
আনসার বাহিনীকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়াকে নজিরবিহীন ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। আজ মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, পুলিশের সর্বগ্রাসী গ্রেপ্তারি অভিযানের পরও সরকার শঙ্কাযুক্ত হতে পারছে না বলেই আনসার বাহিনীকে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসন এখন জনগণের প্রতিষ্ঠান নয়, এটিকে গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকু মুছে দিতে নব্য বাকশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। দেশটাকে চিরতরে আওয়ামীলীগের অধীনে রাখার জন্য গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনা জনপ্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগকে আওয়ামী লীগের উইং হিসেবে তৈরি করেছেন। সেই কারণে তারা ন্যায়বিচার, সুশাসন এবং চিন্তার স্বাধীনতাকে সমাধিস্থ করেছে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃ:স্ফূর্ত। তা স্বত্বেও আওয়ামীপন্থী পুলিশ কর্মকর্তারা জনমনে নানা আতঙ্কের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরেই চলছে নির্বিচারে গ্রেপ্তার। ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী জেলাগুলোতে নেতাকর্মীরা বাড়ি-ঘর-পরিবার ছাড়া হয়ে দ্বিগবিদ্বিগ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দলের নেতাকর্মীদের যেখানেই পাচ্ছে সেখানেই নির্বিচারে আটক করছে পুলিশ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, গত সোমবার গভীর রাতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) হারুনুর রশিদ হারুন, সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক, নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহী ওমৎস্যজীবী দলের কেন্দ্রীয় নেতা রনি আকতারকে তাদের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। গত ২৮ জুলাই মহাসমাবেশ থেকে সারাদেশে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ৩৯৮ মামলায় ২৬ হাজার ৫৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় ১ হাজার ৯৯৫ জন আহত হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাস্তবিকই বাংলাদেশের কারাগারগুলো এখন ভয়াবহ নিপীড়ন-নির্যাতনের আয়নাঘর। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে দম বন্ধ করা সেলে রাখা হয়। দিনরাত তাদের লকআপে রাখা হয়। ডাকাতি ও খুনের ভয়ঙ্কর অপরাধীরা কারাগারের ভেতরে যে অধিকারটুকু ভোগ করে সেটুকুও বিএনপি নেতাকর্মীদের নেই।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, কেরানীগঞ্জ কারাগারে শাপলা বিল্ডিংয়ে বেশির ভাগ বিএনপি নেতাকর্মীদের দিনরাত আটকিয়ে রাখা হয়। পাশাপাশি অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়। নিজের টাকা দিয়ে খাবার কেনার নিয়ম থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের সেই অধিকারটুকুও দেওয়া হয় না। এমনিতেই পিসি (প্রিজনার্স ক্যান্টিন) ক্যান্টিনে একটা খাদ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় ৫/৬ গুণ বেশি। বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিকল্পিতভাবে আর্থিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে শোষণ-বঞ্চনা করা হচ্ছে। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেল বিপজ্জনক জঙ্গি অপরাধীদের জন্য। সেখানেই বিএনপির নেতাকর্মী, ইউনিভার্সিটি, কলেজের ছাত্রদেরকে গাদাগাদি করে রাখা হয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতারাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া শুরু হয়েছে। গণতন্ত্রকামী জনগণের আন্দোলনকে দমন করতেই সরকার গ্রেপ্তার ও সাজা দেওয়ার পথ অবলম্বন করেছে। গায়েবি মামলায় বিপুল সংখ্যক অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়। এরপর গ্রেপ্তারকৃতদের ওই অজ্ঞাতনামা আসামির জায়গায় নাম বসিয়ে দেওয়া হয়। গায়েবি ককটেল আর গায়েবি বিস্ফোরক ধরার গায়েবি মামলায় অধিকাংশ গ্রেফতারদের নামে অভিযোগ আনা হয়। গায়েবি মামলায় এখন সরকার গায়েবি সাক্ষ্যও চালু করেছে। বানানো সাক্ষীকে গায়েবি সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি ফৌজদারি মামলায় পুলিশ সাক্ষী দিতে ইতস্তত করলে অথবা শেখানো কথা না বললে তার বিরুদ্ধে পুলিশের সদর দপ্তর থেকে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
ঢাকা ব্যুরো।। 







































