সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর খাবারদাবার কেমন হবে

  • ঢাকা ব্যুরো।।
  • প্রকাশের সময় : ০৯:০১:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০২৩
  • ১৩২

আজ এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখছি, যে রোগের প্রাদুর্ভাব ঢাকা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে এবং এর প্রকোপ এতই বেশি যে, মহামারি আকার ধারণ করতে যাচ্ছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ- অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে রোগটিতে। ডেঙ্গু নামক রোগটি প্রতিবছর বর্ষাকালেই সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়। তাতে আক্রান্ত হয় অসংখ্য মানুষ। এবার যেন রোগটি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। প্রায় ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। হাসপাতালেও রোগীতে সয়লাব। রোগটি প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে আরও বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বাড়তে পারে মৃত্যুসংখ্যা।

সত্যি কথা বলতে কী, ডেঙ্গু রোগীর জন্য এমন কোনো খাবার নেই, যা খেলে রোগী সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হয়ে উঠবে। তবে এমন কিছু টিপস আছে, যা মেনে চলতে পারলে দ্রুত এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে কিছু খাবারের পরিবর্তন, যা রোগীকে দ্রুত সেরে উঠতে সহাযতা করতে পারে। যেমন-

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর যাতে পানিশূন্যতা দেখা না দেয়, সেদিকে বেশি খেয়াল রাখতে হয়। সেক্ষেত্রে বয়সভেদে ৩-৪ লিটার পানি বা পানীয় খাবার (কচি ডাবের পানি, লেবুর শরবত, রসালো ফল বা ফলের রস, দুধ, লাচ্ছি, স্যুপ ইত্যাদি) খাওয়া যেতে পারে। বেশি পানিশূন্য হয়ে পড়লে মুখে স্যালাইন খেতে পারবে। এসব পানীয় পানিশূন্যতা রোধের পাশাপাশি দেহের সোডিয়াম পটাশিয়ামের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ফলে শরীরের যেসব টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেগুলো সারিয়ে তুলতে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে বেশি করে। এর মধ্যে আছে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বাদাম, ডাল ইত্যাদি। প্রোটিনের সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার, যেমন- টক জাতীয় ফল, সবুজ শাকসবজি খাবেন, যা দেহে আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করবে। ভিটামিন-ডি, যা আমরা ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ থেকে পাই, তা এ সময় হাড়ের কার্যকারিতা রক্ষায় ভূমিকা রাখে।

ডেঙ্গুর একটি বড় সমস্যা হচ্ছে, এতে রক্তের প্লাটিলেটের সংখ্যা খুব দ্রুতগতিতে কমতে থাকে। তাই সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সবুজ শাক, ডাল, বাদাম ইত্যাদি খাবার খাওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশে একটি ধারণা আছে যে, পেঁপে পাতার পানি রস প্লাটিলেটের সংখ্যা দ্রুত বাড়াতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু এখনো এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি। কিন্তু যেহেতু পেঁপে পাতায় আয়রন ও এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে, তাই সারা দিনে শিশুর ক্ষেত্রে আধাকাপ এবং বড়দের ক্ষেত্রে এক কাপ পর্যন্ত পেঁপে পাতার রস পান করা যেতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটি বেশি পরিমাণে পান করলে অ্যাসিডিটি, বদহজমসহ নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

ডেঙ্গুতে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রক্ত জমাট বাধার প্রক্রিয়া ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে ভিটামিন-কে বেশি আছে এমন খাবার (পালংশাক, ব্রকলি, মাংস, কলিজা, মটরশুঁটি, পনির ইত্যাদি) খেলে বেশ তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

ডেঙ্গুজ্বরে রোগীর মুখের রুচি কমে যায়। তাই রোগী যাতে সহজেই খাবার খেতে পারে এবং হজমের সুবিধার জন্য স্যুপ, পাতলা খিচুড়ি, নরম খাবার ইত্যাদি দিয়ে শুরু করতে পারেন। বেশি তেল-মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে, যাতে পেতে গ্যাস বা বদহজম না হয়।

ডায়াবেটিস, কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে হবে। রোগভেদে রোগীর খাদ্যতালিকা অবশ্যই ভিন্নভিন্ন হবে। রোগীর প্রতিদিনের রক্ত পরীক্ষার ফল, শারীরিক অবস্থা, পছন্দ-অপছন্দের ওপর নির্ভর করে খাবার তৈরি করতে হবে, যাতে রোগী তার রুচি অনুযায়ী খেতে পারে ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

লেখক : নিউট্রিশনিস্ট, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর-১০, ঢাকা। হটলাইন : ১০৬৭২

বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে যশোরে বর্ণাঢ্য র‌্যালি

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর খাবারদাবার কেমন হবে

প্রকাশের সময় : ০৯:০১:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০২৩

আজ এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখছি, যে রোগের প্রাদুর্ভাব ঢাকা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে এবং এর প্রকোপ এতই বেশি যে, মহামারি আকার ধারণ করতে যাচ্ছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ- অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে রোগটিতে। ডেঙ্গু নামক রোগটি প্রতিবছর বর্ষাকালেই সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়। তাতে আক্রান্ত হয় অসংখ্য মানুষ। এবার যেন রোগটি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। প্রায় ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। হাসপাতালেও রোগীতে সয়লাব। রোগটি প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে আরও বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বাড়তে পারে মৃত্যুসংখ্যা।

সত্যি কথা বলতে কী, ডেঙ্গু রোগীর জন্য এমন কোনো খাবার নেই, যা খেলে রোগী সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হয়ে উঠবে। তবে এমন কিছু টিপস আছে, যা মেনে চলতে পারলে দ্রুত এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে কিছু খাবারের পরিবর্তন, যা রোগীকে দ্রুত সেরে উঠতে সহাযতা করতে পারে। যেমন-

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর যাতে পানিশূন্যতা দেখা না দেয়, সেদিকে বেশি খেয়াল রাখতে হয়। সেক্ষেত্রে বয়সভেদে ৩-৪ লিটার পানি বা পানীয় খাবার (কচি ডাবের পানি, লেবুর শরবত, রসালো ফল বা ফলের রস, দুধ, লাচ্ছি, স্যুপ ইত্যাদি) খাওয়া যেতে পারে। বেশি পানিশূন্য হয়ে পড়লে মুখে স্যালাইন খেতে পারবে। এসব পানীয় পানিশূন্যতা রোধের পাশাপাশি দেহের সোডিয়াম পটাশিয়ামের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ফলে শরীরের যেসব টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেগুলো সারিয়ে তুলতে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে বেশি করে। এর মধ্যে আছে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বাদাম, ডাল ইত্যাদি। প্রোটিনের সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার, যেমন- টক জাতীয় ফল, সবুজ শাকসবজি খাবেন, যা দেহে আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করবে। ভিটামিন-ডি, যা আমরা ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ থেকে পাই, তা এ সময় হাড়ের কার্যকারিতা রক্ষায় ভূমিকা রাখে।

ডেঙ্গুর একটি বড় সমস্যা হচ্ছে, এতে রক্তের প্লাটিলেটের সংখ্যা খুব দ্রুতগতিতে কমতে থাকে। তাই সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সবুজ শাক, ডাল, বাদাম ইত্যাদি খাবার খাওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশে একটি ধারণা আছে যে, পেঁপে পাতার পানি রস প্লাটিলেটের সংখ্যা দ্রুত বাড়াতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু এখনো এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি। কিন্তু যেহেতু পেঁপে পাতায় আয়রন ও এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে, তাই সারা দিনে শিশুর ক্ষেত্রে আধাকাপ এবং বড়দের ক্ষেত্রে এক কাপ পর্যন্ত পেঁপে পাতার রস পান করা যেতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটি বেশি পরিমাণে পান করলে অ্যাসিডিটি, বদহজমসহ নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

ডেঙ্গুতে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রক্ত জমাট বাধার প্রক্রিয়া ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে ভিটামিন-কে বেশি আছে এমন খাবার (পালংশাক, ব্রকলি, মাংস, কলিজা, মটরশুঁটি, পনির ইত্যাদি) খেলে বেশ তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

ডেঙ্গুজ্বরে রোগীর মুখের রুচি কমে যায়। তাই রোগী যাতে সহজেই খাবার খেতে পারে এবং হজমের সুবিধার জন্য স্যুপ, পাতলা খিচুড়ি, নরম খাবার ইত্যাদি দিয়ে শুরু করতে পারেন। বেশি তেল-মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে, যাতে পেতে গ্যাস বা বদহজম না হয়।

ডায়াবেটিস, কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে হবে। রোগভেদে রোগীর খাদ্যতালিকা অবশ্যই ভিন্নভিন্ন হবে। রোগীর প্রতিদিনের রক্ত পরীক্ষার ফল, শারীরিক অবস্থা, পছন্দ-অপছন্দের ওপর নির্ভর করে খাবার তৈরি করতে হবে, যাতে রোগী তার রুচি অনুযায়ী খেতে পারে ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

লেখক : নিউট্রিশনিস্ট, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর-১০, ঢাকা। হটলাইন : ১০৬৭২