
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে দ্বিতীয়বারের মতো সিরিজ জয়ের পথে ছিল বাংলাদেশ। রান তাড়ায় ৪৩ রানের মধ্যেই লঙ্কানদের ৩ উইকেট তুলে নিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণের স্বপ্ন বুনছিল টাইগাররা। কিন্তু চতুর্থ উইকেট জুটিতে পাথুম নিশাঙ্কা ও চারিথ আসালাঙ্কা বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলেন। শেষদিকে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ালেও লঙ্কানরা ম্যাচ জিতেছে ৩ উইকেটে। এই জয়ে সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতা ফেরাল শ্রীলঙ্কা। আগামী সোমবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।
আজ শুক্রবার (১৫ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে তাওহিদ হৃদয় ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এছাড়া ওপেনার সৌম্য সরকার করেন ৬৮ রান। জবাব দিতে নেমে শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ মিলে লঙ্কান শিবিরে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন। তবে পাথুম নিশাঙ্কার ১১৪ ও চারিথ আসালাঙ্কা ৯১ রানে ভর করে ১৭ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌছে যায় সফরকারীরা।
এদিন টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরু পায়নি বাংলাদেশ। আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও শূন্য রানে আউট হন লিটন দাস। দিলশান মাদুশঙ্কার লেগ স্টাম্প বরাবর করা বল ফ্লিক করেছিলেন লিটন। বল চলে গিয়েছিল সোজা স্কয়ার লেগে। সেখানে সহজ ক্যাচ নিয়েছেন দুনিথ ওয়েলালাগে।
এরপর তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে ইনিংস টানছিলেন সৌম্য। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে সুইপ করে চার মেরে ৫২ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন সৌম্য। মনে হচ্ছিল, আরও অনেক দূর যাবেন এই ব্যাটার। তবে তাকে ফিরিয়ে ৫৫ রানের জুটি ভেঙেছেন হাসারাঙ্গাই। লঙ্কান এই লেগ স্পিনারের বলে রিভার্স সুইপ করেছিলেন সৌম্য।
ভালো টাইমিং হলেও বল চলে গিয়েছিল মিড উইকেটে। সেখানে দৌড়ে এসে দারুণ ক্যাচ মুঠোবন্দি করেছেন মাদুশঙ্কা। ফলে ৬৬ বলে ৬৮ রান করে শেষ হয়েছে সৌম্যর ইনিংস। আউট হওয়ার আগে ১১টি চারের সঙ্গে মেরেছেন একটি ছক্কা। এর আগে দ্রুততম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ২ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন সৌম্য।
সৌম্য আউট হওয়ার দুই বল পর ফিরে গেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। আগের ম্যাচে ৩৭ রানের ইনিংস খেলা রিয়াদ আউট হয়েছেন শূন্য রানে। হাসারাঙ্গার গুগলিতে বিভ্রান্ত হয়ে স্টাম্পিং হয়ে আউট হয়েছেন তিনি। এরপর হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম মিলে যোগ করেন ৪৩ রান।
মুশফিককেও আউট করেছেন হাসারাঙ্গা। এই লেগ স্পিনারের ফুল লেংথের বলে সুইপ করতে গিয়েছিলেন মুশফিক। তবে ব্যাটে বলে করতে পারেননি। বল আঘাত করেছিল সোজা প্যাডে। লঙ্কান ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল। তবে শ্রীলঙ্কা রিভিউ নিলে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্পে পিচ করে আঘাত করত লেগ মিডল স্টাম্পে।
ফলে থার্ড আম্পায়ার আউট ঘোষণা দেন মুশফিককে। ২৮ বলে ২৫ রান করে ফিরে যেতে হয় তাকে। মেহেদী হাসান মিরাজকেও বেশিক্ষণ থিতু হতে দেননি হাসারাঙ্গা। এই স্পিনারের বলে এগিয়ে গিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন মিরাজ। তবে শেষ মুহূর্তে নিজের ভুল বুঝে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন মিরাজ। তবে সেই বলে সোজা আঘাত করে স্টাম্পে। ১২ রান করেই ফিরে যেতে হয় মিরাজকে।
লয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া তাওহিদ হৃদয় ৭৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। শেষদিকে হৃদয়কে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব। এই দুজনের জুটি থেকে এসেছে ৪৭ রান। মাদুশঙ্কার ওপর চড়াও হতে গিয়ে ৩৩ বলে ১৮ রান করে আউট হয়েছেন সাকিব। মাদুশঙ্কার লেংথ বলে বড় শট খেলতে গিয়ে মিড অফে হাসারাঙ্গার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হতে হয়েছে তাকে।
হৃদয়কে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তাসকিন আহমেদও। এর মধ্যে প্রমোদ মাদুশঙ্কাকে পরপর দুই বলে ছক্কা ও চার মারেন তাসকিন। লাহিরু কুমারাকে ইনিংসে শেষ দুই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে শেষ পর্যন্ত ৯৬ রানে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন হৃদয়। তাসকিন ইনিংস শেষ করেছেন ১০ বলে ১৮ রান নিয়ে। ফলে বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায়।
বাংলাদেশের দেওয়া ২৮৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছে শ্রীলঙ্কা। তবে দ্রুত উইকেট তুলে নিয়ে তাদের চাপে ফেলে দেন শরিফুল–তাসকিনরা। রানের খাতা খোলার আগেই ওপেনার আভিষ্কা ফার্নান্দোকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪২ রান যোগ করেন নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস।
তবে আগ্রাসী হয়ে ওঠার আগে তাসকিন সফরকারী অধিনায়ক মেন্ডিসকে ১৬ রানে ফেরান। তার পরপরই শরিফুলের বলে সাদিরা সামারাবিক্রমা (১) ফিরলে বাংলাদেশের আশার পালে দোলা লাগে। এরপর চতুর্থ উইকেট প্রতিরোধ গড়ে তুলেন পাথুম নিশাঙ্কা ও চারিথ আসালাঙ্কা। দুজনে মিলে চতুর্থ উইকেটে ১৮৫ রানের বিশাল জুটি গড়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচকে কেড়ে নেন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ উইকেট জুটিতে রেকর্ড গড়ার পথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ওপেনার নিশাঙ্কা। তবে ১১৩ বলে ১১৪ রানে বিদায় নেন তিনি। তাকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া আসালাঙ্কাও ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। তবে ৯১ রানে থাকাবস্থায় তাকে মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দী বানান পেসার তাসকিন আহমেদ।
এর আগে আসালাঙ্কা-নিশাঙ্কার জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে ততক্ষণে লঙ্কানরা জয়ের পথটা সহজ করে নিয়েছে। শেষদিকে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ১৬ বলে ২৫ ও দুনিথ ওল্লালাগে ২৬ বলে ১৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলের জয়ে অবদান রাখেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৮৬/৭ (লিটন দাস ০, সৌম্য সরকার ৬৮, নাজমুল হোসেন শান্ত ৪০, তাওহিদ হৃদয় ৯৬*, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ০, মুশফিকুর রহিম ২৫, মেহেদি হাসান মিরাজ ১২, তানজিম হাসান সাকিব ১৮, তাসকিন আহমেদ ১৮*; দিলশান মাদুশঙ্কা ২/৩০, প্রমোদ মদুশান ১/৭২, লাহিরু কুমারা ০/৫০, জানিথ লিয়ানাগে ০/৩০, চারিথ আসালাঙ্কা ০/১০, দুনিথ ভেল্লালাগে ০/৪৭ ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৪/৪৫)
শ্রীলঙ্কা: ৪৭.১ ওভারে ২৮৭/৭ (পাথুম নিশাঙ্কা ১১৪, আভিষ্কা ফার্নান্দো ০, কুশল মেন্ডিস ১৬, সাদিরা সামারাবিক্রমা ১, চারিথ আসালাঙ্কা ৯১, জানিথ লিয়ানাগে ৯, দুনিথ ভেল্লালাগে ১৫*, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ২৫, প্রমোদ মদুশান ০*; শরীফুল ইসলাম ২/৪৯, তানজিম হাসান সাকিব ১/৬৫, তাসকিন আহমেদ ২/৪৯, মেহেদী হাসান মিরাজ ১/৫৮, তাইজুল ইসলাম ১/৪৩, সৌম্য সরকার ০/২১ ও তাওহিদ হৃদয় ০/২)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: পাথুম নিশাঙ্কা
স্পোর্টস ডেস্ক।। 





























