
‘তুমি তো আমায় গিয়েছো ভুলে ওগো বন্ধু…ভুলে যাব আমিও ভেবেছি’ এই গানটিতে লিমা পাগলী যখন টান দিয়েছেন। ষাটোর্ধ তজের আলী তখন অঝরে কাঁদছিলেন। এই প্রবীণ একা নন। গ্রামীণ আসরের সব দর্শকের চোখ-ই তখন লোনা জলে ছলছল করছিল।
এখন আর গ্রাম-গঞ্জে যাত্রাপালা হয় না, বসেনা গানের আসরও। শেকড়ের গান আর আসর পেতে শোনা হয় না। তাই যখন-ই গ্রামে গানের আসর বসে তখনই আসরে ছুটে আসেন আফছার আলীরা। তেমন-ই এক আসরের শিল্পী ছিলেন ‘লিমা পাগলী’। এই পাগলীর কাটা বিচ্ছেদে হৃদয় ফালাফালা হচ্ছিল তজের আলীর মতো প্রবীণদের।
লিমা পাগলীর শ্রোতা ইত্তেফাককে জানান, লিমা পাগলী যখন বিচ্ছেদে টান দেন, তখন নিরব নিস্তবদ্ধতা নেমে আসে। মানুষ গানের ভেতর ঢুবে যায়। অনেকেই কাঁদেন। তাদের মতে, লোকগান গেয়ে গ্রামীণ মানুষের হৃদয়ে জায়গা পাওয়ার নজির খুবই কম। এ ক্ষেত্রে লিমা পাগলীর বিষয়টি ভিন্ন। তার গান হৃদয়ে দাগ কাটে। নিয়ে যায় পুড়নো স্মৃতিতে। এই শিল্পীর গানে মাতাল বনে যান নানা ঢংয়ের মানুষ। মূলত গাওয়ার ভঙ্গিতে বিশেষ কিছু থাকায় শ্রোতারাই তার নামের সঙ্গে পাগলী উপাধি যোগ করেছেন। সেই থেকে লিমা হয়েছেন ‘লিমা পাগলী’।
সরেজমিনে চলনবিলের তিশীখালি মাজারে লোকগানের আসরে লিমা পাগলী গান শোনান। সেখানে দেখাযায়, সাদা ধবধবে পোশাকের সঙ্গে মাথায় সাদা পাগড়ি পড়া লিমা পাগলী তার মায়াবিনী কণ্ঠে সুরের আবেশ ছড়াচ্ছেন। এই আসরে ‘আমারে কেউ ভালোবাসে না, আমার একটাই দুঃখ, একটাই কষ্ট, আঘাতে আঘাতে ব্যাথা বেদনাতে….আমি যে কত কষ্টে আছি ও দরদি আমি তো অনেক সুখে আছি, না জেনে না বুঝে তারে ভালোবাসিলাম’ এমন বিচ্ছেদ গান গাইতে শোনা যায়। চারিদিকে গোলাকার বৃত্তের মতো বসে লিমা পাগলীর গাওয়া এমন কাটা বিচ্ছেদ গভীর আগ্রহভরে শুনছেন শ্রোতারা। দেশজুড়েই লিমা পাগলীর এমন জনপ্রিয়তা।
লিমা পাগলী বলেন, রুমা সরকার তার গানের গুরু। গুরুভক্তি রেখেই তিনি লোক গান করছেন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ইউটিউবে মানুষ তাকে ব্যাপকভাবে সাড়া দিচ্ছেন। তার চেয়ে বেশি সাড়া পাচ্ছেন মঞ্চ শো-গুলোতে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ নিয়মিত তার গান শুনছেন। এই শিল্পীর মতে, গান নিয়ে তার ব্যস্ততা বেড়েছে। চলছে টেলিভিশন শো, মৌলিক গানের রেকর্ড। সব ব্যস্ততা ছাপিয়ে তিনি গ্রামের আসরে তৃণমূল মানুষের জন্য লোকগান করতে চান।
নাটোর প্রতিনিধি।। 







































