
দুর্বিষহ যানজটের বেড়াজালে বন্দী কিশোরগঞ্জ জেলা শহর। দিনদিন যানজটের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। ফলে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ১০.৩৭ বর্গ কিঃ মিঃ আয়তনের পৌর শহরের প্রধান সড়কের দু’পাশে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকানপাট, ভাসমান হকারদের দখলে পথচারী চলাচলের ফুটপাত, সড়কের উভয় দিকে গাড়ি পার্কিং ও কয়েক হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। জেলা শহরের যানজটের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, পাঁচ মিনিটের পথ যানজটে আটকে যেতে সময় লাগছে প্রায় এক থেকে দেড় ঘন্টা।
তীব্র যানজটের দীর্ঘতর লাইন থেকে মুক্তি জন্য ফুটপাত ধরে পায়ে হেঁটে চলাচলের সুযোগ পর্যন্ত নেই। ফুটপাত অবৈধ দখলে নিয়েছে হকারদের অস্থায়ী দোকানপাট। প্রতিদিন তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই হকার ও পথচারীদের মধ্যে ঘটছে অপ্রতিকর ঘটনা। শহরের প্রধান দুটি সড়কের চিত্র দূর থেকে দেখলেই মনে হবে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে সাজানো আছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। সড়কের মাঝখান থেকে দু’পাশের ফুটপাতে নজর দিলেই চোখে পড়বে ভ্রাম্যমান হকারদের সারি সারি দোকানপাট। একই সাথে রয়েছে মোটরসাইকেল পার্কিং। বেশ কয়েক বছর ধরেই জেলা শহরের ব্যস্ততম প্রধান সড়কগুলোর প্রতিদিনের দৃশ্য এটি। জরুরি প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েও ঘন্টার পর ঘন্টা অসহনীয় যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয় জেলার ১৩ উপজেলার মানুষকে।
যানজট সমস্যা নিরসনে কোন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে আগ্রহ নেই প্রশাসনের। এমন অভিযোগ রয়েছে জেলার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং শহরের বিশিষ্টজনদের। এছাড়াও ভুক্তভোগী শহরবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় একদিকে যেমন যানজট দূর হচ্ছে না, তেমনি ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের নেই কোন পদক্ষেপ। ফুটপাত দখলের ইস্যুতে রহস্যময় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বিগত সময়ে প্রশাসন কর্তৃক উচ্ছেদ অভিযানকে অনেকেই হাস্যকর নাট্য অনুষ্ঠানের সাথেই তুলনা করেছেন। অভিযোগ রয়েছে সকালে পরিচালিত অভিযান শেষ হলে দুপুরেই পুনঃরায় এসব জায়গা দখল নিয়ে নেয় রাজনৈতিক ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় নিয়ন্ত্রিত হকার সমাজ।
অনুসন্ধানী জানা গেছে, পথচারীর চলাচলের জন্য এসব ফুটপাত অবৈধ দখল নিয়ে গড়ে ওঠা ছোট্ট টং দোকানে প্রকাশ্য ব্যবসা পরিচালনা দরিদ্র হকার করলেও নেপথ্যে এসব দোকানের মালিক উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ব্যক্তিরা। পরিচালনাকারী দরিদ্র হকারদের অধিকাংশই বেতনভুক্ত কর্মচারী। আবার অনেক হকার অংশীদারিত্বে পরিচালনা করেছে ফুটপাতে থাকা অস্থায়ী দোকানপাট। ফুটপাতে পথচারীর চলাচলে অনেক জায়গায় বাধাও সৃষ্টি করছে এসব হকার। ফলে প্রায় সময়ই ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা।এসব দেখেও দীর্ঘদিন ধরে রীতিমত নীরব ভূমিকা পালন করে আসছেন পৌরসভা ও প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। এর ফলে জনমনে এনিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গভীর রহস্য। পাশাপাশি এ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে শহরবাসী।
প্রতিদিন জেলার ১৩টি উপজেলা থেকে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বিভিন্ন জরুরি কাজে ছুটে আসেন জেলা শহরে। কিন্তু অধিকাংশই তীব্র যানজটের কবলে পড়ে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করেই হতাশা বুকে ফিরে যায় নিজ গন্তব্য। নির্ধারিত সময়ে নিরাপদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। ফুটপাত অবৈধ দখলে থাকায় রাস্তা ধরেই হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থী ও পথচারীরা। ফলে প্রায় সময়ই ঘটছে মারাত্মক দুর্ঘটনা। সব মিলিয়ে জেলা শহরের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ পৌরসভা মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, প্রশাসনের সহযোগিতায় পৌর কর্তৃপক্ষ কিছুদিন পর পরই ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করলেও আবার আগের চিত্রই দেখা যায়। একক নির্বাহী ক্ষমতা না থাকার ফলে নিয়মিত অভিযান সম্ভব হচ্ছে না। তবে হকারদের পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে পথচারীদের জন্য ফুটপাত উন্মুক্ত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বার্তাকণ্ঠ/এন
সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, কিশোরগঞ্জ 







































