শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৫ লাখ না দিলে লিবিয়ায় জিম্মি সাকিলকে মেরে ফেলার হুমকি!

ছবি: খবরের কাগজ

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের টিটুল মিয়ার একমাত্র ছেলে সাকিল মিয়া (২৪) দালালের খপ্পরে বিদেশে গিয়ে এখন সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে জিম্মি।

মঙ্গলবারের (২৬ মার্চ) মধ্যে মুক্তিপণের ১৫ লাখ টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে জিম্মিকারীরা। এ অবস্থায় তার পরিবার এখন দিশেহারা। সামান্য কৃষক পরিবারের এই সন্তানকে মুক্ত করতে এত টাকা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই অজানা শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।

টিটুল মিয়ার পরিবার জানায়, একই গ্রামের মুকুল ঠাকুর নামে একজন দালালের প্রলোভনে জমি বিক্রি করে ধারদেনা করে ১২ লাখ টাকা গুছিয়ে তারা সাকিলকে বিদেশে পাঠান। কিন্তু দুই মাস না যেতেই এখন তাদের কাছে আরও ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে। ইমোতে সাকিলকে নির্যাতনের কল রেকর্ড শুনিয়ে বলা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই টাকা দেওয়ার জন্য।

সাকিলের বড় বোন বৃষ্টি আক্তার বলেন, ‘তারা এক ভাই, এক বোন। তার বিয়ে হয়ে গেছে আগেই। একমাত্র ভাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য তার বাবা একই গ্রামের মুকুল ঠাকুরের হাতে ১২ লাখ টাকা তুলে দেন।’

তিনি জানান, গত ৪ জানুয়ারি প্রথমে সাকিলকে সড়কপথে ভারতে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে বিমানে দুবাই হয়ে ১৪ জানুয়ারি লিবিয়ায় নিয়ে যায়। এরপর লিবিয়ায় একটি ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল বলে জানানো হয়। তখন কয়েকদিন স্বাভাবিক কথাবার্তাও হয়েছে তাদের সঙ্গে।

কিন্তু গত ১২ দিন আগে তার বাবার মোবাইল ফোনের ইমোতে একটি কল আসে। তখন ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে তার ভাই হাউমাউ করে বলে, তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে রেখেছে।

সাকিল আর্তনাদ করে বলেন, ‘আব্বা আরও ১৫ লাখ টাকা দিতেই হবে, নইলে ওরা আমাকে মাইরা ফেলবে!’

তিনি জানান, সাকিলকে নির্যাতনের সময় ইমোতে কল দিয়ে শোনানো হচ্ছে বাড়ির লোকদের। ওরা তাকে খাবারও দেয় না ঠিকমতো।

বৃষ্টি বলেন, ‘নির্যাতনকারীরা বাংলা ভাষাতেই কথা বলেছেন। এখন তারা মুক্তিপণ হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দাবি করছে।

সাকিলের বাবা টিটুল মিয়া বলেন, ‘আমি এত টাকা কোথায় পাব! শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ১২ লাখ টাকা জোগাড় করেছি। সেই টাকা আগেই মুকুল ঠাকুরের হাতে তুলে দিছি। এখন আমি কী করব?

এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। এখন তাকে উদ্ধারের জন্য পরিবার যদি কোনো সহযোগিতা চায়, তাহলে সহযোগিতা করা হবে। ঢাকায় দূতাবাসে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হবে। তিনি বলেন, ওই পরিবার যদি অভিযোগ দেয়, তাহলে দালালচক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান জানান, তিনি এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো পাননি। তবে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘মুকুল ঠাকুরের নামে মানবপাচারের কোনো মামলা আছে কি না, আমার জানা নেই। তবে, খোঁজ নিয়ে বলা যাবে।  –খবরের কাগজ

জনপ্রিয়

রাণীশংকৈলে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে মারধর, থানায় মামলা 

১৫ লাখ না দিলে লিবিয়ায় জিম্মি সাকিলকে মেরে ফেলার হুমকি!

প্রকাশের সময় : ০৪:৩৪:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের টিটুল মিয়ার একমাত্র ছেলে সাকিল মিয়া (২৪) দালালের খপ্পরে বিদেশে গিয়ে এখন সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে জিম্মি।

মঙ্গলবারের (২৬ মার্চ) মধ্যে মুক্তিপণের ১৫ লাখ টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে জিম্মিকারীরা। এ অবস্থায় তার পরিবার এখন দিশেহারা। সামান্য কৃষক পরিবারের এই সন্তানকে মুক্ত করতে এত টাকা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই অজানা শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।

টিটুল মিয়ার পরিবার জানায়, একই গ্রামের মুকুল ঠাকুর নামে একজন দালালের প্রলোভনে জমি বিক্রি করে ধারদেনা করে ১২ লাখ টাকা গুছিয়ে তারা সাকিলকে বিদেশে পাঠান। কিন্তু দুই মাস না যেতেই এখন তাদের কাছে আরও ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে। ইমোতে সাকিলকে নির্যাতনের কল রেকর্ড শুনিয়ে বলা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই টাকা দেওয়ার জন্য।

সাকিলের বড় বোন বৃষ্টি আক্তার বলেন, ‘তারা এক ভাই, এক বোন। তার বিয়ে হয়ে গেছে আগেই। একমাত্র ভাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য তার বাবা একই গ্রামের মুকুল ঠাকুরের হাতে ১২ লাখ টাকা তুলে দেন।’

তিনি জানান, গত ৪ জানুয়ারি প্রথমে সাকিলকে সড়কপথে ভারতে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে বিমানে দুবাই হয়ে ১৪ জানুয়ারি লিবিয়ায় নিয়ে যায়। এরপর লিবিয়ায় একটি ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল বলে জানানো হয়। তখন কয়েকদিন স্বাভাবিক কথাবার্তাও হয়েছে তাদের সঙ্গে।

কিন্তু গত ১২ দিন আগে তার বাবার মোবাইল ফোনের ইমোতে একটি কল আসে। তখন ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে তার ভাই হাউমাউ করে বলে, তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে রেখেছে।

সাকিল আর্তনাদ করে বলেন, ‘আব্বা আরও ১৫ লাখ টাকা দিতেই হবে, নইলে ওরা আমাকে মাইরা ফেলবে!’

তিনি জানান, সাকিলকে নির্যাতনের সময় ইমোতে কল দিয়ে শোনানো হচ্ছে বাড়ির লোকদের। ওরা তাকে খাবারও দেয় না ঠিকমতো।

বৃষ্টি বলেন, ‘নির্যাতনকারীরা বাংলা ভাষাতেই কথা বলেছেন। এখন তারা মুক্তিপণ হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দাবি করছে।

সাকিলের বাবা টিটুল মিয়া বলেন, ‘আমি এত টাকা কোথায় পাব! শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ১২ লাখ টাকা জোগাড় করেছি। সেই টাকা আগেই মুকুল ঠাকুরের হাতে তুলে দিছি। এখন আমি কী করব?

এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। এখন তাকে উদ্ধারের জন্য পরিবার যদি কোনো সহযোগিতা চায়, তাহলে সহযোগিতা করা হবে। ঢাকায় দূতাবাসে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হবে। তিনি বলেন, ওই পরিবার যদি অভিযোগ দেয়, তাহলে দালালচক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান জানান, তিনি এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো পাননি। তবে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘মুকুল ঠাকুরের নামে মানবপাচারের কোনো মামলা আছে কি না, আমার জানা নেই। তবে, খোঁজ নিয়ে বলা যাবে।  –খবরের কাগজ