
সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল সোমবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। এক ডজন ডিমের দাম ১৫০ টাকা। এর আগে গত বছরের জুলাই-আগস্টে ডিম ও মুরগির বাজার অস্থির হয়ে ওঠে, যা পরবর্তী সময়ে নিয়ন্ত্রণে এলেও ৫ মাস পর আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
এদিকে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন সংশ্লিষ্ট খাতের প্রান্তিক খামারিরা। তারা বলেন, করপোরেট কোম্পানির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মুরগির বাচ্চা, ডিম, খাদ্য এবং ওষুধের খরচ কম থাকায় তারা বেশি লাভে বিক্রি করছেন। অন্যদিকে কোম্পানি থেকে বেশি দামে বাচ্চা, ডিম, খাদ্য এবং ওষধ কিনতে হচ্ছে খামারিদের। এজন্য তাদের ব্যয় বেশি, লাভ কম হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্থানীয় খামারিরা মুরগি ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন, যার প্রতি কেজি উৎপাদন ব্যয় ১৪৮ টাকা পড়ছে। আর করপোরেট কোম্পানিগুলো ১১৮ টাকায় বিক্রি করছে। এর মধ্যে মাঝখানে একটি চক্র বেশি দামের সুবিধা নিচ্ছে। করপোরেট কোম্পানিকে ডিম-মুরগি উৎপাদন বন্ধের দাবি জানিয়েছে প্রন্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।
প্রান্তিক পোলট্রি খামারিদের দাবি, পোলট্রির খাদ্য ও বাচ্চার অযৌক্তিক দাম বাড়িয়ে খামার বন্ধ করতে বাধ্য করছে পুঁজিবাদী করপোরেট কোম্পানিগুলো। এর সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে সংগঠনটি। এ ছাড়া প্রান্তিক খামারিদের ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করে বিপিএ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সভাপতি মসিউর রহমানের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে এ সমিতির অন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কালবেলাকে বলেন, বাজারসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সভাপতি ভালো বলতে পারবেন। তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন।
এদিকে ঢাকার নিত্যপণ্যের বাজারে গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকায়। পাড়া-মহল্লায় বিক্রি হয়েছে ২১০ থেকে ২২০ টাকায়। কারণ জানতে চাইলে দোকানিরা বলেন, খামারে দাম বাড়ায় তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে খামারে কত টাকা বেড়েছে, সেই তথ্য দোকানিরা দিচ্ছেন না। অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি হালি ফার্মের ডিমের দাম বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। অন্যদিকে বাজারে সোনালি মুরগির দাম ২৪০ থেকে বেড়ি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিপিএর সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রান্তিক খামারিদের ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ ১৪৮ টাকা এবং প্রতি ডিমের উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ১১ টাকা ১১ পয়সা। অথচ প্রান্তিক খামারিরা এতদিন প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি করেছেন ১১৮ থেকে ১২০ টাকায়। ডিম বিক্রি করছেন ১০ টাকার কম দামে। ফলে খামারিদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছে। তিনি দাবি করেন, প্রান্তিক খামারিরা এখন কেজি ১৬০ টাকায় মুরগি বিক্রি করছেন; কিন্তু সরবরাহ চেইনে যারা যুক্ত, তাদের কারণে দামটা ২০০ থেকে ২২০ টাকায় উঠেছে।
অন্যদিকে করপোরেট কোম্পানির ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন ব্যয় ১১৮ থেকে ১২০ টাকা পড়ছে বলে দাবি করছে বিপিএ নেতারা। তবে চাহিদার তুলনায় সক্ষমতা কম হওয়ায় তারা খামারিদের কাছ থেকে চুক্তিতে সংগ্রহ করে আসছেন। বাজার চাহিদার ১০ শতাংশ মুরগি করপোরেটের উৎপাদন এবং ১৫ শতাংশ চুক্তিভিত্তিক খামারি, বাকি ৭৫ শতাংশ প্রান্তিক খামারি উৎপাদন করছে।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ‘একেকটি করপোরেট কোম্পানি নিজেদের উৎপাদিত ফিড, মুরগির বাচ্চা ও মেডিসিন দিয়ে ব্রয়লার মুরগি এবং ডিম উৎপাদন করছে। যে কারণে তাদের ব্রয়লার উৎপাদনে খরচ পড়ছে কম, বাজারে বিক্রি করছেন ১১৮ থেকে ১২০ টাকায়। একই সময়ে প্রান্তিক খামারিরা সাড়ে ৩ হাজার টাকায় (৫০ কেজির বস্তা) ফিড (এটাই করপোরেটদের কন্ট্রাক্ট ফার্মার পাচ্ছে আড়াই হাজার টাকায়), ৫৬ টাকায় বাচ্চা কিনে মুরগি পালন করতে হচ্ছে। এ হিসাবে খরচ পড়ছে ১৪৮ টাকা। কিন্তু করপোরেট কোম্পানিগুলো যখন বাজারে ১২০ টাকায় মুরগি বিক্রি করছে, তখন আমরা তার থেকে বেশি দামে বিক্রি করতে পারি না। কারণ, প্রান্তিক খামারির সরবরাহ ৫ থেকে ১০ হাজার, যেখানে করপোরেট কোম্পানির সরবরাহ ২ থেকে ৫ লাখ মুরগি পর্যন্ত।
তিনি বলেন, করপোরেট কোম্পানির হাতে মাত্র ১০ শতাংশ বাজার, আরও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কন্ট্রাক্ট ফার্মিং (চুক্তিভিত্তিক) করছে। বাকিটা প্রান্তিক খামারিদের কাছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণটা পুরোপুরি তাদের হাতে। যেমন তারা জানুয়ারির ৫ তারিখে যে বাচ্চা বিক্রি করেছে ৯ টাকায়, এখন সেটা বিক্রি করছে ৫৬ টাকায়।
ঢাকা ব্যুরো।। 







































