
ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার হযরতপুর থেকে কোন্ডা ইউনিয়ন পর্যন্ত উপজেলার বারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও মহল্লায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ব্যাটারি চার্জিং গ্যারেজ । আইনের তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র গড়ে ওঠা এই ব্যাটারি চার্জিং গ্যারেজ গুলো থেকে গ্যারেজ মালিকরা বছরে আয় করছে কোটি কোটি টাকা । বিদ্যুৎ বিভাগ ও প্রশাসনের লোকদের সাথে আঁতাত করে গড়ে ওঠা এই অবৈধ বেটারি চার্জিং গ্যারেজ গুলোর ব্যবসা চলছে রমরমা । শত শত ব্যাটারি চালিত রিক্সা গুলো এলাকার বিভিন্ন গ্যারেজে চার্জ দিয়ে থাকেন । অনেকে আবার নিজের বাড়ির আবাসিক লাইন থেকে তার দিয়ে গ্যারেজ বানিয়ে সেখানে করছে ব্যাটারি চার্জিং এর রমরমা ব্যবসা ।
উপজেলার হযরতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, কলাতিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজার এলাকায়, তারানগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা সহ উপজেলার পশ্চিমের ইউনিয়ন হযরতপুর থেকে শুরু করে পূর্বের ইউনিয়ন কোন্ডা পর্যন্ত সরেজমিনের দেখা গেছে এলাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে, বাজারে এবং বাসা বাড়িতে গড়ে উঠেছে এই ধরনের অবৈধ ব্যাটারি চার্জিং গ্যারেজ ।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও মহল্লার বসবাসকারী সাধারণ মানুষ এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এই ধরনের ব্যাটারি চার্জিং গ্যারেজের কারণে এলাকায় তারা ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না। অনেক সময় এই ধরনের অবৈধ গ্যারেজে থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটছে এই এলাকাগুলোতে । গ্যারেজ গুলোর মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় এবং স্থানীয়ভাবে রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না । এদিকে অনেক গ্যারেজের মালিক দম্ভ করে বলেছেন, তারা প্রশাসন ও বিদ্যুৎ অফিসের সাথে যোগাযোগ করি এই গ্যারেজগুলো পরিচালনা করছেন ।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিদ্যুতের এক কর্মকর্তা বলেন , অনেকেই বিদ্যুৎ অফিস থেকে আবাসিক মিটার নিয়ে এই ধরনের ব্যবসা করছে বলে তারা জানতে পেরেছেন । ব্যাটারি চার্জিং করে ভাড়া দেওয়াটা এই আইনে বৈধ নয় । ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালক আব্দুল করিম বলেন, একটা রিক্সা ব্যাটারি চার্জ দিতে গ্যারেজে দিতে হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা । এভাবে গ্যারেজ গুলোতে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৫০ থেকে ১০০ টি করে ব্যাটারি চালিত রিক্সার ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হয় ।
রিক্সা চালকরা জানিয়েছেন এই উপজেলায় অন্ততপক্ষে পাঁচ শতাধিক ছোট বড় গ্যারেজ রয়েছে । প্রতিটি গ্যারেজিং অনেকে চার্জিং এর পাশাপাশি রিক্সা চালকদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন । আগানগরের রিক্সা চালক আব্দুর রহিম মিয়া বলেন ,এই এলাকায় অন্ততপক্ষে ৫০ টির মত গ্যারেজ রয়েছে । এই গ্যারেজ গুলোতে রিক্সার ব্যাটারি চার্জিং ছাড়াও ক্যারাম জুয়া সহ বিভিন্ন অপকর্ম করছে প্রশাসনের ছাত্র ছায়ায় । যারা এর প্রতিবাদ করেন তাদের উপর নেমে আসে সন্ত্রাসী হামলা।
এলাকায় প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে জানা যায়, হযরতপুর ইউনিয়নে ত্রিশটি , কলাতিয়া ইউনিয়নে ৩৮ টি, তারানগর ইউনিয়নে ৪২ টি, শাকতা ইউনিয়নে ২৬ টি , কালিন্দী ইউনিয়নে ২৩ টি , বাসতা ইউনিয়নে ২৬ টি , রহিতপুর ইউনিয়নে ৩৫টি,, জিনজিরা ইউনিয়নে ২৬ টি, আগানগর ইউনিয়নে ২৮ টি, শুভাঢ্যা ইউনিয়নে ৪৫টি , তেঘরিয়া ইউনিয়নে ১৭ টি ও কোন্ডা ইউনিয়নে ৩৫টি ছোট বড় গ্যারেজে এই ধরনের ব্যাটারি চার্জিং এর ব্যবস্থা রয়েছে ।
এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করেছেন, এই সমস্ত গ্যারেজগুলোতে ব্যাটারি চার্জিং দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত বসে তার জুয়া ও কেরাম জুয়া নামে পরিচিত জুয়া খেলা । এতে করে রাতভর সাধারণ রিকশাচালকসহ এলাকার বিভিন্ন বকাটেরা এই জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করে । এলাকাবাসী ও এলাকার সাধারণ নাগরিকরা এই এলাকার সকল গ্যারেজ গুলো তদন্ত করে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন সহ দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন।
দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা ব্যুরো 







































