
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা – ব্যাপারটাই ছিল দেশটির সমর্থকদের জন্য অনেকটা স্বপ্ন বাস্তবায়নের মতো। কিন্তু ঘরের মাঠে প্রোটিয়া সমর্থকদের হৃদয় ভেঙে ষষ্ঠবার এবং টানা তিনবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া নারী দল। এ নিয়ে দুই ফরম্যাট মিলিয়ে এটি ১৩তম বিশ্বকাপ অজি নারীদের।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) কেপটাউনের নিউল্যান্ড স্টেডিয়ামে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৯ রানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ব্যাটে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রানের বেশি করতে পারেনি প্রোটিয়া মেয়েরা।
টস জিতে ব্যাট করতে নামে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা। ম্যাচের শুরু থেকেই প্রোটিয়া বোলারদের ওপর চড়াও হন দুই অজি ওপেনার। উইকেটরক্ষক ব্যাটার অ্যালিসা হিলিকে সঙ্গে নিয়ে মুনি দারুণ শুরু এনে দেন। পাঁচ ওভারে যখন তাদের সংগ্রহ ৩৬ রান, তখনই প্রথম আঘাত আনেন আফ্রিকার মিডিয়াম পেসার ম্যারিজেন ক্যাপ। ৩ চারে ২০ বলে ১৮ রান করে আউট হওয়ার আগে এলিসা হিলি ডি ক্লার্ককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
এরপর মুনিকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে আসেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার অ্যাশলে গার্ডনার। দুজনের জুটিতে স্কোরবোর্ডে ৪৬ রান যোগ হয়। দলীয় ৮২ রানে গার্ডনারকে বাঁ-হাতি স্পিনে কাবু করেন ক্লো ট্রায়ন। ২১ বলে ২৯ রান করার পর তিনি প্রোটিয়া অধিনায়ক সুনে লুসের তালুবন্দি হন।
এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। শেষদিকে আর কোনো অজি ব্যাটারই উল্লেখযোগ্য রান করতে পারেননি।কিন্তু একপাশ আগলে রাখেন মুনি। নিউল্যান্ডে ভরা গ্যালারির সামনে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৫৩ বলে ৭৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন তিনি। নির্ধারিত ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ১৫৬ রান সংগ্রহ করে।
প্রোটিয়াদের হয়ে শাবনিম ইসমায়েল ও ক্যাপ ২টি এবং মালাবা ও ট্রায়ন ১টি করে উইকেট নেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ধীর গতিতে ব্যাট করতে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকার নারী দল। দলীয় ১৭ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে বিপদ আরও বাড়িয়ে তোলেন ওপেনার তাজমিন ব্রিটস। মুনির মতো প্রোটিয়া ওপেনার লরা ভলভার্টও নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নেন। পুরো টুর্নামেন্টেই দুর্দান্ত পারফর্ম করে আসছেন ভলভার্ট।
রান তাড়ায় প্রোটিয়াদের কোনো জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেনি৷ রান ব্যবধান বাড়তে থাকায় উল্টো চাপ বাড়তে থাকে তাদের। ১০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজনীয় রান রেট ছিল ১০.৫০।
পুরো ইনিংসের বেশিরভাগ জুড়ে দলের ভরসা হয়েছিলেন লরা উলভারডট। তিনি একপাশ আগলে রাখলেও অন্যপাশে একের এক ব্যাটার ডাগআউটে নামতে থাকেন। প্রোটিয়া অধিনায়ক সুনে লুসও বিশ্বজয়ের মঞ্চে ব্যর্থ। শেষদিকে কেবল ক্লোই ট্রায়ন উলভারডটকে কিছুক্ষণ সঙ্গ দেন। ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৩ বলে ২৫ রান করে জনাসেনের বলে বোল্ড আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন ক্লোই ট্রায়ন।
তবে পরপর উইকেটের পতনে রানরেট আরো বাড়তে থাকে। সর্বশেষ দুই ওভারে প্রোটিয়াদের সামনে দরকার ছিল ৩০ এর উপর রান। কিন্তু নির্ধারিত ওভার শেষে ৬ উইকেটে ১৩৭ রান তুলতে সক্ষম হয় তারা। লরা উলভারডট ৪৮ বলে ৬১ রান করেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ রান করেন ট্রায়ন।
অজিদের হয়ে মেগান, গার্ডনার, ব্রাউন ও জনাসেন একটি করে উইকেট নেন। প্রোটিয়াদের বাকি দুটি উইকেট পড়ে রান আউটের ফাঁদে।
২০০৯ সালে প্রথম নারী টি-২০ বিশ্বকাপের আসর বসে। এ নিয়ে টানা সপ্তম ফাইনালে উঠে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা। এর মধ্যে ছয়টিতেই জিতেছে তারা। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার হ্যাটট্রিক রেকর্ডও করেছে অজি মেয়েরা। অস্ট্রেলিয়ার ছেলে ও মেয়ে মিলিয়ে বিশ্বকাপের সংখ্যা এখন ২১টি। এছাড়া ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেয়েরা শিরোপা জিতেছে একবার করে।
স্পোর্টস ডেস্ক।। 


































