
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাল্য বিবাহ রোধে কঠোর ভূমিকায় উপজেলা প্রশাসন৷ ভ্রাম্যমাণ আদালতে বাল্য বিবাহে জড়িতদেরকে সাজা ও অর্থ জরিমানা করা হচ্ছে ৷ গত পাচ দিনে একজন কাজীসহ চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থ জরিমানা করা হয়েছে৷ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও ) মোঃ উজ্জল হোসেন অতি সা¤প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে পরিদর্শনে গিয়ে বাল্য বিবাহ রোধে ইউপি চেয়ারম্যান , ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশদের ভূমিকা রাখতে বলছেন৷
গতকাল ২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে পৌরসভা এলাকার নেওয়ারগাছায় বাল্য বিবাহ বন্ধ করে দিয়ে কনের মাকে পাচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত৷ এছাড়া কনের বয়স আঠারো বছর পার না হওয়া অবধি বিবাহ দেবেন না বলে তার মায়ের মুচলেকা নেওয়া হয়েছে৷ সহকারী কমিশনার ( ভূমি ) ইশরাত জাহান এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন৷
এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও ) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ উজ্জল হোসেন দু’টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন৷
গত ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে তিনি বাল্য বিবাহ নিবন্ধন করায় উপজেলার পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের কাজী রেজাউল করিমকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন৷ জরিমানার টাকা অনাদায়ে আরো তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে ৷ জানা যায় , উপজেলার পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের কাজী রেজাউল করিম তার চেন্বারে উধুনিয়া ইউনিয়নের চৌদ্দ বছর বয়সী ( নাম গোপন রাখা হলো ) এক কিশোরীর বিবাহ নিবন্ধন ( রেজিষ্ট্রেশন ) করায় এ সাজা দেওয়া হয়েছে ৷
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ উজ্জল হোসেন বলেন বালাম বই যাচাই করে বাল্য বিবাহের রেজিষ্ট্রেশন করার প্রমাণ মিলেছে৷
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রবিবার মধ্যরাতে বাল্য বিবাহ পরানোয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও ) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ উজ্জল হোসেন তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন ৷ এদের মধ্যে ভূয়া কাজী উপজেলার অলিপুর গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে মাসুদ পারভেজ (২৭)কে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড , বিয়ে পড়ানোর হুজুর মাদারাসা ছাত্র সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার বড়কুড়া গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে লিয়াকত হোসেন এবং কনের খালা উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের ফাতেমা খাতুনকে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে ৷ এ সময় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন ৷ বর পক্ষের লোকজন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকালে বিয়ে বাড়ী থেকে পালিয়ে যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও ) মোঃ উজ্জল হোসেন জানান, উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের কাজী মুরাদুজ্জামানের পক্ষে সাজা হওয়া ভূয়া কাজী অনেকদিন ধরে এলাকার নাবালিকা মেয়েদের বিয়ের সহযোগী হয়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বিবাহের অবৈধ কাবিননামা তৈরি করে আসছিলেন। আর তার সাথে থেকে হুজুর লিয়াকত হোসেন বিবাহ পরাতেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রবিবার দিবাগত মধ্য রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তিনি উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামে আব্দুল মমিন সরদারের বাড়িতে গিয়ে কাজী ও হুজুরকে হাতে নাতে ধরেন। এ সময় ষষ্ঠ শ্রেণী পড়ুয়া এক ছাত্রীর সাথে একই উপজেলার সলঙ্গা ইউনিয়নের ভরমোহনী গ্রামের সুলতান মিয়া নামের এক ছেলের বিবাহের অনুষ্ঠান চলছিল। নাবালিকা মেয়েকে বিবাহ দেওয়ায় সহযোগিতা করেন তার খালা ৷ ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ভূয়া কাজীর কাছ থেকে দুটি নিকা রেজিষ্টার ও কয়েকটি টালি খাতা জব্দ করা হয়৷ এদিকে কনের বাবার কাছ থেকে ১৮ বছরের আগে তার মেয়েকে বিয়ে না দেওয়ার মুচলেকা নেওয়া হয়।
উপজেলা প্রশাসন বাল্য বিবাহ বন্ধে একেবারে কঠোর ভূমিকায়৷ বিভিন্ন সভা সমাবেশে বাল্য বিবাহ বন্ধে সবাইকে সহযোগীর ভূমিকা রাখতে বলা হচ্ছে৷ এদিকে বাল্য বিবাহ রোধে উপজেলা প্রশাসনের গত ক’দিনের কঠোর ভূমিকায় অনেকেই খুশী বলে জানা গেছে৷ বিভিন্ন এলাকার অনেকেরই মতে বাল্য বিবাহের সাথে জড়িতদের সাজা হলে বাল্য বিবাহ হওয়া কমে যাবে৷ এমনকি বাল্য বিবাহ আর হবে না৷
বার্তা/এন
সাহারুল হক সাচ্চু , উল্লাপাড়া ( সিরাজগঞ্জ ) 






































