
চরকিতে ৩০ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’। ওয়েব ফিল্মটি বিশেষ কারণে ভালো লেগেছে। কাহিনী, নির্মাণ, অভিনয় সবই প্রশংসার যোগ্য। আমাকে টেনেছে কাহিনী বিন্যাস। কাহিনীটি কোনো একজনের জীবনের গল্প নয়, যেন প্রতিটি মানুষের জীবনের গল্প। পারিবারিক একটি কাহিনী কীভাবে মোড় নিয়ে রাজনীতি, ক্ষমতা, রাষ্ট্রযন্ত্র ও বিশ্বকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরতে পারে। ফারুকী সেটাই দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
অভিনেত্রী তিথি ও তার নির্মাতা স্বামী ফারহানের পক্ষ থেকে তাদের সদ্যোজাত কন্যার উদ্দেশে লেখা লাভ লেটার ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’। একই সঙ্গে দেখা গেল শব্দদূষণ নিয়ে ফারহানের উদ্বিগ্নতা। অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে একজন বাবা বা একজন স্বামী উদ্বিগ্ন হতেই পারেন। রাষ্ট্রের সিস্টেম এবং ক্ষমতাবান মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে আছে সাধারণ মানুষ। সেটা আর বলে দিতে হয় না। একজন চিত্রপরিচালক, একজন জনপ্রিয় নায়িকাও সেই ক্ষমতার কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হন।
এ ছাড়া বর্ণবাদ উঠে এসেছে এই গল্পে। যেখানে একজন সেবিকা নবজাতক কন্যার শরীরের বর্ণ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘নায়িকার মেয়ের গায়ের রঙ কালো কেন?’ প্রসূতি মায়ের চোখের জল তখন বিশাল জিজ্ঞাসা রেখে যায় দর্শকের জন্য। মা তিথি তাদের অটোবায়োগ্রাফিতে শেষ দৃশ্য রাখতে চান না। তবে বাবা ফারহান একজন নির্মাতা হিসেবে যুক্তি দেন, এই দৃশ্যটি ওর দেখা উচিত। কারণ এসব উপেক্ষা করেই বেঁচে থাকতে হবে সন্তানকে।
ক্ষমতার কাছে অসহায় জীবনের আত্মসমর্পণ দর্শককে ভাবিয়ে তুলেছে। নায়িকার প্রতি সাবেক মন্ত্রীর ছেলের একরৈখিক প্রেম, সন্তান লাভের আশায় বলিউডে কাজ করার সুযোগ হাতছাড়া করাÑ সব মিলিয়ে মিডিয়ার ভেতরের গল্প এটি।
সিনেমায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নুসরাত ইমরোজ তিশা, ডলি জহুর, ডিপজলসহ আরও অভিনয় করেছেন ইরেশ যাকের, শরাফ আহমেদ জীবন, লেলিন প্রমুখ। বাংলা সিনেমার খল-অভিনেতা ডিপজলের অন্যরকম চেহারা দেখা গেল এখানে। তবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অভিনয়ও মুগ্ধ করেছে।
একজন প্রভাবশালী নেতার পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার দৃশ্যটি বিবেক এবং বোধকে নাড়া দিয়েছে। অপরাধী হয়েও ভুক্তভোগী এক বাবাকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটানো সমাজেরই বাস্তব চিত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কারণ গল্পটি স্বামী-স্ত্রী বা পরিবারের হলেও পরে তা পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এমনকি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও যে ক্ষমতার কাছে জিম্মি, তা স্পষ্ট করা হয়েছে।
এই পরিচালকের একটি সিনেমা সেন্সরে আটকে থাকার বিষয়, নেতাকে নিয়ে করোনাকালে ফেসবুকে সাতটি নেতিবাচক স্ট্যাটাস দেওয়ার প্রসঙ্গ কাহিনীকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। সেই ক্ষোভ থেকেই নেতার ছেলে বাবার অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছে সুযোগ বুঝে। মধ্যস্থতাকারী সাবেক মন্ত্রীর ছেলে ইরেশ যাকের মামলার সমাধান করিয়েছেন ঠিকই; কিন্তু নিজে না পাওয়ার ক্ষোভকেও একটু ঝালিয়ে নিয়েছেন।
সব মিলিয়ে এটি একটি সাহসী নির্মাণ। সমাজের বিরুদ্ধে একটি জোরালো প্রতিবাদ। ক্ষমতার কাছে অসহায়ত্বের মাথা নত করার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সামাজিক অবস্থান শক্ত না হলে এ সমাজে টিকে থাকা অনেকটা চ্যালেঞ্জের। তারই বাস্তব উদাহরণ ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’।
বিনোদন ডেস্ক ॥ 







































