বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারীদের স্তনে চাকা দেখা দিলে যা করতে হবে

স্তন ক্যানসার এক মরণ ঘাতক ব্যাধি। এ ব্যাধিতে যে কোনো সময় মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগী ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যায়। স্তন ক্যানসার সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের নারীদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। যদিও মাত্র দুয়েক বছর আগে জরায়ুর ক্যানসার শীর্ষস্থানে অবস্থান করছিল।

স্তন ক্যানসার নারীদের কাছে একটি আতঙ্কের নাম। পুরুষের চেয়ে নারীর স্তন ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে শতভাগ বেশি। আর নারীরা তাদের নিজেদের এই গোপন অঙ্গের রোগগুলো সহজে কারও কাছে বলতে চান না। ফলে তারা স্তন ক্যানসারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বেশির ভাগ নারী নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নয়। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তবে যেসব মায়েরা সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ান না, তাদের স্তন ক্যানসারে ঝুঁকি বেশি।

স্তনের চাকা বা পিণ্ডের সমস্যাটি স্তন ফুলে যাওয়া বা স্তনের সিস্ট নামে পরিচিত। স্তনের ভেতরের টিস্যু বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারটির আরেক নাম স্তনে চাকা বা পিণ্ড সৃষ্ট হওয়া। স্তনের পিণ্ড বিভিন্ন ধরনের এবং এটির ফলে সৃষ্ট অনুভূতিও হয়ে থাকে ভিন্ন ভিন্ন। স্তনে পিণ্ড হলে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো স্তনে নির্দিষ্ট সীমারেখাযুক্ত পৃথক পিণ্ড। স্তনে পুরু ও বিশেষ স্থান সৃষ্টি হওয়া, যা আশপাশের স্তনের টিস্যুর চেয়ে ভিন্ন। স্তনের অন্য কোনো পরিবর্তন, যেমন লালভাব সৃষ্টি হওয়া, টোল পড়া বা গুটি সৃষ্টি হওয়া। একটি স্তন অপরটির চেয়ে অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে যাওয়া। স্তনবৃন্তে পরিবর্তন। যেমন স্তনবৃন্ত ভেতরে ঢুকে যাওয়া ও সেখান থেকে অবিরতভাবে তরল নির্গত হওয়া। স্তনে ব্যথা বা নরমভাব সৃষ্টি হওয়া। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্তনের পিণ্ড স্তনের ক্যানসারের লক্ষণও হতে পারে। তাই এ সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

স্তনে পিণ্ড হওয়ার ঝুঁকি : স্তনে পিণ্ড হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে যে বিষয়গুলো তা হলো আগে স্তন ক্যানসার হওয়া। কোনো নিকটাত্মীয়ের স্তন ক্যানসার থাকা। বয়স বৃদ্ধি (৩৫ বছরের আগে ৫ শতাংশ এবং ৫০ বছরের আগে ২৫ শতাংশ)। সন্তান জন্ম না দেওয়া বা ৩০ বছরের পর প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়া। স্তন্যপান না করানো। মাসিক স্বাভাবিক সময়ের আগে শুরু হওয়া ও পরে বন্ধ হওয়া। হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি। বুকে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব (মাত্রা কম হলেও)। স্তনের আকার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত এ ঝুঁকির কোনো সম্পর্ক নেই। তবে কোন ধরনের ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহৃত হচ্ছে, তা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

পরামর্শ : স্তনে পিণ্ড সৃষ্টি হলে এবং সেখানে ব্যথা অনুভূত হলে প্রথমে সাধারণ চিকিৎসক বা গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। স্তনের অনেক পিণ্ডই ক্ষতিকর নয়। তবু কিছু ক্ষেত্রে বায়োপ্সি করার প্রয়োজন হতে পারে। ম্যামোগ্রাফি বা বায়োপ্সিতে আরও গুরুতর পরিবর্তন ধরা পড়লে ক্যানসার সার্জন ও অনকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। –সুত্র আমাদের সময়

লেখক : চিফ মেডিক্যাল অফিসার। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা -চেম্বার : মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিস লি.

জনপ্রিয়

নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

নারীদের স্তনে চাকা দেখা দিলে যা করতে হবে

প্রকাশের সময় : ০৯:২৮:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৩
স্তন ক্যানসার এক মরণ ঘাতক ব্যাধি। এ ব্যাধিতে যে কোনো সময় মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগী ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যায়। স্তন ক্যানসার সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের নারীদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। যদিও মাত্র দুয়েক বছর আগে জরায়ুর ক্যানসার শীর্ষস্থানে অবস্থান করছিল।

স্তন ক্যানসার নারীদের কাছে একটি আতঙ্কের নাম। পুরুষের চেয়ে নারীর স্তন ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে শতভাগ বেশি। আর নারীরা তাদের নিজেদের এই গোপন অঙ্গের রোগগুলো সহজে কারও কাছে বলতে চান না। ফলে তারা স্তন ক্যানসারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বেশির ভাগ নারী নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নয়। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তবে যেসব মায়েরা সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ান না, তাদের স্তন ক্যানসারে ঝুঁকি বেশি।

স্তনের চাকা বা পিণ্ডের সমস্যাটি স্তন ফুলে যাওয়া বা স্তনের সিস্ট নামে পরিচিত। স্তনের ভেতরের টিস্যু বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারটির আরেক নাম স্তনে চাকা বা পিণ্ড সৃষ্ট হওয়া। স্তনের পিণ্ড বিভিন্ন ধরনের এবং এটির ফলে সৃষ্ট অনুভূতিও হয়ে থাকে ভিন্ন ভিন্ন। স্তনে পিণ্ড হলে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো স্তনে নির্দিষ্ট সীমারেখাযুক্ত পৃথক পিণ্ড। স্তনে পুরু ও বিশেষ স্থান সৃষ্টি হওয়া, যা আশপাশের স্তনের টিস্যুর চেয়ে ভিন্ন। স্তনের অন্য কোনো পরিবর্তন, যেমন লালভাব সৃষ্টি হওয়া, টোল পড়া বা গুটি সৃষ্টি হওয়া। একটি স্তন অপরটির চেয়ে অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে যাওয়া। স্তনবৃন্তে পরিবর্তন। যেমন স্তনবৃন্ত ভেতরে ঢুকে যাওয়া ও সেখান থেকে অবিরতভাবে তরল নির্গত হওয়া। স্তনে ব্যথা বা নরমভাব সৃষ্টি হওয়া। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্তনের পিণ্ড স্তনের ক্যানসারের লক্ষণও হতে পারে। তাই এ সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

স্তনে পিণ্ড হওয়ার ঝুঁকি : স্তনে পিণ্ড হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে যে বিষয়গুলো তা হলো আগে স্তন ক্যানসার হওয়া। কোনো নিকটাত্মীয়ের স্তন ক্যানসার থাকা। বয়স বৃদ্ধি (৩৫ বছরের আগে ৫ শতাংশ এবং ৫০ বছরের আগে ২৫ শতাংশ)। সন্তান জন্ম না দেওয়া বা ৩০ বছরের পর প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়া। স্তন্যপান না করানো। মাসিক স্বাভাবিক সময়ের আগে শুরু হওয়া ও পরে বন্ধ হওয়া। হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি। বুকে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব (মাত্রা কম হলেও)। স্তনের আকার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত এ ঝুঁকির কোনো সম্পর্ক নেই। তবে কোন ধরনের ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহৃত হচ্ছে, তা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

পরামর্শ : স্তনে পিণ্ড সৃষ্টি হলে এবং সেখানে ব্যথা অনুভূত হলে প্রথমে সাধারণ চিকিৎসক বা গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। স্তনের অনেক পিণ্ডই ক্ষতিকর নয়। তবু কিছু ক্ষেত্রে বায়োপ্সি করার প্রয়োজন হতে পারে। ম্যামোগ্রাফি বা বায়োপ্সিতে আরও গুরুতর পরিবর্তন ধরা পড়লে ক্যানসার সার্জন ও অনকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। –সুত্র আমাদের সময়

লেখক : চিফ মেডিক্যাল অফিসার। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা -চেম্বার : মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিস লি.