
স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে মামলায় ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো। ফলে প্রতিদিনই অর্থঋণ আদালতে মামলার সংখ্যা বাড়ছে। তবে মামলা যে হারে বাড়ছে, নিষ্পত্তি সে হারে হচ্ছে না। গত জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব ধরলে, অর্থঋণ আদালতে ৭২ হাজার ৫৪০টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এসব মামলায় ব্যাংকগুলোর আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ছয় মাস আগে গত ডিসেম্বরে ৭২ হাজার ১৮৯টি বিচারাধীন মামলার বিপরীতে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে নতুন মামলার পাশাপাশি আটকে থাকা অর্থের পরিমাণও বেড়েছে।
ব্যাংক খাতের কর্মকর্তারা বলছেন, মামলাগুলোতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে যাচ্ছে। গতিশীলতা হারাচ্ছে সার্বিক কার্যক্রমে। নেতিবাচক প্রভাব পড়লে দেশের অর্থনীতিতে।
সূত্র বলছে, বেশির ভাগ ঋণই নেওয়া হয়েছে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে এসব ঋণ আদায় করার কঠিন হয়ে পড়েছে। বারবার সুবিধা ও ছাড় দেওয়ার পরও ঋণ ফেরত দিচ্ছেন না খেলাপিরা। এসব ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু নানা কারণে এসব মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে খুবই কম। এমন পরিস্থিতিতে সর্বশেষ ব্যাংকার্স সভায় খেলাপি ঋণের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংকগুলোকে নানা নির্দেশনা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।
জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের কৌশলগত পরিকল্পনা ২০২০-২০২৪-এর আইন বিভাগ সংশ্লিষ্ট অবজেকটিভ ৯-৪ (বি)-এর অ্যাকশন প্লান-জি অংশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মামলাধীন খেলাপি ঋণ নজরদারির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৌশলগত পরিকল্পনার ওই লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ কমানোর লক্ষ্যে বিচারাধীন মামলার ঋণ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আইন বিভাগ থেকে নিয়মিত তদারকি করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী এ সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আইন বিভাগ থেকে ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত নির্দেশনা, পরামর্শ ও বিবিধ সহায়তা দেওয়া হয়। তার পরও ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায়সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে কম। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা কম হওয়া, বিচারকের অভাব এবং আইনি মতামতের জন্য ব্যাংকের আইনজীবীকে পর্যাপ্ত সময় ও নথিপত্র সরবরাহ করতে না পারায় মামলা নিষ্পত্তির গতি কম।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতাসহ বিভিন্ন কারণে অর্থঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে ধীরগতি দেখা যায়। অনেক সময় বিচারক ছুটিতে থাকেন বা ট্রান্সফার হয়ে যান। এ ছাড়া অভিজ্ঞ আইনজীবীরও অভাব রয়েছে। আরেকটা সমস্যা হলোÑ মামলা হলেই তার বিপরীতে রিট করে স্থগিতাদেশ নেন ঋণখেলাপিরা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলায় ব্যাংকের দাবিকৃত টাকার অংক বেড়েছে ১১ হাজার ৩৯০ কোটি। একই সময়ে অনিষ্পন্ন মামলা বেড়েছে ৩৫১টি। বেসরকারি ব্যাংকের বিচারাধীন মামলার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ৪৪ হাজার ৬০৫টি মামলার বিপরীতে তাদের ৯৯ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা আটকে আছে। ছয় মাস আগে ৪৩ হাজার ১৫৩ মামলার বিপরীতে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত জুন শেষে রাষ্ট্র্রায়ত্ত ব্যাংকের বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৪৮০টি। এর বিপরীতে পাওনার পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। ছয় মাস আগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৬০৪টি। পাওনার পরিমাণ ছিল ৭১ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৯৩৩টি। এসব মামলায় আটকে আছে ২ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিদেশি ব্যাংকগুলোর মামলার সংখ্যা আট হাজার ৫২২টি। এসব মামলা আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা।
বানিজ্য ডেস্ক।। 





































