শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগ

  • ঢাকা ব্যুরো।।
  • প্রকাশের সময় : ০২:২৯:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪
  • ১০৫

ছবি-সংগৃহীত

সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষমতার গরম চেয়ারে বসে টাকা কামানোই ছিল তাঁর নেশা। এই নেশায় মত্ত হয়ে তিনি ঘুষ, পদোন্নতি-বদলি ও তদবির বাণিজ্য, বিনিময় মূল্যে অবৈধ সুবিধা, স্ত্রীর আয়কর ফাইলে টাকা ট্রান্সফার, দুই ছেলের নামে প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয়, প্রতিবন্ধী সাজিয়ে ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোসহ এমন কোনো কাজ নেই যা তিনি করেননি। এমনকি ক্ষমতায় আসীন হয়ে তিনি দপ্তরের অধস্তনদের দিয়ে নিজের লেখা বই কিনতেও বাধ্য করেছিলেন। নজিরবিহীন কেলেঙ্কারি নজিবুরেরসূত্র জানায়, নজিবুরের ক্ষমতার মূল উৎস ছিলেন গণ-অভ্যুত্থানে পদচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত সৈনিক ছিলেন এই নজিবুর। বিশ্বস্ততার প্রতিদান হিসেবে পেয়েছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যানের পদ। এরপর তাঁকে সরকারের মুখ্য সচিব করা হয়।

এখানেই পুরস্কারের শেষ নয়। মুখ্য সচিব পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর তাঁকে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) চেয়ারম্যান বানানো হয়। অবশ্য পটপরিবর্তনের পর আড়ালে থাকলেও রবিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।
এনবিআর চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই নিজেকে অঘোষিত রাজা মনে করতেন নজিবুর।বিসিএস আয়কর ও কাস্টমস অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের রাখতেন তোপের মধ্যে। এই দুই ক্যাডারের সবচেয়ে অযোগ্য লোকেরা ছিল তাঁর প্রিয়ভাজন। এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, যোগ্য কর্মকর্তাদের কয়েকজনের সঙ্গে শুরু থেকেই ঝামেলা শুরু হয়েছিল নজিবুরের। এর মূল কারণ ছিল তাঁর অন্যায্য সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করা। তাঁর মতের বিরুদ্ধে কিছু শুনতে পছন্দ করতেন না তিনি।

কর্মকর্তারা বলেন, নজিবুরের সময়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) মহাপরিচালক ছিলেন বেলাল উদ্দিন। এই কর্মকর্তা ছিলেন নজিবুরের সব অনৈতিক কাজের পরামর্শদাতা। তাঁর পরামর্শ ও সুপারিশে অনেকের পদোন্নতি ও বদলি হতো। তখন এনবিআর ছিল সৎ কর্মকর্তাদের জন্য জাহান্নাম। তখন টাকার লেনদেন ছাড়া কোনো পদোন্নতি হতো না। এ কারণে তাঁর সময়ে অনেক যোগ্য কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত হন। আর এই বেলাল সব কর্মকর্তার ওপর নজরদারি করতেন, পরে রিপোর্ট করতেন নজিবুরকে।

সূত্র জানায়, নজিবুরের আমলে প্রতিটি কাস্টম হাউস, ভ্যাট কমিশনারেট ও কর অঞ্চলের কমিশনারদের প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকা করে দিতে বাধ্য করা হতো। এ ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মতো দপ্তরগুলোতে নিজের পছন্দসই লোকদের নিয়োগ দিতেন। এতে করে ঠিক থাকত তাঁর পদের অপব্যবহারের রমরমা অবৈধ ব্যবসা।

দেশের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে নজিবুরের বিরুদ্ধে। একটি গ্রুপকে উচ্চ শুল্ক এড়িয়ে গিয়ে ডাম্পিং ট্রাক আমদানির সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তা লরিতে রূপান্তর ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সরকার বঞ্চিত হয়েছে কয়েক শ কোটি টাকার রাজস্ব। পরে নজিবুরের পকেটে গেছে ৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আরো তিনটি গ্রুপকে তিনি অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সুবিধা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এনবিআরের বিভিন্ন অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হতো। সেখানেও ছিল নজিবুরের হানা। টাকার বিনিময়ে বিদেশ সফরে নাম অন্তর্ভুক্তি ও প্রায় প্রতিটি সফরে নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজেও বিদেশ সফর করেছেন।

এতেও সাধ মেটেনি তাঁর। প্রটোকল ব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার নামে একটি বই লেখেন তিনি। সে সময় ৭৫০ টাকা দামের বইটি কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল অধস্তনদের। প্রতিটি কমিশনারেটের কমিশনারকে সরকারি খরচে তিন-চার হাজার কপি বই কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁর সময়েই প্রবর্তন হয় লাল-হলুদ-সবুজ থিউরি। এসিআরের মাধ্যমে কর্মীদের মূল্যায়ন করার নিয়ম থাকলেও তিনি নিজের মতো করে মূল্যায়ন করতেন।

জানা গেছে, তাঁর স্ত্রীর আয়কর ফাইলে তিনি ৬০ কোটি টাকা ট্রান্সফার করেন। এটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট আয়কর কর্মকর্তা আপত্তি জানান। পরে সেই কর্মকর্তাকে তিনি শাস্তিস্বরূপ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। সেই ফাইল নিয়ে এখন এনবিআর কাজ করছে।

অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা ও দেশের মানুষকে তিনি ঠকিয়েছেন রাজস্ব আদায়ের মিথ্যা তথ্য দিয়ে। সরকারকে খুশি করতে একের পর এক গোঁজামিলে ভরা মনগড়া রাজস্ব আদায়ের তথ্য দিয়েছেন। তাঁর তিন অর্থবছরের মেয়াদে ৩৩ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় দেখানো হয়েছে, যা পরে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের (সিজিএ) পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে।

ছেলের নামে সাড়ে তিন কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুই ছেলের নামে বেস্ট হোল্ডিংয়ের ১০ লাখ প্লেসমেন্ট শেয়ার নেন তিনি। এর মধ্যে ফারাবি এন এ রহমান পাঁচ লাখ এবং ফুয়াদ এন এ রহমানের নামে পাঁচ লাখ শেয়ার নেন। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই শেয়ার নেন তিনি। কম্পানিটির মূল্য নির্ধারণে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে এই শেয়ারের কাট অব প্রাইস (প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য মূল্য) নির্ধারণ করা হয় ৩৫ টাকা। এর মানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১০ লাখ শেয়ার কিনতে সাড়ে তিন কোটি টাকা লেগেছে। এর বিনিময়ে এই প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে সহায়তা করেন নজিবুর।

সুস্থ ছেলেকে প্রতিবন্ধী কোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি

সুস্থ ছেলেকে প্রতিবন্ধী দেখিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন নজিবুর রহমান। তাঁকে এ কাজে সহায়তা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের তৎকালীন ডিন ও সদ্য বিএসইসি থেকে পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন রেকর্ড অনুযায়ী নজিবুরের ছেলে ফারাবি এন এ রহমান প্রতিবন্ধী হিসেবে তাঁর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন।  বিভাগটিতে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতেও চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সন্তোষজনক ফলাফল না থাকায় তিনি নিয়োগ পাননি। ফারাবির সহপাঠী ও শিক্ষক সূত্রে জানা গেছে, তিনি কখনো শ্রবণপ্রতিবন্ধী ছিলেন না।

সুত্র: কালের কন্ঠ

জনপ্রিয়

যশোরে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ০২:২৯:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪

সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষমতার গরম চেয়ারে বসে টাকা কামানোই ছিল তাঁর নেশা। এই নেশায় মত্ত হয়ে তিনি ঘুষ, পদোন্নতি-বদলি ও তদবির বাণিজ্য, বিনিময় মূল্যে অবৈধ সুবিধা, স্ত্রীর আয়কর ফাইলে টাকা ট্রান্সফার, দুই ছেলের নামে প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয়, প্রতিবন্ধী সাজিয়ে ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোসহ এমন কোনো কাজ নেই যা তিনি করেননি। এমনকি ক্ষমতায় আসীন হয়ে তিনি দপ্তরের অধস্তনদের দিয়ে নিজের লেখা বই কিনতেও বাধ্য করেছিলেন। নজিরবিহীন কেলেঙ্কারি নজিবুরেরসূত্র জানায়, নজিবুরের ক্ষমতার মূল উৎস ছিলেন গণ-অভ্যুত্থানে পদচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত সৈনিক ছিলেন এই নজিবুর। বিশ্বস্ততার প্রতিদান হিসেবে পেয়েছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যানের পদ। এরপর তাঁকে সরকারের মুখ্য সচিব করা হয়।

এখানেই পুরস্কারের শেষ নয়। মুখ্য সচিব পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর তাঁকে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) চেয়ারম্যান বানানো হয়। অবশ্য পটপরিবর্তনের পর আড়ালে থাকলেও রবিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।
এনবিআর চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই নিজেকে অঘোষিত রাজা মনে করতেন নজিবুর।বিসিএস আয়কর ও কাস্টমস অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের রাখতেন তোপের মধ্যে। এই দুই ক্যাডারের সবচেয়ে অযোগ্য লোকেরা ছিল তাঁর প্রিয়ভাজন। এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, যোগ্য কর্মকর্তাদের কয়েকজনের সঙ্গে শুরু থেকেই ঝামেলা শুরু হয়েছিল নজিবুরের। এর মূল কারণ ছিল তাঁর অন্যায্য সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করা। তাঁর মতের বিরুদ্ধে কিছু শুনতে পছন্দ করতেন না তিনি।

কর্মকর্তারা বলেন, নজিবুরের সময়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) মহাপরিচালক ছিলেন বেলাল উদ্দিন। এই কর্মকর্তা ছিলেন নজিবুরের সব অনৈতিক কাজের পরামর্শদাতা। তাঁর পরামর্শ ও সুপারিশে অনেকের পদোন্নতি ও বদলি হতো। তখন এনবিআর ছিল সৎ কর্মকর্তাদের জন্য জাহান্নাম। তখন টাকার লেনদেন ছাড়া কোনো পদোন্নতি হতো না। এ কারণে তাঁর সময়ে অনেক যোগ্য কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত হন। আর এই বেলাল সব কর্মকর্তার ওপর নজরদারি করতেন, পরে রিপোর্ট করতেন নজিবুরকে।

সূত্র জানায়, নজিবুরের আমলে প্রতিটি কাস্টম হাউস, ভ্যাট কমিশনারেট ও কর অঞ্চলের কমিশনারদের প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকা করে দিতে বাধ্য করা হতো। এ ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মতো দপ্তরগুলোতে নিজের পছন্দসই লোকদের নিয়োগ দিতেন। এতে করে ঠিক থাকত তাঁর পদের অপব্যবহারের রমরমা অবৈধ ব্যবসা।

দেশের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে নজিবুরের বিরুদ্ধে। একটি গ্রুপকে উচ্চ শুল্ক এড়িয়ে গিয়ে ডাম্পিং ট্রাক আমদানির সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তা লরিতে রূপান্তর ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সরকার বঞ্চিত হয়েছে কয়েক শ কোটি টাকার রাজস্ব। পরে নজিবুরের পকেটে গেছে ৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আরো তিনটি গ্রুপকে তিনি অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সুবিধা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এনবিআরের বিভিন্ন অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হতো। সেখানেও ছিল নজিবুরের হানা। টাকার বিনিময়ে বিদেশ সফরে নাম অন্তর্ভুক্তি ও প্রায় প্রতিটি সফরে নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজেও বিদেশ সফর করেছেন।

এতেও সাধ মেটেনি তাঁর। প্রটোকল ব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার নামে একটি বই লেখেন তিনি। সে সময় ৭৫০ টাকা দামের বইটি কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল অধস্তনদের। প্রতিটি কমিশনারেটের কমিশনারকে সরকারি খরচে তিন-চার হাজার কপি বই কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁর সময়েই প্রবর্তন হয় লাল-হলুদ-সবুজ থিউরি। এসিআরের মাধ্যমে কর্মীদের মূল্যায়ন করার নিয়ম থাকলেও তিনি নিজের মতো করে মূল্যায়ন করতেন।

জানা গেছে, তাঁর স্ত্রীর আয়কর ফাইলে তিনি ৬০ কোটি টাকা ট্রান্সফার করেন। এটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট আয়কর কর্মকর্তা আপত্তি জানান। পরে সেই কর্মকর্তাকে তিনি শাস্তিস্বরূপ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। সেই ফাইল নিয়ে এখন এনবিআর কাজ করছে।

অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা ও দেশের মানুষকে তিনি ঠকিয়েছেন রাজস্ব আদায়ের মিথ্যা তথ্য দিয়ে। সরকারকে খুশি করতে একের পর এক গোঁজামিলে ভরা মনগড়া রাজস্ব আদায়ের তথ্য দিয়েছেন। তাঁর তিন অর্থবছরের মেয়াদে ৩৩ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় দেখানো হয়েছে, যা পরে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের (সিজিএ) পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে।

ছেলের নামে সাড়ে তিন কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুই ছেলের নামে বেস্ট হোল্ডিংয়ের ১০ লাখ প্লেসমেন্ট শেয়ার নেন তিনি। এর মধ্যে ফারাবি এন এ রহমান পাঁচ লাখ এবং ফুয়াদ এন এ রহমানের নামে পাঁচ লাখ শেয়ার নেন। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই শেয়ার নেন তিনি। কম্পানিটির মূল্য নির্ধারণে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে এই শেয়ারের কাট অব প্রাইস (প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য মূল্য) নির্ধারণ করা হয় ৩৫ টাকা। এর মানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১০ লাখ শেয়ার কিনতে সাড়ে তিন কোটি টাকা লেগেছে। এর বিনিময়ে এই প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে সহায়তা করেন নজিবুর।

সুস্থ ছেলেকে প্রতিবন্ধী কোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি

সুস্থ ছেলেকে প্রতিবন্ধী দেখিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন নজিবুর রহমান। তাঁকে এ কাজে সহায়তা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের তৎকালীন ডিন ও সদ্য বিএসইসি থেকে পদত্যাগকারী চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন রেকর্ড অনুযায়ী নজিবুরের ছেলে ফারাবি এন এ রহমান প্রতিবন্ধী হিসেবে তাঁর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন।  বিভাগটিতে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতেও চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সন্তোষজনক ফলাফল না থাকায় তিনি নিয়োগ পাননি। ফারাবির সহপাঠী ও শিক্ষক সূত্রে জানা গেছে, তিনি কখনো শ্রবণপ্রতিবন্ধী ছিলেন না।

সুত্র: কালের কন্ঠ