
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, নগদে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক বসানো হয়েছে। ডাক বিভাগের নাম করে কিছু ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানটিকে নিজেদের মতো করে পরিচালনা করে আসছিলেন, তাই জনস্বার্থে সরকার এটি অধিগ্রহণ করেছে। নগদ এখন সম্পূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান। ডাক বিভাগের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক এটি পরিচালনা করবে। আগের সব ধরনের গ্রাহক সুবিধা বহাল থাকবে, তাই গ্রাহকদের বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং এখন নগদ আরও স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, ‘যেহেতু নগদ নিয়ে জনস্বার্থ রয়েছে, এর মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন আছে, আইনগত সমস্যা রয়েছে এবং বছরের পর বছর আইনের সমস্যা নিয়েই চলছে; তাই এটিকে সরকার অধিগ্রহণ করেছে। একটি প্রতিষ্ঠান এভাবে চলতে পারে না, যেখানে সাধারণ গ্রাহকের অনেক টাকা আছে। জনগণের আমানত যাতে সমস্যা না হয় তাই আমরা হস্তক্ষেপ করলাম। এটিকে ডাক বিভাগের পক্ষে আমরা নিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রম আগে যেমন ছিল সেভাবেই থাকবে, কোনো পরিবর্তন হবে না বরং আরও বৃহত্তর পরিসরে আরও বড় আকারে আসবে। বিকাশের মতো সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান হবে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হবে, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।’
বর্তমানে এমএফএসে ৫ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি ট্রানজেকশন হয়। সেই হিসাবে মাসিক লেনদেন দেড় লাখ কোটি টাকা এবং বছরে ১৮ লাখ কোটি টাকা। আমরা মনে করি সামনে এটি আরও ১০গুণ বাড়বে। প্রতিযোগিতা হলে সেবা বাড়বে খরচ কমবে।
গভর্নর বলেন, ‘অনলাইন ট্রানজেকশনকে আমরা এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যাতে টাকা ক্যাশ আউট করা না লাগে। আমরা ক্যাশআউট সিস্টেমকে মিউজিয়ামে পাঠাতে চাই। টাকা একবার ঢুকবে এবং সেখান থেকেই সবাই খরচ করবে; তাহলে ক্যাশ আউটের অপশন আসবে না এবং খরচ কমবে।’
তিনি বলেন, ‘বেআইনিভাবে ইলেকট্রনিক মানি সৃষ্টি এবং নানা ধরনের যেসব প্র্যাকটিস ছিল তা সঙ্গত ছিলনা। তবে নগদই একমাত্র প্রতিষ্ঠান নয় যেখানে অনিয়ম হয়েছে; এরকম আরও অনেক প্রতিষ্ঠানেই অনিয়ম হয়েছে। আমরা পেছনে তাকাতে চাই না, আমরা চাই সামনের দিকে ভালো কিছু করতে।’
নগদ থেকে অর্থপাচার হয়েছে, বলা হচ্ছে ৭০০ কোটি টাকার গরমিল রয়েছে; এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন অডিট করে দেখব কতটুকু অনিয়ম হয়েছে। অর্থ পাচার হয়েছে কি না, লাভ-লোকসানের পরিস্থিতি কী। এরপর পরবর্তী বোর্ড অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা এসব অনিয়ম দুর্নীতিতে সহায়তা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ‘অনেকেই চাকরির ভয়ে অনেক কিছু করেছেন, তারা নির্দেশিত হয়েছিল। আমরা যদি তাদের জেলে ভরে দেই তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে না। তাই আমরা এটি নিশ্চিত করতে চাই যে যাতে কেউ নির্দেশিত হয়ে অনিয়ম করতে বাধ্য না হন। আমরা সামনের দিকে যেতে চাই পেছনে খুব একটা তাকাতে চাই না। ’
এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ‘নগদের ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত থাকবে। আমরা এটি রিভিউ করব। তখন যদি শর্ত পূরণ করে আসতে পারে তখন দেখা যাবে।’
বিভিন্ন ব্যাংকের অনিয়ম দুর্নীতি এবং বোর্ড নিয়ে অস্থিরতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং কমিশন হচ্ছে তারা অডিট করবে ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হবে। লুট হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। সেক্ষেত্রে বিদেশে যেগুলো পাচার করা হয়েছে এবং দেশে তাদের যে সমস্ত সম্পদ রয়েছে সেগুলো উদ্ধার করে দায় সমন্বয় করার চেষ্টা করা হবে।’
তিনি বলেন, অনেকে আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে মাথায় বন্দুক ধরে মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। সেক্ষেত্রে আইন মেনে আমরা পদক্ষেপ নেব। এস আলমের শেয়ারগুলো বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং সেগুলো বিক্রি করে ব্যাংকের দায় সমন্বয় করা হবে। যারা আগে মালিক ছিল তারা যদি শেয়ার নিয়ে আসতে পারে অথবা অন্য যে কেউ পর্যাপ্ত শেয়ার নিয়ে এলে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেব। তবে যে সমস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অনিয়ম দুর্নীতি এবং অর্থ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখব বলে তিনি জানান।
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা থেকে নতুন ঋণ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের অর্থের চাহিদা রয়েছে তাই আমরা আইএমএফ, এডিবি এবং বিশ্ব ব্যাংকের কাছে বিদ্যমান ঋণ কর্মসূচিগুলোর আওতা বাড়ানোর আবেদন করব। আমরা আইএমএফের কাছে বলব, পাকিস্তানকে ৭ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে; আমাদের প্যাকেজটিও যাতে ৭ বিলিয়ন করা হয়।’
ঢাকা ব্যুরো।। 




































