
ফিলিস্তিনে গাজা উপত্যকায় মানবিক বিরতি ঘোষণা করতে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সাম্প্রতিক বক্তব্যে তেমন ইঙ্গিতই মিলেছে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠক শেষে জি-৭ জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে গাজায় অবিলম্বে মানবিক বিরতি ঘোষণা এবং বেসামরিক লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়র জন্য করিডোরের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্লিনকেন আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিন ও গাজা প্রশ্নে ওয়াশিংটনের অবস্থান একদম স্পষ্ট; আর তা হলো—কোনো দখলদারিত্ব চালানো যাবে না, গাজা উপত্যকা থেকে অবরোধ তুলে নিতে হবে এবং গাজা উপত্যকার বেসামরিক লোকজনকে তাদের আবাসস্থল থেকে উচ্ছেদ করা বন্ধ করতে হবে।’
জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। সেই অভিযান এখনও চলছে। গত অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে গাজা উপত্যকায় অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলের স্থল বাহিনীও।
হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। এছাড়া হামলার প্রথম দিনই ইসরায়েল থেকে অন্তত ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে গেছে হামাস যোদ্ধার। অন্যদিকে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১০ হাজার। এই নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু ও নারী।
এই যুদ্ধ শুরুর এক সপ্তাহ পর জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করে রাশিয়া। সেই প্রস্তাবে সমর্থন জানায় চীনও। বর্তমানে জাতিসংঘ, ইসলামি বিশ্ব ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের দেশও গাজায় যুদ্ধবিরতি আহ্বানের সোচ্চার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৫৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার সংঘাত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের আল-আকসা অঞ্চলে। ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করার আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ তারা থামাবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা ইসরায়েলের এই অবস্থানকে সমর্থনও করছে। তবে সমর্থনের পাশাপাশি গাজায় মানবিক বিরতি ঘোষণার জন্য ইসরায়েলকে চাপও দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব।
তবে গাজায় কোনো প্রকার বিরতি ঘোষণায় শুরু থেকেই তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সম্প্রতি অবশ্য তিনি বলেছেন, যদি হামাস জিম্মিদের মুক্তি দেয়— কেবল তাহলেই মানবিক বিরতি হতে পারে।
তবে হামাস জানিয়েছে, বিরতি না দিলে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে না।
এদিকে কিছুদিন আগে এবিসি রেডিওকে দেওয়া নেতানিয়াহু বলেছেন, চলমান এই যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ইসরায়েল।
বৃহস্পতিবার এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহুর এই ঘোষণাকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে ব্লিনকেন বলেছেন, ‘এটা ঠিক যে যুদ্ধের পর গাজার প্রশাসন পরিচালনার জন্য অন্তবর্তীকালীন একটি ব্যবস্থা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা পশ্চিম তীরে ক্ষমতাসীন সরকারই যথেষ্ট। ইসরায়েলের সেখানে প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। 







































