে থাকার কোন অবলম্বন থাকেনা। গত তিন দশকে সাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে প্রায় দেড় হাজার জেলে মারা গেছে। এরমধ্যে ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছাসে দুবলারচরে প্রায় পাঁচশত, ২০০৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সাগরে আকষ্মিক ঝড়ে তিন শতাধিক, ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে সুন্দরবনে প্রায় সাড়ে তিনশত জেলে প্রাণ হারিয়েছে বলে ভূক্তভোগী জেলেদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়। এছাড়া প্রতি বছর বঙ্গোপসাগরে আকষ্মিক ঝড়ে অনেক নৌকা ট্রলার ডুবে জেলে মারা যায়। সর্বশেষ গত ৪ ফেব্রæয়ারী রাতে বঙ্গোপসাগরে আকষ্মিক ঝড়ে প্রায় ২৫টি বোট ডুবে ১২ জেলে নিখোঁজ হয়। এরমধ্যে সাত জেলের লাশ উদ্ধার হয়েছে।
বাংলাদেশ ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সহসভাপতি আলহাজ সাইফুল ইসলাম খোকন বলেন, সমুদ্রগামী ফিশিংবোটে জেলেদের জীবনরক্ষায় নামকাওয়াস্তে ২/১ টি লাইফবয়া রাখলেও বোট মালিকদের উদাসীনতায় লাইফ জ্যাকেট আদৌ রাখা হয়না। তিনি এবিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ দাবী করেন।
দুবলা ফিসারমেন গ্রæপের সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুবলারচরের কয়েক হাজার শুঁটকি জেলে জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম ছাড়াই সাগরে মাছ ধরে আসছে। আগামী বছর থেকে লাইফ জ্যাকেট ও লাইফবয়া ছাড়া দুবলারচরের কোন জেলে সাগরে যেতে পারবেনা বলে নিশ্চয়তা দেন দুবলা ফিসারমেন গ্রæপ সভাপতি।
জেলেপল্লী দুবলা ফরেষ্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহলাদ চন্দ্র রায় জানান, দুবলাসহ সমুদ্রগামী কোন ফিশিংবোটে জেলেদের লাইফ জ্যাকেট ও লাইফবয়া দেখা যায়না। বোটে লাইফ জ্যাকেট রাখা হলে জেলেদের প্রাণহানী এড়ানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য অফিসার এ এস এম রাসেল বলেন, সমুদ্রগামী ফিশিংবোটে জেলেদের জীবনরক্ষায় লাইফ জ্যাকেট ও লাইফবয় রাখা বাধ্যতামূলক এবং এটা তদারকির দায়িত্ব সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের। কোষ্টগার্ডও ফিশিংবোটসমূহে দেখভাল করতে পারে। বাগেরহাট জেলায় সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর না থাকায় একটি দপ্তর করার জন্য শরণখোলায় জায়গা খোঁজা হচ্ছে আগামী এক বছরের মধ্যে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের অফিস চালু করা হবে তখন ফিশিংবোটগুলোতে নজরদারী করা যাবে বলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেন।

বার্তা/এন

জনপ্রিয়

খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা

জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম থাকে না ফিশিং বোটে, তিন দশকে দেড় হাজার মৃত্যু

প্রকাশের সময় : ০৪:৫৮:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২

জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম ছাড়া জেলেরা ফিশিংবোট নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের তদারকি না থাকায় প্রতি বছর দুর্যোগে জেলেরা সাগরে বেঘোরে প্রাণ হারায়। গত তিন দশকে সাগরে ডুবে প্রায় দেড় হাজার জেলে মারা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমুদ্রগামী কয়েকজন জেলে জানান, জীবন জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাজনদের ফিশিংবোটে সাগরে মাছ ধরতে যাই। বোটে খাবার সামগ্রী ছাড়া ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছাসে জীবনরক্ষাকারী লাইফ জ্যাকেট ও লাইফবয়া নেওয়া হয়না ফলে সাগরে বোট ডুবে গেলে আমাদের বেঁচে থাকার কোন অবলম্বন থাকেনা। গত তিন দশকে সাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে প্রায় দেড় হাজার জেলে মারা গেছে। এরমধ্যে ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছাসে দুবলারচরে প্রায় পাঁচশত, ২০০৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সাগরে আকষ্মিক ঝড়ে তিন শতাধিক, ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে সুন্দরবনে প্রায় সাড়ে তিনশত জেলে প্রাণ হারিয়েছে বলে ভূক্তভোগী জেলেদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়। এছাড়া প্রতি বছর বঙ্গোপসাগরে আকষ্মিক ঝড়ে অনেক নৌকা ট্রলার ডুবে জেলে মারা যায়। সর্বশেষ গত ৪ ফেব্রæয়ারী রাতে বঙ্গোপসাগরে আকষ্মিক ঝড়ে প্রায় ২৫টি বোট ডুবে ১২ জেলে নিখোঁজ হয়। এরমধ্যে সাত জেলের লাশ উদ্ধার হয়েছে।
বাংলাদেশ ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সহসভাপতি আলহাজ সাইফুল ইসলাম খোকন বলেন, সমুদ্রগামী ফিশিংবোটে জেলেদের জীবনরক্ষায় নামকাওয়াস্তে ২/১ টি লাইফবয়া রাখলেও বোট মালিকদের উদাসীনতায় লাইফ জ্যাকেট আদৌ রাখা হয়না। তিনি এবিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ দাবী করেন।
দুবলা ফিসারমেন গ্রæপের সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুবলারচরের কয়েক হাজার শুঁটকি জেলে জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম ছাড়াই সাগরে মাছ ধরে আসছে। আগামী বছর থেকে লাইফ জ্যাকেট ও লাইফবয়া ছাড়া দুবলারচরের কোন জেলে সাগরে যেতে পারবেনা বলে নিশ্চয়তা দেন দুবলা ফিসারমেন গ্রæপ সভাপতি।
জেলেপল্লী দুবলা ফরেষ্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহলাদ চন্দ্র রায় জানান, দুবলাসহ সমুদ্রগামী কোন ফিশিংবোটে জেলেদের লাইফ জ্যাকেট ও লাইফবয়া দেখা যায়না। বোটে লাইফ জ্যাকেট রাখা হলে জেলেদের প্রাণহানী এড়ানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য অফিসার এ এস এম রাসেল বলেন, সমুদ্রগামী ফিশিংবোটে জেলেদের জীবনরক্ষায় লাইফ জ্যাকেট ও লাইফবয় রাখা বাধ্যতামূলক এবং এটা তদারকির দায়িত্ব সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের। কোষ্টগার্ডও ফিশিংবোটসমূহে দেখভাল করতে পারে। বাগেরহাট জেলায় সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর না থাকায় একটি দপ্তর করার জন্য শরণখোলায় জায়গা খোঁজা হচ্ছে আগামী এক বছরের মধ্যে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের অফিস চালু করা হবে তখন ফিশিংবোটগুলোতে নজরদারী করা যাবে বলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেন।

বার্তা/এন